লক্ষ্য: সামনেই বিশ্বকাপের লড়াই। মঙ্গলবার প্রস্তুতি শিবিরে ওজন তুলে বিশেষ শারীরিক প্রশিক্ষণ মেসি, দি মারিয়াদের। ৮ জুন বার্সেলোনা থেকে জেরুসালেম যাবে আর্জেন্তিনা দল। ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে। যে ম্যাচ ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। ছবি: রয়টার্স
বার্সেলোনায় আর্জেন্তিনার অনুশীলন চলার সময় বার বার তাঁকে দেখা গিয়েছে। কখনও ফুটবলারদের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন। কখনও বা নোট নিচ্ছেন। এক বার তাঁকে দেখা যায়, কফি শপে আর্জেন্তিনার কোচ হর্হে সাম্পাওলির সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ডুবে।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কে এই বয়স্ক ভদ্রলোক, যাঁকে সাম্পাওলি এত গুরুত্ব দিচ্ছেন? সরকারি ভাবে আর্জেন্তিনার সাপোর্ট স্টাফের তালিকায় তো তাঁর নাম নেই! আর্জেন্তিনার সাপোর্ট স্টাফের তালিকায় নামটা না থাকলে কী হবে, বার্সেলোনা ক্লাবের অন্দরমহলে এই নামটা কিন্তু খুব শ্রদ্ধার সঙ্গেই উচ্চারিত হয়। ফ্রান্সিসকো সেইরুল লো ভার্গাস। বন্ধুরা যাঁকে প্যাকো সেইরুল লো বলেন। যে বন্ধু তালিকায় এক সময় ইয়োহান ক্রুয়েফের নামও ছিল।
সেই ১৯৭৮ সাল থেকে বার্সেলোনা ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। প্রথমে হ্যান্ডবল, অ্যাথলিটদের ফিটনেস কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। পরে ক্রুয়েফ তাঁকে ফুটবল দলের সঙ্গে যুক্ত করেন। এক বছরের মধ্যে ফুটবল দলের প্রধান ফিটনেস কোচ হয়ে ওঠেন প্যাকো। প্যাকো-অস্ত্র কাজে লাগিয়ে বার্সায় শুরু হয় ক্রুয়েফ যুগ। পরে তিনি কাজ করেছেন পেপ গুয়ার্দিওলার আমলেও। এখনও বার্সেলোনার সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত ৭২ বছর বয়সি প্যাকো। বার্সেলোনার সেই কিংবদন্তি ফিটনেস কোচই এখন আর্জেন্তিনার অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিশ্বকাপে। আর্জেন্তিনা শিবিরে প্যাকোকে আনার পিছনে কি তা হলে লিয়োনেল মেসির কোনও ভূমিকা আছে? এ ব্যাপারে পরিষ্কার কোনও ধারণা পাওয়া না গেলেও আর্জেন্তিনার সাংবাদিকদের বক্তব্য, সাম্পাওলির সঙ্গে বন্ধুর মতোই মিশছেন এই বর্ষীয়ান ফিটনেস কোচ। প্রচারমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্যাকো নাকি ‘ডাবল শিফ্ট’ অনুশীলন করতে বারণ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এতে ফুটবলারদের চোট লাগার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই দু’পর্বে নয়, ফুটবলারদের অনুশীলন চলছে এক পর্বে। প্যাকো এও মনে করেন, ট্রেনিংয়ের তীব্রতা যত বাড়বে, বিশ্রামের প্রয়োজনও ততটাই হবে। বিশ্বকাপ শিবির চলাকালীন তাই মেসিদের এক দিন বিশ্রাম দেওয়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করছেন না অনেকেই।
চমক: আর্জেন্তিনার বিশ্বকাপ শিবিরে বার্সার ফিটনেস কোচ।
যদিও এই বিশ্রাম নিয়ে হাল্কা বিতর্ক শুরু হয়েছে। যে জন্য হয়তো বিশ্রামের দিন আর্জেন্তিনার কোনও ফুটবলার সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও কিছু পোস্ট করেননি। ব্যতিক্রম এক জন। ক্রিস্তিয়ান আনসালদি। এই ফুটবলার উড়ে যান মাদ্রিদে। তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে। তাতে অবশ্য সমস্যা ছিল না। সমস্যা হয় তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্ট নিয়ে। জাকুজিতে স্ত্রীর সঙ্গে যে ছবি পোস্ট করেছেন আনসালদি, তা নিয়েই বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত ছবি সরিয়ে দেন এই ফুটবলার।
মঙ্গলবার অবশ্য পুরোদমেই অনুশীলন করলেন মেসিরা। যেখানে ওজন কাঁধে নিয়ে বিশেষ ফিটনেস ট্রেনিং করতে দেখা গেল আর্জেন্তিনা অধিনায়ককে। বার্সেলোনা থেকে ৮ জুন জেরুসালেম যাচ্ছে আর্জেন্তিনা। ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে খেলতে। যে ম্যাচ নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
• নাম: ফ্রান্সিসকো সেইরুল
• কর্মজীবন শুরু ফিজিক্যাল এডুকেশনের অধ্যাপক হিসেবে।
• ১৯৭৬ সালে স্পেনের বিভিন্ন অলিম্পিক্স দলের সঙ্গে ফিজিয়ো হিসেবে ছিলেন।
• স্পেনের বুলফাইটিং দলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
• বার্সেলোনার হ্যান্ডবল দলের সঙ্গে কাজ করেছেন।
• সেখান থেকে ইয়োহান ক্রুয়েফ তাঁকে ফুটবল দলের সঙ্গে যুক্ত করেন।
• পেপ গুয়ার্দিওলা যখন বার্সেলোনার কোচ ছিলেন, তাঁর সঙ্গেও কাজ করেছেন সেইরুল।
এই অবস্থায় সব চেয়ে বড় প্রশ্ন হল, মেসি কি খেলতে যাবেন? অনুশীলনে সাম্পাওলির দল সাজানো দেখে সাংবাদিকরা মনে করছেন, মেসি ওই ম্যাচে খেলবেন। কারণ, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে দল নামবে, সেই দলকে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে খেলিয়ে দেখতে চান সাম্পাওলি। পাশাপাশি আর্জেন্তিনীয় প্রচারমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আরও দু’টো কারণ উঠে আসছে। এক, মেসি নাকি নিজে আগ্রহী ওই ম্যাচ খেলতে। দু নম্বর কারণ, মেসি খেললে চুক্তি অনুযায়ী তিন লাখ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় দু’কোটি এক লক্ষ ৪৬ হাজার) পাবে আর্জেন্তিনার ফুটবল সংস্থা। যে কারণে মেসিকে খেলানোর ব্যাপারে তাদের বাড়তি আগ্রহ রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy