Advertisement
E-Paper

শাড়ি বেচে স্টেশনের ‘সংসার’ সামলান দুর্গা

গত ২৫ বছর ধরে বর্ধমান স্টেশনে থাকা শিশু, কিশোর, বয়স্কদের দেখভাল করছেন ধোকরা শহীদ এলাকার বাসিন্দা দুর্গাদেবী। সবাই তাঁকে ‘মা’ বলেই ডাকেন। সন্তানদের দেখভালের জন্যে তিনি ৬৫ বছর বয়সেও সপ্তাহে দু’দিন ট্রেনে করে শাড়ি ফেরি করেন। এ ছাড়াও অন্য দিন হুগলির বৈঁচি, পান্ডুয়া থেকে বর্ধমান শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষিকাদের শাড়ি বিক্রি করেন।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০২:৪১
স্টেশনে দুর্গাদেবী। নিজস্ব চিত্র

স্টেশনে দুর্গাদেবী। নিজস্ব চিত্র

তিনি প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াতেই ‘মা- মা’ বলে ছুটে আসে সুলতান, দীপকেরা। ছোট ছোট হাতের ভরসায় সিঁড়ি দিয়ে নেমে তাদের জড়িয়ে ধরেন বৃদ্ধা, দুর্গা ভট্টাচার্য। তাদের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলেন, ‘‘প্ল্যাটফর্মে বেড়ে ওঠা এই ছেলেদের কাছেই আমার শান্তি। এঁদের সবাইকে হয়তো মানুষ করা যাবে না। কিন্তু বাঁচিয়ে রাখতে হবে, যদি কেউ মানুষ হয়ে ওঠে।’’

গত ২৫ বছর ধরে বর্ধমান স্টেশনে থাকা শিশু, কিশোর, বয়স্কদের দেখভাল করছেন ধোকরা শহীদ এলাকার বাসিন্দা দুর্গাদেবী। সবাই তাঁকে ‘মা’ বলেই ডাকেন। সন্তানদের দেখভালের জন্যে তিনি ৬৫ বছর বয়সেও সপ্তাহে দু’দিন ট্রেনে করে শাড়ি ফেরি করেন। এ ছাড়াও অন্য দিন হুগলির বৈঁচি, পান্ডুয়া থেকে বর্ধমান শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষিকাদের শাড়ি বিক্রি করেন। সেই উপার্জনের টাকায় খাবার, ওষুধ, জামাকাপড় কিনে দেন স্টেশনে থাকা মানুষজনকে। বিভিন্ন বস্তি এলাকার দুঃস্থ পড়ুয়ারাও পড়া বা বিয়ের খরচের জন্য তাঁর সাহায্য চাইলে নির্দ্বিধায় হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। দুর্গাদেবী জানান, কয়েক বছর আগেও কলকাতার সাউথ পয়েন্ট, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে পুরনো স্কুলের পোশাক জোগাড় করে বর্ধমানের কাঞ্চননগর,রথতলা এলাকার দুঃস্থ ছাত্রদের দিতেন। এখন অবশ্য এতটা ছুটতে পারেন না। দুর্গাদেবীর কথায়, “আগের মতো আর ছুটতে পারি না। তবে সন্তানদের জন্যে এখনও ট্রেনে বা স্কুলের সামনে শাড়ি বিক্রি করি। কলকাতার মহাজনরা আমার ছেলেদের জন্য পুরনো পোশাক দেন।’’

স্টেশন চত্বরে গেলেই শোনা যায়, কী ভাবে দুর্গাদেবী আগলে রেখেছেন সন্তানদের। তাঁরাই জানান, কয়েকদিন আগে, সুলতান বলে এক কিশোরের চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে দু’সপ্তাহ ধরে শুশ্রুষা করে সুস্থ করে তোলেন তিনি। প্ল্যাটফর্মে দু’জন মানসিক প্রতিবন্ধী গোটা শরীরে ঘা নিয়ে পড়েছিলেন। নিজের হাতে ওষুধ লাগিয়ে তাঁদের সুস্থ করে তোলেন তিনি। দুর্গাদেবী জানান, তাঁর মা অমিয়বালাদেবীকে দেখেই মানুষের উপকার করা শুরু করেন তিনি। তিনি বলেন, “একদিন স্টেশনে ঘুরতে গিয়েছি। হঠাৎ অসুস্থ এক জন আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। আমি তাঁকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। দেখাশোনা করি। পরে এক গাছতলায় আশ্রয় নেন তিনি। সেখানে গিয়েও তাঁর সেবা করেছি।’’ সেই সময় স্টেশনে থাকা শিশুদের অনেকে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। তাদের দেখভাল করতে করতেই ‘মা’ হয়ে ওঠেন তিনি।

দুর্গাদেবীর স্বামী তপন ভট্টাচার্য রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্প দফতরের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। তাঁর কথায়, “গত ৩৬ বছর ধরে দুর্গা মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। আমি বা আমার ছেলে-মেয়েরা কোনও দিন বাধা দিইনি।’’

জেলা শিশুসুরক্ষা আধিকারিক সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, “উনি সম্ভ্রান্ত পরিবারের হয়েও স্টেশনের শিশুদের জন্যে ফেরি করে উপার্জন করেন। এটাই অনেক বড় কথা।’’

International Women's Day Saree
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy