Advertisement
১১ মে ২০২৪
অন্তত তিন মাস ক্রিকেট ফিরতে দেখছেন না হেড কোচ  
Cricket

নিউজ়িল্যান্ডে ছিলাম আমরা, কানের পাশ দিয়ে বুলেট গিয়েছে

ক্রিকেটারদের ছন্দ ফেরাতে বড় ভূমিকা নিতে পারে বেঙ্গালুরুর জাতীয় অ্যাকাডেমি। দু’থেকে তিন সপ্তাহের শিবির হওয়া জরুরি। যদিও ক্রিকেট এখন ভাবনার তালিকায় সবার শেষে।

বার্তা: ক্রিকেট এখন অগ্রাধিকার তালিকার শেষে, বলছেন শাস্ত্রী। ফাইল চিত্র

বার্তা: ক্রিকেট এখন অগ্রাধিকার তালিকার শেষে, বলছেন শাস্ত্রী। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৪৯
Share: Save:

চিন থেকে যখন করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করেছে, তখন তাঁদের নিউজ়িল্যান্ড সফর চলছে। জোর রক্ষা পেয়েছে গোটা ভারতীয় দল, মনে হচ্ছে তাঁর। আরও মনে হচ্ছে, করোনাভাইরাসের থাবায় অন্তত আগামী তিন মাস ক্রিকেট ফেরার সম্ভাবনা নেই। ক্রিকেটারদের ছন্দ ফেরাতে বড় ভূমিকা নিতে পারে বেঙ্গালুরুর জাতীয় অ্যাকাডেমি। দু’থেকে তিন সপ্তাহের শিবির হওয়া জরুরি। যদিও ক্রিকেট এখন ভাবনার তালিকায় সবার শেষে। একমাত্র চিন্তা করোনাকে কী ভাবে হারাবে মানবজাতি। লকডাউনের মধ্যে মুম্বই থেকে ফোনে আনন্দবাজারের সঙ্গে দীর্ঘ, একান্ত আলাপচারিতায় কোহালিদের হেডস্যর রবি শাস্ত্রী। আজ শেষ পর্ব।

প্র: বাড়িতে বসে ট্রেনিং করা সম্ভব। নিজেকে ফিট রাখা সম্ভব। কিন্তু স্কিল ধরে রাখব কী ভাবে? দীর্ঘ লকডাউনে নৈপুণ্যে কি প্রভাব পড়বে না?

শাস্ত্রী: নেতিবাচক প্রভাব যেটা পড়বে, তা তো সব খেলার উপরেই পড়বে। শুধু ক্রিকেট কেন? টেনিস থেকে বাস্কেটবল, ফুটবল থেকে ক্রিকেট— সব খেলাতেই প্রভাব পড়বে। কিন্তু যত ক্ষণ না লকডাউন উঠছে, কেউ বুঝতেও পারবে না কোথায় কী খামতি হচ্ছে। মাঠে ফিরলে বোঝা যেতে পারে। তবে আমি একটা ইতিবাচক দিকও ভাবতে চাই। নিংড়ে নেওয়া সূচির মধ্যে অনেক খেলোয়াড় টানা আট-দশ বছর ধরে ছুটে চলেছে। তার কাছে এই বিরতিটা আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে। সে ব্যাটারি রিচার্জ করে দারুণ তরতাজা হয়েও তো ফিরতে পারে। আগে থেকে কেন ধরে নেব, নেগেটিভই ঘটবে?

প্র: কিন্তু আপনি নিজে ক্রিকেট খেলেছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে ক্রিকেটের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের উপর প্রভাব পড়া কি সত্যিই এড়ানো সম্ভব?

শাস্ত্রী: নির্ভর করবে কত দিন বাড়িতে থাকতে হচ্ছে, তার উপরে। যদি সময়টা ছ’মাসের উপরে হয়, তা হলে অবশ্যই প্রভাব পড়তে পারে। সেরা অ্যাথলিটদেরও সর্বোচ্চ শিখরে থাকতে খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। সেই কারণেই তো খেলোয়াড়েরা হাড়ভাঙা প্র্যাক্টিস করে যায়। দীর্ঘ সময় মাঠ থেকে দূরে থাকতে হলে, প্রভাব যে পড়বে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। পায়ের তলায় ফের জমি খুঁজে পেতে সব খেলোয়াড়েরই কিছুটা সময় লাগবে। সেই কারণে সকলেরই প্রার্থনা হবে একটাই— যেন খুব বেশি দিন লকডাউনে থাকতে না হয়। তবে এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে, আমরা খুবই ভাগ্যবান! খুবই ভাগ্যবান!

প্র:কেন ভাগ্যবান মনে হচ্ছে?

শাস্ত্রী: বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছি আমরা। কানের পাশ দিয়ে বুলেট চলে গিয়েছে আমাদের। যে দিন আমরা নিউজ়িল্যান্ড সফরের জন্য বেরিয়েছিলাম, ঠিক সে দিনই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল চিনে। আমরা বেরিয়েছিলাম ২০ জানুয়ারি। আর ২১ জানুয়ারি খবর জানাজানি হয়, চিনে এ রকম একটা ভাইরাসের আক্রমণ চলছে। তার মানে, যে সময়টায় করোনাভাইরাস বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছিল, সেই সময়ে আমরা সবাই ‘ফ্লাই’ করছিলাম। ফ্লাইটে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছিলাম। মার্চের শুরু পর্যন্ত আমরা নিউজ়িল্যান্ডে ছিলাম (কোহালিদের সফর শেষ হয় ৩ মার্চ। ক্রাইস্টচার্চে শেষ টেস্ট শুরু হয়েছিল ২৯ ফেব্রুয়ারি)। তখন সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে দিয়েছিল কিন্তু কেউ বুঝতে পারেনি, এ রকম অতিমারি আকারে দেখা দিতে পারে। সকলে যে সুস্থ ভাবে ফিরে আসতে পেরেছি, কেউ যে সংক্রমণ নিয়ে ফিরিনি, তার জন্য ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিতে হবে।

আরও পড়ুন: দ্রুতই বুঝিয়ে দিল, বিশ্বকে শাসন করতে এসেছে বিস্ময় বালক

প্র:নিউজ়িল্যান্ডে থাকতে থাকতে কি করোনা নিয়ে আলোচনা হত?

শাস্ত্রী: সফরের শেষ দিকে কথাবার্তা শুরু হয়েছিল। ফেব্রুয়ারির শেষ ও মার্চের শুরু থেকে সারা বিশ্বে মানুষ এই মারণ ভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে সতর্ক হতে শুরু করে। আমাদের চিন্তা হচ্ছিল কারণ সিঙ্গাপুর হয়ে গিয়েছিলাম, তাই সিঙ্গাপুর হয়েই ফিরতে হত। আর তখন ওই জায়গাগুলোতেই বেশি করে সতর্কতা জারি হয়েছিল। বিমানবন্দরগুলোতে রেড অ্যালার্ট শুরু হয়। ইউরোপে করোনাভাইরাস তার থাবা বসাতে শুরু করে দিয়েছিল। ইটালি, স্পেনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল। দ্বিগুণ, তিন গুণ হারে বাড়ছিল আক্রান্তের সংখ্যা। নিউজ়িল্যান্ড সফরের শেষ দশ দিন আমাদের মনের মধ্যেও করোনা নিয়ে চিন্তার চোরাস্রোত চলছিল।

প্র: দেশে ফিরে কী দেখলেন?

শাস্ত্রী: দিনটা ছিল ৫ মার্চ। আমরা ফিরলাম নিউজ়িল্যান্ড থেকে। প্রথমেই আবিষ্কার করলাম, বিমানবন্দরে পরীক্ষা করা শুরু হয়ে গিয়েছে। শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। করোনা নিয়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিশেষ ফর্ম ভরাও শুরু হয়। কোন দেশে থেকে আসছ, ফর্মে লিখে দিতে হচ্ছিল।

প্র:ব্যাটিংয়ে যেমন বলা হয় সময়জ্ঞানই আসল ব্যাপার। ভারতীয় দলের ফেরাটাও ঠিক সময়ে ছিল?

শাস্ত্রী: পারফেক্ট টাইমিং। কোনও ভাবে এক সপ্তাহ এদিক-ওদিক হয়ে গেলে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যেতেই পারত।

আরও পড়ুন: ধোনির শূন্যস্থান পূরণ করা কঠিন, বলছেন রাহুল

প্র:পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে খেলোয়াড়দের কত দিন সময় লাগতে পারে মাঠে নেমে ম্যাচ খেলার মতো অবস্থায় আসার জন্য?

শাস্ত্রী: আমার তো মনে হয়, অন্তত দু’মাস সময় দিতে হবে সকলকে পূর্ণ মাত্রায় তৈরি হওয়ার জন্য। এটা তো হতে পারে না যে, বলে দিলাম কাল থেকে আবার ক্রিকেট শুরু হচ্ছে। চলো সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ো।

প্র:লকডাউন থেকে বেরোনোর পরে কি একটা শিবির হওয়াও জরুরি?

শাস্ত্রী: অবশ্যই। মাঠে ম্যাচ খেলতে নেমে পড়ার আগে সকলে আবার একসঙ্গে কিছুটা সময় তো কাটাতেই হবে। পুরনো ছন্দ ফেরাতে দু’তিন সপ্তাহের শিবির করতে হতে পারে। দেখতে হবে কোন ফর্ম্যাটের ক্রিকেট দিয়ে মাঠে ফিরছি। টেস্ট, ওয়ান ডে না টি-টোয়েন্টি। সেই অনুযায়ী ক্যাম্প করতে হবে। আমার মনে হচ্ছে, ক্রিকেটে ফেরার ক্ষেত্রে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি খুব বড় ভূমিকা নিতে চলেছে।

প্র:কেন এটা মনে হচ্ছে?

শাস্ত্রী: এখন তো মাঠে ফেরা নিয়ে কোনও আলোচনারও প্রশ্ন নেই। কিন্তু যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে, যখন সরকার থেকে জানানো হবে, এ বার আগের মতো দৈনন্দিন জীবনে ফেরা যেতে পারে, তখন সবার আগে পুরনো ছন্দ ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে। আর তার জন্য বেঙ্গালুরুর জাতীয় অ্যাকাডেমি খুব গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হতে পারে। আমাদের পুরো টিমকেও হয়তো ওখানেই প্রথমে একত্রিত হয়ে কাজ শুরু করতে হবে।

প্র:লকডাউনে আপনি কী ভাবে সময় কাটাচ্ছেন?

শাস্ত্রী: প্রচুর পড়ছি। আমি পড়তে ভালবাসি। নেটফ্লিক্সে মুভি দেখছি। পাশাপাশি, খতিয়েও দেখছি গত বারো-চোদ্দো মাস আমরা যে ক্রিকেট খেলেছি, কোথায় কী ভুল করেছি। সেই ভুলগুলোকে কী করে শুধরে নেওয়া যায়। আমার মনে হয়, তিন মাসের আগে কোনও ক্রিকেট আমরা খেলব না। তাই তাড়াহুড়ো করে খুব এগিয়ে ভেবে লাভ নেই।

প্র:অস্ট্রেলিয়ায় দু’টো বড় ইভেন্ট আছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর বছরের শেষ দিকে ভারতীয় দলের পূর্ণাঙ্গ সফর। আপনার কী মনে হয়, দু’টো ইভেন্ট হবে?

শাস্ত্রী: ক্রিকেট এখন সকলের ভাবনাচিন্তার তালিকায় একেবারে শেষে। ওই যে বললাম, তিন মাসের আগে ক্রিকেট ফেরার কোনও সম্ভাবনা দেখছি না, ওটাই আবার বলব। যত ক্ষণ না গোটা পৃথিবীতে স্বাভাবিকত্ব ফিরছে, তত ক্ষণ ক্রিকেট ফেরারও সম্ভাবনা নেই।

প্র: যখন আবার সব স্বাভাবিক হবে, করোনার আতঙ্ক দূর হবে, ফিরবে ক্রিকেট— বিরাটদের হেড স্যর কি আত্মবিশ্বাসী এক নম্বর দল হিসেবে স্বমহিমায় ফিরবে ভারতীয় দল?

শাস্ত্রী: এখনই কোনও জল্পনায় যাওয়াটা ঠিক হবে না। প্রথমত দেখতে হবে, কত দীর্ঘ হয় এই লকডাউন। কত দিন মাঠের বাইরে থাকতে হয়। তার পরে দেখতে হবে, খেলোয়াড়দের উপরে কতটা প্রভাব পড়ল। যাদের চোট-আঘাত ছিল, তারা কী অবস্থায় রয়েছে। শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রত্যেকে কেমন জায়গায় আছে। শুধু ক্রিকেট নয়, বিশ্বের যে কোনও খেলার যে কোনও দলের উপরেই প্রভাব পড়বে। সকলেরই কিছুটা সময় লাগবে পুরনো ছন্দে ফেরার জন্য।

(একান্ত সাক্ষাৎকারে রবি শাস্ত্রী)

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Coronavirus India Ravi Shastri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE