হতাশ: প্রথম দিনে ব্যর্থতা সঙ্গী মনোজ-ডিন্ডাদের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
দিনের শেষে ড্রেসিংরুম থেকে বাংলার ক্রিকেটাররা মাঠে নেমে পড়লেন ফুটবল হাতে নিয়ে। চার-পাঁচজন মিলে শুরু করে দিলেন ফুটবল। বিরাট কোহালির দলেও এমন দেখা যায়। পোশাকেও আবার ‘মেন ইন ব্লু’-র সঙ্গে মিল রয়েছে তাঁদের।
দিনের শেষে দূর থেকে যতই কোহালি, ধবন, রোহিতদের মতো দেখতে লাগুক ওঁদের, আসলে দলটা যে বাংলা। আর ভারতীয় দলের সঙ্গে ওদের দূরত্ব যে কল্যাণী থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার মতোই, তা বৃহস্পতিবার সারা দিনেই বুঝিয়ে দিলেন বঙ্গ বোলাররা।
টস জিতে ভুল সিদ্ধান্ত। দল বাছাইয়ে ভুল। উইকেট-চরিত্র বুঝতেও ভুল। বাংলা দলের রোগগুলো কিছুতেই যেন সারছে না। অবধারিত ভাবে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতা ক্রমশ বাড়ছে। এত দিন মহম্মদ শামি ছিলেন বলে বাংলা দলের যে মোড়কটা ছিল, সেটা শামির অনুপস্থিতিতে খসে পড়তেই বেরিয়ে পড়ল অন্ধকার দিক। ইডেনে হিমাচলের বিরুদ্ধে যে জায়গায় শেষ করেছিলেন মনোজ তিওয়ারিরা, এ দিন কল্যাণীতে সেই জায়গা থেকেই
শুরু করলেন।
দিনের শেষে বিদর্ভ ২৮৫-১। এই স্কোরটা কিন্তু বাংলারও হতে পারত। কিন্তু ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন মনোজ! প্রায় সারা দিন উইকেট পেলেন না বঙ্গ বোলাররা। খেলা শেষ হওয়ার দশ ওভার আগে শিকে ছিঁড়ল। ক্যাচও পড়ল এক সেঞ্চুরিয়নের। যিনি দিনের শেষে নট আউট। মরসুমের শুরুতে ভিনরাজ্যে এ সব তেমন দেখা না গেলেও দল ঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে এগুলোও ফিরতে শুরু করেছে বঙ্গ ক্রিকেটে। প্রায় সারা দিন অশোক ডিন্ডা, কণিষ্ক শেঠ, ইশান পোড়েল, আমির গনি, কৌশিক ঘোষেরা শিকারহীন থাকার পরে যখন মনোজ তিওয়ারিকে রান-আপ বাড়িয়ে মিডিয়াম পেস করতে দেখা গেল, তখনই ফুটে উঠল তাঁর দলের দৈন্যদশা। দিনের শেষ বেলায় একটা উইকেট তুললেন বটে ডিন্ডা, কিন্তু তা নিয়েও সন্দেহ রয়ে গেল। ১৪২ রানে আউট হওয়া সত্ত্বেও বিদর্ভ অধিনায়কের মুখে আফসোস, ‘‘ডাবল সেঞ্চুরিটা হয়ে যাবে ভেবেছিলাম।’’ যিনি এর আগের দু’ম্যাচেও দু’টো সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, সেই ফজল এই উইকেটে সারা দিন ধরে এতই আরামে ব্যাটিং করেন যে, দেড়শো পেরোনোর আগেই দু’শোর কথা ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলেন এক সময়।
তাঁকে এলবিডব্লিউ নাও দিতে পারতেন আম্পায়ার। এক ওয়েবসাইটে সম্প্রচার হওয়া ম্যাচের সেই বলটার রিপ্লেতে দেখা গেল, লেগ স্টাম্পের বাইরে যাচ্ছিল ডিন্ডার বল। কিন্তু এতটাই আগ্রাসী আবেদন করেন তিনি যে, আম্পায়ার আঙুল না তুলে পারেননি। ডিন্ডার আগ্রাসী মেজাজ কোনও ভাবে তো কাজে লাগল।
ফৈয়জ ফজলের সঙ্গে যিনি এ দিন ওপেন করতে নামেন, সেই বাইশ বছরের তরুণ ওপেনার সঞ্জয় রামস্বামীও রানের মধ্যে রয়েছেন। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি ও সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। প্রায় শোওয়ার ঘরের মতো আরামদায়ক বাইশ গজ পেয়ে তিনিও চুটিয়ে রান তুলে গেলেন এ দিন। দু’জনে মিলে তুললেন ২৫৯ রান। একবার রামস্বামীর সঙ্গে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তর্কাতর্কিই জুড়ে দিতে দেখা যায় ডিন্ডাকে। হয়তো তাঁর ফোকাসটা নড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। দিনের শেষ দিকে তাঁর ১১৭ রানে ডিপ স্কোয়ার লেগে তাঁর ক্যাচ ফেলে দেন এই প্রথম রঞ্জি ক্যাপ পাওয়া ঈশান পোড়েল। ক্যাচটা খুব একটা সহজ ছিল না। তবে ভারতীয় যুব দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফর করে আসা ক্রিকেটারের কাছ থেকে এটুকু আশা করা বোধহয় অন্যায় নয়।
আগের দিন রাঁচীর যে কিউরেটরকে নিয়ে বিস্তর হইচই হয়, সেই শ্যাম বাহাদুর সিংহ এ দিন ঘরে ফিরে যান খেলা শুরুর আধ ঘণ্টা পরে। কল্যাণীর মাঠে রেখে যান মনোজদের জন্য এমন এক প্রশ্নপত্র, যার বেশির ভাগেরই উত্তর ছিল না তাঁদের কাছে।
টস জিতে ফিল্ডিং কেন? বাংলার কোচ সাইরাজ বাহুতুলে আমতা আমতা করে বললেন, ‘‘তখন মনে হয়েছিল সকালের কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে আমাদের পেসাররা তার ফায়দা তুলতে পারবে। ওরা যে তা পারবে না, কী করে জানব?’’ শামিহীন বঙ্গ পেস বিভাগের ওপর এতটা আস্থা রাখা যে ঠিক হয়নি, তা কার্যত স্বীকারই করে নিলেন কোচ।
অন্য দিকে বিদর্ভ ক্যাপ্টেন বলছেন, ‘‘আমরা ব্যাট করার জন্য তৈরিই ছিলাম। টস জিতলে ব্যাটিংই নিতাম। এও মনে হয়েছিল যে বাংলা টস জিতলে বোলিংই করবে।’’ এর পরে দুই শিবিরের মানসিকতার তফাতটা বোঝা বোধহয় খুব একটা কঠিন নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy