Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Kolkata Derby

ডার্বির শতবর্ষে ইতিহাসে চোখ দুই প্রধানের, সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে স্মৃতির হাতছানি

কর্পোরেট হাউজের নাম ইস্ট-মোহনের আগে জুড়ে যাওয়ার পরে বদলে গিয়েছে ছবি।

যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২০ ১০:৩০
Share: Save:

মাঠের লড়াইয়ের জন্য অপেক্ষা আর কয়েক ঘণ্টা। কিন্তু তার আগেই উত্তেজনার আঁচ সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিজেদের সংস্কৃতি, দুই প্রধানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরছে দুই প্রধান।

এত দিন দেখা গিয়েছে দুই দলের সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরকে কটাক্ষ করছেন, রসিকতা করছেন। কিন্তু কর্পোরেট হাউজের নাম ইস্ট-মোহনের আগে জুড়ে যাওয়ার পরে বদলে গিয়েছে ছবি।

গোয়ার মাঠে আইএসএল। শহর কলকাতা থেকে যা অনেক দূরে। তার উপরে এ বার করোনাভাইরাসের জন্য ফুটবলাররা কড়া স্বস্থ্য বিধি মানতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রিয় ফুটবলারদের সামনে থেকে দেখতে পাচ্ছেন না সমর্থকরা। তাঁদের কাছে পৌঁছনোর জন্য অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছে ইস্ট-মোহন।

পুরনো স্মৃতি উস্কে দিতে ইস্টবেঙ্গল একের পর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে ফ্যানেদের কাছে। কুইজের উত্তর দিচ্ছেন ফ্যানেরা। কিছুটা বিপক্ষকে মনে করিয়ে দেওয়া যে, ‘দেখে নাও আমরা কী?’ প্রতি পোস্টে তারা বলে দিচ্ছে #ছিলাম_আছি_থাকব। কখনও প্রথম কলকাতা ডার্বিতে নেপাল চক্রবর্তীর গোলে জয়, কখনও আবার ৫-০ গোলে জেতার স্মৃতি। ডার্বি ঘিরে নিজেদের জয়ধ্বনি এ ভাবেই বিপক্ষের শিবিরে পৌঁছে দিচ্ছে লাল-হলুদ। এ যেন অনেকটা ম্যাচে নামার আগেই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দেওয়া। নব্য বিদেশি ফুটবলারদের সামনে নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য ইস্টবেঙ্গল টিম হোটেলের দেওয়ালে প্রাক্তন ফুটবলারদের ছবিও দেখা যাচ্ছে।

বাঘা যতীনের বাসিন্দা স্বপ্নদীপ দাশগুপ্ত প্রতিটি ডার্বিতেই মাঠে থাকেন। ইস্টবেঙ্গলের এই সুপার ফ্যান বলছেন, “ইস্টবেঙ্গলের সব ম্যাচে মাঠে যেতে না পারলেও, ডার্বির দিন অবশ্যই মাঠে যাই। করোনা পরিস্থিতিতে সেটা সম্ভব হচ্ছে না ঠিকই, তবে সোশ্যাল মিডিয়াতে যে ভাবে দলের পুরনো স্মৃতি দেখছি, সেটা খুবই ভাল লাগছে।”

আরও পড়ুন: ‘এগিয়ে থাকবে ইস্টবেঙ্গল’, বলছেন ডার্বি থেকে বেঁচে ফেরা রহিম নবি

মাঠে না যেতে পারার দুঃখ যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার এই প্রচেষ্টাতে ঢাকা সম্ভব নয় বলেই মত আরেক লাল-হলুদ ভক্ত দিব্যেন্দু রায়ের। তিনি বলে, “দুধের স্বাদ ঘোলে মিটবে না। তবে এই অতিমারির সময় তো মাঠে যাওয়া সম্ভব হবে না, তাই সোশ্যাল মিডিয়াই ভরসা।”

প্র্যাকটিস থেকে ইতিহাস, দলের সব কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে যে সমর্থকরা তাদের ভরসা এখন শুধুই সোশ্যাল মিডিয়া।

মোহনবাগানও দেখিয়ে দিচ্ছে, ‘আমরাও কোনও কিছুতে কম নই’। প্র্যাকটিস, দল গঠনের খবর, থিম সং-সহ সব কিছুই তারা তুলে ধরছে সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে। স্মৃতিরোমন্থন চলছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবেও। ডার্বিতে দ্রুততম গোল, সব চেয়ে বেশি বার ফেড কাপ জেতা, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে ৫ গোল দেওয়া... সবই যেন চোখ রাঙানি ফিরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত। মাঠে নামার আগে প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া, দেখে নাও আমাদের ইতিহাস। ইতিহাসই কথা বলছে আমাদের হয়ে।

আরও পড়ুন: ডার্বির আগে অধিনায়কের নাম ঘোষণা করল এসসি ইস্টবেঙ্গল​

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিয় দলের এমন প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাগুইআটির শিবম বাগুই। প্রতি ডার্বিতে সবুজ-মেরুনের হয়ে গলা ফাটানো শিবম বলছেন, “বেশ ভাল লাগছে দলের এমন উদ্যোগে। এ বারে মাঠে বসে খেলা দেখতে পারব না। তবু সোশ্যাল মিডিয়াতে এই প্রচেষ্টা কিছুটা দুঃখ ভুলিয়ে দেয়।”

আরেক মোহনবাগান সমর্থক পিকনিক গার্ডেনের শৌভিক মুখোপাধ্যায়ের গলায় অন্য সুর। তিনি বলেন, “এত দিন পেজটার নাম ছিল এটিকে। সেটাই এখন হয়ে গিয়েছে এটিকে-মোহনবাগান। বিশাল সবুজ-মেরুন সমর্থকদের নিজেদের দিকে টানার প্রচেষ্টা এটা। যে স্মৃতির ছবি পেজে দেখা যাচ্ছে সেগুলো সবই মোহনবাগানের কৃতিত্ব, এটিকে-মোহনবাগানের নয়।”

দুই প্রধানের সমর্থকরাই কিন্তু একটা বিষয়ে একমত— তাদের ছাড়া আইএসএল বেরঙিন। তাদের ছাড়া টুর্নামেন্টের শরীরটাই থাকবে, প্রাণ থাকবে না। আইএসএলে প্রথম ম্যাচ খেলে ফেলেছে মোহনবাগান। সেই ম্যাচ জেতার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্ছ্বাস নজরে এসেছে। ভারতীয় ফুটবলের সব চেয়ে বড় ম্যাচ শুক্রবার। তার আগে দুই দলই পাশে পেতে চাইছে সমর্থকদের। তার চেষ্টাই দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ডার্বির পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরণ আরও বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE