Advertisement
০২ মে ২০২৪

জন্মভূমির বিপন্ন মানুষদের জয় উৎসর্গ রোহনের

কুর্গের ভূমিপুত্র রোহন বোপান্না এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেও তাই উচ্ছ্বসিত নন। বলছেন, মন খারাপের মাঝে এই সাফল্য আসলে কয়েক মুহূর্ত কষ্ট ভুলে থাকার উপায় মাত্র। টেনিস জীবনে বড় একটা মাইলফলক গড়েও তা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছেন না রোহন। 

রোহন বোপান্না ও দ্বিবীজ শরণ। এএফপি

রোহন বোপান্না ও দ্বিবীজ শরণ। এএফপি

রাজীব ঘোষ 
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৪১
Share: Save:

কেরলের অংশ না হয়েও ভয়ঙ্কর বন্যার গ্রাস থেকে রেহাই পাননি কুর্গের মানুষগুলিও। কর্নাটকের কুর্গ বা কোডাগু এখন বানভাসি। কোথাও গোটা গ্রাম তলিয়েছে জলের তলায়। কোথাও নেমেছে ধস। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন। কর্নাটকের এই জেলা যে কেরল সীমান্তে। তাই এই দুর্দশা।

সেই কুর্গের ভূমিপুত্র রোহন বোপান্না এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেও তাই উচ্ছ্বসিত নন। বলছেন, মন খারাপের মাঝে এই সাফল্য আসলে কয়েক মুহূর্ত কষ্ট ভুলে থাকার উপায় মাত্র। টেনিস জীবনে বড় একটা মাইলফলক গড়েও তা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছেন না রোহন।

শুক্রবার জাকার্তা থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে সোনাজয়ী টেনিস তারকা যখন বলছিলেন, ‘‘সোনার পদকটা আমার জন্মভূমি কুর্গের বন্যাদুর্গত মানুষগুলোর প্রতি উৎসর্গ করছি’’, তখন যেন আবেগে গলা বুজে আসছিল তাঁর। নিজেকে সামলে জাকার্তার বিমানবন্দরে বসে বলে চলেন, ‘‘কুর্গেই বড় হয়েছি আমি। ছোটবেলা ওখানেই কাটিয়েছি। তাই যখন শুনি ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে কেরল ও আমার জেলার মানুষেরা, তখন থেকেই মনটা খারাপ।’’ শৈশবের অভিজ্ঞতা থেকে রোহন বলেন, ‘‘আসলে কুর্গের মানুষগুলো সৎ ও সরল। প্রকৃতির ওপর বড্ড নির্ভরশীল ওরা। চারদিকে কফির বাগান। সেই প্রকৃতিই যে কেন এমন শাস্তি দিল ওদের, জানি না। আমার সাফল্যের খবর শুনে যদি কষ্টে থাকা মানুষগুলো ছিটেফোঁটা আনন্দও পায়, তা হলেই আমার এই সোনা জয় সার্থক হবে।’’

ইচ্ছে থাকলেও কুর্গের বিধ্বস্ত মানুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর উপায় নেই তাঁর। বললেন, ‘‘এই তো এশিয়াডের ফাইনাল খেলেই এখন রওনা হতে হচ্ছে নিউ ইয়র্কে। সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন শুরু হবে। কী করব? তবে দেশে ফিরে সবার আগে ওখানে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। ওদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’’

এশিয়ান গেমসের ডাবলস ফাইনালে দিল্লির দ্বিবীজ শরণকে সঙ্গে নিয়ে জয়ের প্রসঙ্গে ফিরে এসে রোহন বলেন, ‘‘দারুণ জয়। আমার সেরা সাফল্যগুলোর মধ্যে অবশ্যই উপরের দিকে থাকবে। দেশের জন্য খেলে সফল হওয়ার তৃপ্তি আলাদা। মাত্র ৫২ মিনিটে ফাইনাল জিতে নিতে পারব, ভাবিনি।’’

আগের দিন সেমিফাইনালেও তাঁরা জেতেন ৭২ মিনিটে। উইম্বলডনের পরে চোটের জন্য একটিও ম্যাচ খেলতে পারেননি। দেড় মাস পরে কোর্টে ফিরে রোহনের এমন বিধ্বংসী ফর্ম দেখে বিস্মিত টেনিস মহল। অনেকের প্রশ্ন, এ ভাবেও ফিরে আসা যায়? রোহন বলছেন, ‘‘পুরো ফিট না হয়ে কোর্টে নামব না, তা আগে থেকেই ঠিক করে নিয়েছিলাম। তাই দেড় মাস কোনও প্রতিযোগিতায় নামিনি। জানতাম পুরো ফিট হয়ে নামলে আত্মবিশ্বাসও পাব যথেষ্ট। আর আত্মবিশ্বাস থাকলে চাপে ভুগতে হয় না।’’ সাফল্যের জন্য সঙ্গী দ্বিবীজ শরণকেও কৃতিত্ব দিতে ভুললেন না। বলেন, ‘‘দ্বিবীজের সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটা খুবই ভাল। ও খুব ভাল ডাবলস খেলোয়াড়। তবু প্রথম দু-একটা ম্যাচে কম্বিনেশনটা সড়গড় করতে হয়েছে। শেষ তিনটে ম্যাচে সেরা ফর্মে ছিলাম আমরা।’’

এশিয়াডে কোর্টে নামবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত প্রতিযোগিতা শুরুর তিন-চার দিন আগে পর্যন্তও নাকি ঠিক করতে পারেননি। তখন স্ত্রী সুপ্রিয়াই তাঁকে সাহস জোগান। রোহনই এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘সুপ্রিয়া সব সময়ই আমাকে মানসিক ভাবে তরতাজা রাখার চেষ্টা করে। এশিয়াডের আগে ও আমাকে বোঝায়, দেশের জন্য খেলার সুযোগ কমই আসে। এই সুযোগ আবার চার বছর পরে আসবে। তাই যে কোনও ভাবেই নিজেকে একশো শতাংশ ফিট করে তোলো। তা ছাড়া আমার বাবা, মা তো বছরের শুরু থেকেই বলে রেখেছেন, সারা বছর না খেললেও এশিয়াডে খেলিস। সবাই এ ভাবে বললে আর না খেলে উপায় কী?’’

শুধু খেললেন না, সোনাও জিতলেন। প্রথম এশিয়াড সোনা। এ বার গন্তব্য ফ্লাশিং মিডোজ। যেখানে তাঁর ডাবলস সঙ্গী ফ্রান্সের এডুয়ার্ড রজার ভ্যাসেলিন তাঁর অপেক্ষায় আছেন। সেখানে নতুন লড়াই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE