Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
সারা দিন ধরে চলল অধিনায়কত্ব-নাটক

বাংলার স্বার্থে প্রথম ম্যাচেই শুধু নেতৃত্বে রাজি মনোজ

দেওধর ট্রফি খেলে শনিবার রাতে কলকাতায় ফিরেছেন মনোজ তিওয়ারি। গত কাল রাতেই সিএবি সচিব অভিষেক ডালমিয়াকে তিনি বার্তা পাঠিয়ে দেন যে, আর বাংলার অধিনায়কত্ব করতে চান না।

মেজাজ: বাংলার অনুশীলনে মনোজ-অরুণ লাল। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মেজাজ: বাংলার অনুশীলনে মনোজ-অরুণ লাল। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০২
Share: Save:

রঞ্জি ট্রফি খেলতে বেরোনোর কয়েক ঘণ্টা আগেও চূড়ান্ত ডামাডোল বঙ্গ ক্রিকেটকে ঘিরে। সারা দিন ধরে ধোঁয়াশার পরে রবিবার রাত পর্যন্তও কেউ জানে না, এ মরসুমে দলের অধিনায়ক কে!

দেওধর ট্রফি খেলে শনিবার রাতে কলকাতায় ফিরেছেন মনোজ তিওয়ারি। গত কাল রাতেই সিএবি সচিব অভিষেক ডালমিয়াকে তিনি বার্তা পাঠিয়ে দেন যে, আর বাংলার অধিনায়কত্ব করতে চান না। নির্বাচিত হলে খেলতে চান শুধু এক জন ক্রিকেটার হিসেবে (আনন্দবাজারে রবিবারের খেলার পাতায় সেই এক্সক্লুসিভ খবর প্রকাশিত হয়)। মোবাইল বার্তায় কোনও কারণ না দেখালেও সিএবি প্রশাসকদের নানা কার্যকলাপে অপমানিত হয়েই যে তিনি সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মনোজের কঠোর মনোভাবের সন্ধান পেয়েই সচিব তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু বরফ গলার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।

সারা দিন ধরে অধিনায়কত্ব নিয়ে নাটকের পরে রাতের দিকের খবর, নানা অনুরোধের পরে মনোজ শুধু প্রথম ম্যাচে অধিনায়কত্ব করতে রাজি হয়েছেন। সেটাও বাংলার স্বার্থের কথা ভেবে। যে-হেতু প্রথম ম্যাচের আগে আর বেশি সময়ও নেই এবং সোমবারেই হিমাচল প্রদেশ রওনা হচ্ছে দল। কিন্তু সিএবি সচিবকে তিনি পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, প্রথম ম্যাচের পরে আর কিছুতেই নেতৃত্বের দায়িত্বে থাকতে চান না। আনন্দবাজারকে রবিবার রাতে মনোজ বললেন, ‘‘প্রথম ম্যাচের আগে হাতে সময় খুবই কম। কালই আমরা বেরিয়ে যাচ্ছি। সিএবি থেকে বারবার অনুরোধ করায় আমি বলেছি, প্রথম ম্যাচেই শুধু ক্যাপ্টেন্সি করতে পারি। তার পর আর থাকতে চাই না।’’ অভিমানী সুরেই এর পর যোগ করলেন, ‘‘বাংলার স্বার্থ সব সময় আমার কাছে আগে। ক্রিকেটার হিসেবে সেরাটা দিয়ে যাব আমি।’’

আরও পড়ুন: অরুণের বার্তা, অভিযোগ না করে খেলায় মন দাও

এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সল্টলেক ক্যাম্পাসের মাঠে প্র্যাক্টিস ছিল বাংলার। হিমাচল প্রদেশে এ মরসুমের প্রথম রঞ্জি ম্যাচ খেলতে রওনা হওয়ার আগে এটাই ছিল শেষ অনুশীলন। সেখানে দলের সঙ্গে যোগ দিলেন মেন্টর অরুণ লালও। মাঠে আসেন মনোজও। তাঁকে ডেকে নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে বোঝাতেও থাকেন অরুণ। কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে দু’জনের কেউ পরিষ্কার করে মন্তব্য করতে চাননি। তবে এটা ঠিক যে, অরুণ লালের প্রতি সশ্রদ্ধ মনোজ তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ছাত্রের মতোই সব কথা শুনছিলেন। এই স্নেহ এবং শ্রদ্ধার পারস্পরিক আবহ এর মধ্যে বাংলার শিবিরে একেবারেই চোখে পড়েনি। বরং শোনা যাচ্ছে, অতীতে একটি আইপিএল টিমের সঙ্গে যুক্ত এবং বাংলার হয়ে হাতে গোণা কয়েকটি ম্যাচ খেলা এক প্রাক্তন এখন বাংলার কোচিং টিমের অন্যতম সদস্য হিসেবে যে ভাবে ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেছেন, তা নিয়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দলের মধ্যে।

সিএবি প্রশাসকদের সৌজন্যে দল ভিতরে গুমোট পরিবেশ আরও বেড়ে গিয়েছে। তাঁরা এ বারের রঞ্জি প্রস্তুতির রাস্তায় এমন সব সার্কাস উৎপন্ন করেছেন যে, তার ঠেলায় বাংলার ক্রিকেট দল ঘিরেই নানা অনিশ্চয়তা। দলের একাংশকে ঘরে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছেন সিএবি প্রশাসকেরা। এই একাংশ নাকি অভিযোগ করেছেন কোচ সাইরাজ বাহুতুলে এবং অধিনায়ক মনোজের দল পরিচালন ভঙ্গি নিয়ে। অথচ, প্রেসিডেন্ট বা সচিব কোচ বা অধিনায়কের বক্তব্য শোনেননি। এখানেই শেষ নয়। অধিনায়ক মনোজকে অন্ধকারে রেখে তাঁরা প্রথম ম্যাচের দলও গড়ে ফেলেছেন। দল হয়ে যাওয়ার পরে কোচ বাহুতুলেকে বলা হয়, অধিনায়ককে টিম পড়ে শোনাও। এ সব দেখেই অপমানিত মনোজ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, তিনি আর অধিনায়কত্বের পদে থাকবেন না। তাঁর মনে হতে থাকে, প্রশাসকেরা বোধ হয় আর চাইছেন না, তিনি অধিনায়ক থাকুন।

হিচককের থ্রিলারের মতোই আবার বাংলার অধিনায়কত্ব নাটক রুদ্ধশ্বাস মোড় নেয় রবিবার সকাল থেকে। সল্টলেকে বাংলার প্র্যাক্টিসে আবির্ভূত হন সৌরভ এবং অভিষেক। সচিব এক কোণে ডেকে নিয়ে বোঝাতে শুরু করেন মনোজকে। দফায় দফায় সেই আলোচনা চলতে থাকে। যদিও মাঠে প্রায় ঘণ্টা খানেক থাকলেও সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভকে অধিনায়ক মনোজের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি। দলের অন্যান্যদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন এবং শ্রীবৎস গোস্বামীর মতো কাউকে কাউকে ব্যাটিং পরামর্শও দিয়ে যান। কোচ বাহুতুলের সঙ্গেও কথা বলতে দেখা যায় সৌরভকে। দলের অনেককে একসঙ্গে নিয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলেন। কিন্তু সেই গোল বৃত্তে দেখা যায়নি অধিনায়ক মনোজকে।

বাংলার প্র্যাক্টিস শেষে ক্যানসারকে হারিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছিল, ‘‘বাংলার এই ক্যাপের উপরে কেউ নয়। কীসের ইগো? কীসের দূরত্ব! হাতে ব্যাট আছে রান করো। হাতে বল আছে, উইকেট নাও। কোনও অভিযোগ করতে এসো না।’’

তিনি অরুণ লাল— এক সময়ে ব্যাট হাতে বাংলাকে মেরুদণ্ড দিয়েছিলেন। শিখিয়েছিলেন কী ভাবে বাইশ গজে লড়াই করতে হয়। এ বার মেন্টর হিসেবে যদি আইসিসিইউ থেকে বার করতে পারেন বঙ্গ ক্রিকেটকে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Bengal CAB Manoj Tiwary Captaincy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE