Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ব্যাটম্যান আর রবিনে অপ্রতিরোধ্য কেকেআর

ওপেনারদের পৃথিবীতে তাঁদের একটু নামডাক আছে। দু’জনে মিলে দেশের বহু ইনিংসের মজবুত ভিত গড়ে দিয়েছেন। দু’জনের কেউই আর দেশের হয়ে খেলেন না। একজন অবসরের গ্রহে, অন্য জন প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন। দু’জনেই আইপিএলে আছেন। একজন প্রাক্তন টিমের মেন্টর। অন্য জন টিমের অধিনায়ক। বীরেন্দ্র সহবাগ আর গৌতম গম্ভীর, মঙ্গলবারের মোহালি ম্যাচে হাজির ছিলেন দু’জনেই।

নাইটদের উৎসব। মঙ্গলবার মোহালিতে। ছবি: বিসিসিআই

নাইটদের উৎসব। মঙ্গলবার মোহালিতে। ছবি: বিসিসিআই

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১১
Share: Save:

ওপেনারদের পৃথিবীতে তাঁদের একটু নামডাক আছে। দু’জনে মিলে দেশের বহু ইনিংসের মজবুত ভিত গড়ে দিয়েছেন।

দু’জনের কেউই আর দেশের হয়ে খেলেন না। একজন অবসরের গ্রহে, অন্য জন প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন। দু’জনেই আইপিএলে আছেন। একজন প্রাক্তন টিমের মেন্টর। অন্য জন টিমের অধিনায়ক।

বীরেন্দ্র সহবাগ আর গৌতম গম্ভীর, মঙ্গলবারের মোহালি ম্যাচে হাজির ছিলেন দু’জনেই। মেন্টর সহবাগ ডাগআউটে। অধিনায়ক গম্ভীর মাঠে। এক সময়কার সতীর্থ, বর্তমানে বিপক্ষ দলের সদস্যকে মঙ্গলবার রাতে ম্যাচ শেষে দেখা গেল দুই বিপরীত মেরুতে।

টিমের বালখিল্য ক্রিকেট-মনোভাব দেখে রাগে ফুঁসছেন বীরেন্দ্র সহবাগ। আর গৌতম গম্ভীর— তাঁর মুখের ভাব এখনও ঠিক হাসি নয়, তবে অনেকটা যেন হাসির মতোই!

হবে না কেন? আধ ডজন অ্যাওয়ে ম্যাচ অভিযানের শুরুটা তাঁর টিম করেছে অনায়াস একজোড়া জয় দিয়ে। চার ম্যাচে ছ’পয়েন্ট নিয়ে তাঁর টিম এখন আইপিএল টেবলের শীর্ষে। গম্ভীর নিজে টুর্নামেন্টে আপাতত সর্বোচ্চ রানের মালিক। মাথায় গর্বের কমলা টুপি পরে ঘুরছেন। ওপেনিং পার্টনার রবিন উথাপ্পার সঙ্গে তাঁর বাইশ গজের বন্ধুত্ব এতটাই গভীর যে, দু’জনকে ‘ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন’ বলে ডাকা শুরু হয়ে গিয়েছে! একটা ম্যাচে গম্ভীর একা হাতে জিতিয়ে ম্যাচের সেরার পুরস্কার পাচ্ছেন তো পরের সুযোগেই হাফসেঞ্চুরি করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হচ্ছেন উথাপ্পা। রবিন-ফ্যাক্টরি থেকে বড় ইনিংস তৈরি শুধু হচ্ছে না, মাঠে এখন তা বিপক্ষকে ব্যাগপত্র সমেত নিজেদের মাঠ থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে! এবং প্রথম চারটে ম্যাচের তিনটেতেই টিম গম্ভীরের অতিবেগুনি রশ্মি বিপক্ষের চোখে এমন ঝিলমিল লাগিয়ে দিয়েছে যে, কেউ কেউ তো এখন থেকেই সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে একটা টিমকেই দেখছেন।

কেকেআরকে দেখছেন।

দেখাটা খুব স্বাভাবিক। এত নিখুঁত অথচ নির্মম, এমন যান্ত্রিক অথচ অকুতোভয় কেকেআরকে শেষ কবে দেখা গিয়েছে? টিমটা তো এমন একটা প্যাটার্ন তৈরি করে ফেলছে যে, ফলাফলের জন্য রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে হচ্ছে না। রাত ন’টাতেই বোঝা যাচ্ছে! যেমন টস জিতলে প্রথমে ব্যাট নয়, রান তাড়া হবে। প্রথমে মর্কেল-উমেশ লেলিয়ে বিপক্ষের শিরদাঁড়া টুকরো করে আনা হবে স্পিন। একজন লেগস্পিনার, একজন বাঁ হাতি স্পিনার এবং একজন মিস্ট্রি স্পিনার। বিপক্ষ-শক্তির যতটুকু যা পড়ে থাকবে, এঁরা তিন জন সাফ করে দেবেন। টার্গেট আটকে রাখবেন দেড়শোর মধ্যে। আর ব্যাটিং? তার চিত্রনাট্যও অপরিবর্তিত। গম্ভীর-উথাপ্পা ফিরতে-ফিরতে ম্যাচ প্রায় শেষ। ফিনিশিং টাচ দিতে বড়জোর নামতে হবে আর দু’একজনকে।

পঞ্জাবপুত্তররা গর্জন তোলা দূরে থাক, মঙ্গলবার দাঁড়াতেই পারল না। সহবাগকে দেখা গেল টিভি ক্যামেরায় উত্তেজিত প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ছ’নম্বরে পাঠানো নিয়ে। পঞ্জাবের টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে তিতিবিরক্ত সহবাগ বলছিলেন, ‘‘আমি তো মেন্টর। পেপটক দিতে পারি। আসল কাজটা কোচরা করছেন। তাদের অনুরোধ করব, ম্যাক্সওয়েলকে উপরে তুলুন।’’ সহবাগ রাগাগি করলেন ঠিকই, কিন্তু মনে হয় না এ দিন অন্তত তুললেও লাভ হত বলে। সুনীল নারিনের স্পিন-বিষের সামনে ম্যাক্সওয়েলের যা অবস্থা হল, ছয়ের বদলে ওয়ান ডাউন এলেও খুব সুবিধে বোধহয় হত না।

আসলে কেকেআর এমনিতেই বলীয়ান। তার উপর নারিন যে আসন্ন ভয়াবহতার ইঙ্গিত ছেড়ে রাখলেন মোহালিতে, বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজি অধিনায়কদের এর পর ঘুম এলে হয়! মরসুম শুরুর আগে কেকেআর অধিনায়ক দাবি করেছিলেন, আইসিসির নির্বাসনের জুজু ঘাড় থেকে নামিয়ে নাইট সংসারে যে নারিন ফিরে এসেছেন, হালফিলের বিজ্ঞাপনী ভাষায় তিনি ‘বেস্ট এভার’ সুনীল নারিন। গত শনিবার হায়দরাবাদ ম্যাচে টিমে ফিরে উইকেট পাননি, কিন্তু ক্যাপ্টেনকে আশ্বস্ত করেছিলেন ক্যারিবিয়ান স্পিনার। এ দিন চার ওভারে বাইশ রান দিয়ে দুটো উইকেট তুলে নিলেন। পঞ্জাব ব্যাটিংয়ের ‘আত্মহত্যা’-র প্রেক্ষিতে উইকেট হিসেবে সেগুলোর দাম খুব বেশি নয় হয়তো। কিন্তু নারিন এ দিন দেখিয়ে দিলেন, প্রত্যাবর্তন কাকে বলে।

বিশেষ করে ম্যাক্সওয়েলের বলটা। ‘ম্যাড ম্যাক্স’ আগাম রিভার্স স্লগ খেলতে ঘুরে গেলেন। বলটা মারলেনও সপাটে। শুধু শেষে দেখা গেল, ওটা পীযূষ চাওলার হাতে নিশ্চিন্তে বন্দি হয়ে গিয়েছে! শন মার্শ বাদে পঞ্জাব ব্যাটিং লাইন আপে এমন একজনকেও পাওয়া গেল না, যে ন্যূনতম প্রতিরোধের দেওয়াল তুলবে নাইট যোদ্ধাদের সামনে। পঞ্জাবি ‘শের’-রা ব্যাঘ্রহৃদয়ের পরিচয় রেখেছেন ঠিকই, কিন্তু তা প্রতিপক্ষের প্রতি উদারতায়। ভুলে ভরা স্ট্র্যাটেজির একের পর এক উপহারে।

প্রীতির হতাশা।

কেকেআর যার ফায়দা তুলতে কোনও ভুল করেনি। ক্রিকেট-ঈশ্বরের কোন জাদুস্পর্শ এ বার টিমটার উপর চলছে কে জানে! প্রতিটা ম্যাচে যেন আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে নাইটরা। মুম্বইয়ের কাছে হারটা ব্যতিক্রম। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে তিনটে ম্যাচ জিতেছে কেকেআর, জিতেছে বিপক্ষকে একেবারে উড়িয়ে, হাসতে হাসতে। ইডেনে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস দিয়ে শুরু। তার পর ডেভিড ওয়ার্নারদের ঘরের মাঠে হায়দরাবাদ আর আজ পঞ্জাবের মাঠে পঞ্জাব। এক-এক দিন এক-এক জন দায়িত্ব নিয়ে টিমকে জয়ের রাস্তায় তুলে দিচ্ছেন। ইডেনে আন্দ্রে রাসেল। উপ্পলে গম্ভীর নিজে। মোহালিতে রবিন উথাপ্পা।

উথাপ্পার এ দিনের হাফসেঞ্চুরিতে ক’টা বাউন্ডারি ছিল, কত স্ট্রাইকরেট রেখে তিনি খেললেন, ও সব আজ থাক। ওগুলো ব্যক্তিগত রেকর্ডবইয়ে থাকবে। আর কেকেআরের পৃথিবীতে তো ব্যক্তি বলে কেউ নেই। এখানে কেউ ‘আমি গম্ভীর’ বা ‘আমি নারিন’ বলে নিজের পরিচয় দেন না। কেকেআর সংসার থেকে বরং একটাই ‘আমি’ ইদানিং শোনা যায়।

আমি কেকেআর!

কিংগস ইলেভেন পঞ্জাব ১৩৮-৮ (২০ ওভারে)

কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৪১-৪ (১৭.১ ওভারে)

সংক্ষিপ্ত স্কোর: কিংগস ইলেভেন পঞ্জাব ২০ ওভারে ১৩৮-৮ (মার্শ ৫৬ ন.আ, নারিন ২-২২), কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৭.১ ওভারে ১৪১-৪ (উথাপ্পা ৫৩, গম্ভীর ৩৪)।

আরও পড়ুন:
আইপিএলের সময়সূচি
আইপিএলের পয়েন্ট টেবল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE