ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়েছিল তাঁর। শাশুড়ির জেদে বই-খাতা সঙ্গ ছাড়েনি। স্কুলে শিক্ষকতাও শুরু করেন। ৭৫ বছর বয়সে পৌঁছেও ছেলেমেয়েদের জীবন গড়াই তাঁর ব্রত।
ভোরে উঠে বাড়ি-ঘর পরিষ্কার করে, রাস্তার উল্টো দিক থেকে পানীয় জল এনে, ৫০ জনের খাবার জোগাড় করে রাখেন তিনি। সকাল হতেই হাজির হয়ে যায় তাঁর ‘ছেলেমেয়েরা’। স্কুল যাওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর কাছেই পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া, আবদার চলে আদিবাসী পাড়া, জেলা পাড়ার পাঁচ থেকে পনেরো বছর বয়সীদের। স্কুল থেকে ফিরেও বাড়ি নয়, ‘মামণি’র কাছেই আসে তারা। কোনও দিন আঁকা, গান কোনও দিন আবার ক্যারাটে, খো-খো খেলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাদের। ১৬ বছর ধরে এ ভাবেই চলছে অণিমা তালুকদারের ‘নগেন সুধা স্মৃতি শিক্ষা আশ্রম’।
কালনার কৃষ্ণদেবপুর এলাকায় এসটিকেকে রোড ঘেঁষা ১৪ কাঠা জমির উপর একতলা বাড়ি অণিমাদেবীর। ভেতরের তিনটে ঘরে ছেলেমেয়েদের রাজত্ব। অণিমাদেবীর সঙ্গে সেখানে পড়ান দীপ্তি মজুমদার, চন্দ্রশেখর শিকদার। ক্যারাটে শেখান দেবজ্যোতি সেন এবং খো-খোর দায়িত্বে রয়েছেন রাজীব চন্দ্র। সবাই কাজ করেন বিনা পারিশ্রমিকে। অণিমাদেবী জানান, এঁদের পাশে না পেলে এ কাজ চালিয়ে যাওয়া মুশকিল ছিল। অণিমাদেবী বলেন, ‘‘বরাবরই ইচ্ছে ছিল। অবসরের পরে পুরোদমে কাজ শুরু করি। শুধু শিক্ষা দেওয়া নয়, গরিব ছেলেমেয়েগুলোর অন্য গুণও টেনে বার করার চেষ্টা করি আমরা। যত দিন বাঁচব ওদের জন্য কাজ করব।’’ ২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে নবম স্থানাধিকারী কালনার সুজিত মাতব্বরও এই আশ্রমেরই ছাত্র ছিল একসময়।