একই মাঠে একই দিনে ভারতীয় ক্রিকেটের উত্থানের কাহিনী লেখা হয়েছিল। কখনও শুরু তো কখনও সাফল্যের ইতিহাস লেখা হয়েছে এই মাঠে। আবার এই মাঠেই উড়েছে সৌরভের জার্সি। এই মাঠেই কপিলের হাতে উঠেছে বিশ্বকাপ। আবার এই মাঠেই ভারতীয় ক্রিকেট প্রথম টেস্ট ক্রিকেটের তকমা পেয়েছে সিকে নাইডুর হাত ধরে। প্রথমটা ১৯৩২ সাল। দ্বিতীয়টি ১৯৮৩। এই দুটো ঘটনাই ঘটেছিল ২৫ জুন।
আরও খবর: বিশ্বকাপের ম্যাচে সেরা স্মৃতি, সচিনেরও অভিনন্দন
আর অপ্রাসঙ্গিক হলেও ইতিহাসে লেখা হয়ে গিয়েছে লর্ডসের ব্যালকনিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জার্সি ওড়ানোর সেই ছবি। যেন দেশের অতীত গর্বকে আরও একবার জানান দেওয়া সঙ্গে চোখে চোখ রেখে বুঝিয়ে দেওয়া পাল্টাটা আমরাও পারি। এত বছর পরও তাই সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মাঠে যখন দেখা যায় ফ্লিনটফকে ঠিক তখনই কমেন্ট্রি বক্সে বসে থাকা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে তাঁর সহযোগী ধারাভাষ্যকার মনে করিয়ে দেন সেই জার্সি ওড়ানোর কথা। টেস্ট ক্রিকেটে হাতেখড়ি হওয়ার ৫১ বছর পর বিশ্বকাপ জয়। তারও ১৯ বছর পর ভারতের কোনও ক্রিকেটার ব্রিটিশদের চোখে চোখ রেখে লর্ডসের ব্যালকনিতে জার্সি উড়িয়ে জানান দেন পাল্টা দিতে তৈরি তাঁরা।
১৯৩২এ ভারতের প্রথম টেস্ট ম্যাচ। লর্ডসে।
শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯৩২এ। লর্ডসের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সিকে নাইডু, ওয়াজির আলি, জাহাঙ্গীর খানরা। যদিও হারের মুখ দেখতে হয়েছিল ভারতকে। ১৫৮ রানে হেরেই টেস্ট ক্রিকেটে পা রেখেছিল ভারতীয় ক্রিকেট। তার পর অনেক ওঠাপড়ার সঙ্গে সাফল্য, ব্যর্থতার কাহিনী লেখা হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে। এসেছে ওয়ান ডে। সেখানেও পা রেখেছে ভারত। ১৯৮৩র এই দিনেই ওয়ান ডের ইতিহাসেও সব থেকে বড় ট্রফি তুলে নিয়েছিল ভারত। বিশ্বকাপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৩ রানে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছিলেন কপিল দেব, সুনীল গাওস্কর, শ্রীকান্ত, মদনলালরা। এর পর ভারতের আবার বিশ্বকাপ পেতে লেগে গিয়েছে ২০১১। কিন্তু ইতিহাসে লেখা থাকবে এই দিন।
১৯৮৩তে বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে কপিল দেব। লর্ডসে।
সে দিন সকাল থেকেই দেশ জুড়ে সাজ সাজ রব। কোথাও বড় বড় জাতীয় পতাকায় ঢেকে দেওয়া হয়েছিল রাস্তার মোর। কোথাও আবার কপিল, গাওস্করদের ছবিতে সেজে উঠেছিল। সেই সময় সবার ঘরে টেলিভিশন ছিল এমনটা নয়। তাই যাঁদের বাড়িতে সেই সুযোগ ছিল সেখানে বসেছিল পিকনিকের আসর। কপিল দেবের নেতৃত্বে বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত। উৎসব তো হবেই। তাই ৩৪ বছর পরও আজকের দিনটি ভারতের কাছে উৎসবের। তার পর আরও অনেক সাফল্যের মুখ দেখেছে ভারত। যে ভাবে ন্যাট-ওয়েস্ট ট্রফিতে লর্ডসের মাটিতে শেষ মুহূর্তে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিজয়োৎসবে মেতেছিল দেশ। যে ভাবে টি২০ বিশ্বকাপ, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশকে টেস্ট ক্রিকেটে হারানো মতো কৃতিত্ব পেয়েছে ভারত।
সেই সময় থেকে এই সময়। বদলেছে ক্রিকেটের অনেক কিছু। নিয়ম থেকে খেলার মানেরও বদল ঘটেছে অনেক। বদলেছে নিয়ম। এসেছে টি২০। সব কিছুর মধ্যেও বেঁচে থাকবে ২৫ জুন। বেঁচে থাকবে সেই দিন। যা আজও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের উৎসবের দিন উপহার দিয়ে চলেছে।
ছবি: সংগৃহীত।