Advertisement
০৯ মে ২০২৪
দেশে ফিরেই সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নবাণের মুখে ওয়াকিমের দল 

ফেরার রাস্তার খোঁজে জার্মানি

ঠিক যেন জার্মানির মানসিকতারই প্রতিফলন। হারলেও হারিয়ে যাব না। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আকস্মিক বিদায়ের পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে।

হারের যন্ত্রণা।

হারের যন্ত্রণা।

সোহম রায়
মানহাইম শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ০৪:৫৫
Share: Save:

ট্রামে বসে প্রথমেই চোখে পড়ল পাশের বাচ্চাটার দিকে। বাচ্চাটার গালে জার্মান পতাকার রংগুলো কিছুটা ফিকে হয়ে গেলেও দৃশ্যমান।

ঠিক যেন জার্মানির মানসিকতারই প্রতিফলন। হারলেও হারিয়ে যাব না। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আকস্মিক বিদায়ের পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। বিপর্যয়ের ধাক্কা অনেকটাই সামলে নিয়েছে এখানকার মানুষ। স্থানীয়দের মুখে চাপা কষ্টটা নজরে পড়লেও গতিশীল জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ব্যস্ততাও ফিরে এসেছে। এটাই জার্মানির মানসিকতা। ধ্বংসের মধ্যে থেকেও ফেরার রাস্তা খুঁজে নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা।

পাশাপাশি হারের পরে সংবাদমাধ্যমে চলছে জার্মানির বিদায় নিয়ে ময়নাতদন্তও। যে ময়নাতদন্তে উঠে আসছে হারের বেশ কিছু কারণ। যেমন, ওয়াকিম লো-র এই জার্মান দলটার মধ্যে কোনও একতা ছিল না। ম্যানুয়েল নয়্যার বাদে সব ফুটবলারকেই দিগ্ভ্রষ্ট, লক্ষ্যভ্রষ্ট পথিকের মতো মনে হয়েছে। যাঁরা জানেন না তাঁদের কাজটা ঠিক কী। যাঁর হাত ধরে জার্মানি পাঁচ নম্বর বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছিল, সেই লো-র সমালোচনা রাত পোহালেও থামছে না। ঠিক মতো দল বাছতে না পারা, দল পরিচালনা করতে না পারা, ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করতে না পারা— এ সব হাজারো অভিযোগের তিরে বিদ্ধ জার্মানির কোচ।

বুধবার কোরিয়ার কাছে জার্মানির হারের পরে স্থানীয় টিভি স্টেশনে এক প্রাক্তন ফুটবলার আলোচনায় বসেছিলেন। তাঁর নাম অলিভার কান! ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই গোলকিপার, জার্মানদের প্রিয় ‘অলি’ বলছিলেন, ‘‘২০১৪ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পরেই জার্মানির উচিত ছিল নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া। কারণ, বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতা জেতার পরে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে পারাটা রীতিমতো কঠিন।’’ বিশ্বকাপ শুরুর আগেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন মেসুত ওজিল। সেই বিতর্ক শেষ হল না বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পরেও। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে খেলা শেষে মাঠেই এক দল সমর্থকের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন জার্মান মিডফিল্ডার।

রাশিয়া থেকে বৃহস্পতিবারই দেশে ফিরে এলেন লো-রা। নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, আগামী ক’দিন ফুটবল বিশ্বের নজর থাকবে জার্মানির ওপর। কী কী রদ বদল ঘটে, তা দেখতে আগ্রহী থাকবে সবাই।

তবে একটা কথা বলতেই হবে। পাবলিক ভিউয়িং এরিয়ায় (যেখানে সাধারণ মানুষ জায়ান্ট স্ক্রিনে ফুটবল ম্যাচ দেখতে পারেন) যে হতাশ মুখের ছবিগুলো দেখছিলাম, তা একটা খণ্ডচিত্র মাত্র। এক দিন পরেই সামগ্রিক ছবিটায় কিন্তু জার্মানদের হার না মানা মনোভাবটাই ফুটে উঠছে।

ম্যাচ শেষ হওয়ার ঘণ্টা তিনেক পরে এক জার্মান বন্ধুকে ফোন করেছিলাম, সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। উল্টো দিক থেকে উত্তর এল, ‘‘দুঃখ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু জার্মান জার্সিটা এখনও গায়েই আছে। শুধু পাঁচ নম্বর বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষা চার বছর বেড়ে গেল।’’ লো-র ব্রেসলেটে থাকা পাঁচটি তারা মস্কোর আকাশে ঝলমলিয়ে উঠল না ঠিকই, কিন্তু জার্মানরা এখন থেকেই ফের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। জার্মানি যে গোটা দুনিয়ার কাছে ঘুরে দাঁড়ানোর এক অনন্য প্রতীক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE