Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কোপা আমেরিকা এক নতুন মেসির জন্ম দিয়েছে

তাঁর বিরুদ্ধে বরাবরের অভিযোগ ছিল‌, দেশের জার্সিতে তিনি না কি ক্লাবের র্ফম দেখাতে পারেন না। অলিম্পিকে সোনার পদক জেতা ছাড়া দেশের হয়ে তাঁর আর কোনও উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত নেই। তবে কোপা আমেরিকায় যেন অন্য মেজাজেই দেখা গেল তাঁকে।

খেলার মাঝে মেসি। ছবি: এএফপি।

খেলার মাঝে মেসি। ছবি: এএফপি।

সোহম দে
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ১২:৪৬
Share: Save:

তাঁর বিরুদ্ধে বরাবরের অভিযোগ ছিল‌, দেশের জার্সিতে তিনি না কি ক্লাবের র্ফম দেখাতে পারেন না। অলিম্পিকে সোনার পদক জেতা ছাড়া দেশের হয়ে তাঁর আর কোনও উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত নেই। তবে কোপা আমেরিকায় যেন অন্য মেজাজেই দেখা গেল তাঁকে। আগ্রাসী, লড়াকু, প্রতিটা মিনিটে উপর-নীচ করছেন, কড়া ট্যাকল করছেন। তিনি— লিওনেল মেসি। প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে শেষ চারেও যিনি প্রমাণ করলেন, কেন বিশ্বফুটবলের সেরা প্রতিভা বলতে তাঁর নামই মাথায় আসে সবার।

এটা জানাই ছিল মেসিকে আটকাতে প্যারাগুয়ে জোনাল মার্কিংয়ের ছকে যাবে। সেটাই হল। যেখানে মেসি, তার পিছন পিছন দু’তিনটে প্যারাগুয়ে ডিফেন্ডার। এক জন ডিরেক্ট মার্কিং করছে। বাকি দু’জন সাপোর্টে যাচ্ছে। তাতে কি মেসির মুভমেন্ট আটকানো যায়! ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে উইংয়ে শুরু করেও ক্রমাগত পজিশন বদলাতে থাকেন মেসি। উইংয়ে যখন জায়গা পাচ্ছেন না, তখন মাঝ মাঠে নেমে খেলার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। ডিপ থেকে খেলেন। ছোট ছোট পাস। চোখ ধাঁধা‌নো ড্রিবল। আর্জেন্তিনার চতুর্থ গোলের সময়ে মেসির ‘নাটমেগ’টা দেখার মতো ছিল। উইংয়ে খেলা ছড়ানো। সব কিছুই করতে থাকেন। সেট পিস থেকে ঠিকা‌‌‌না লেখা পাসও বাড়ালেন।

মেসির খেলার সবথেকে বড় গুণ ওঁর ম্যাচ রিডিংয়ের ক্ষমতা। বিপক্ষের ছক কী হতে পারে, সেটা যেন আগেই অনুমান করতে পারেন এলএম টেন। আর সেই অনু্যায়ী ম্যাচটায় প্রভাব ফেলেন। প্যারাগুয়ে ডিফেন্ডাররা মেসির দিকে মনোযোগ দেওয়ায় বাকি ফুটবলাররা ফ্রি হয়ে যাচ্ছিল। সেটারই ফায়দা তুললেন মেসি। মাঝে মাঝে বল ধরে রেখে যেন‌ প্যারাগুয়ে ফুটবলারদের তাঁকে ট্যাকল করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছিল‌েন। ফলে বাকি ফরোয়ার্ডরা ফ্রি। আর সেই জায়গাগুলোতে পাস বাড়াতে থাকলেন বার্সেলোনা রাজপুত্র। জাভিয়ের পাস্তোরে-আগেরোদের দুর্দান্ত সমস্ত পাস দিচ্ছিলেন। প্যারাগুয়ে ফুটবলারদের উচ্চতা হয়তো মেসির থেকে বেশি, কিন্তু পায়ের স্কিলের তুলনায় পাঁচশো মাইলের মধ্যেও মেসির ধারে-কাছে কেউ নেই। অন্য ম্যাচগুলোয় যেমন মেসি বল পেলেও সাপোর্টে কোনও সতীর্থকে পাচ্ছিলেন না। তবে সেমিফাইনালে মেসি ভাল করেই সাপোর্ট পেলেন। বিশেষ করে মাঝ মাঠ থেকে। যে কারণে মাঝ মাঠের সঙ্গে ফরোয়ার্ডের যোগসূত্র তৈরি করতে সফল হলেন। ফাইনাল থার্ডে এসেও সু্যোগ তৈরি করতে পারলেন।

খেলার শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীতে মগ্ন মেসি। ছবি: রয়টার্স।

দ্বিতীয়ার্ধেও তিনটে জিনিস করলেন। এক, দি’মারিয়ার সঙ্গে জায়গা অদলবদল করলেন। প্রতিটা ম্যাচের পরেই মেসি-দি’মারিয়ার জুটিকে আরও বেশি অনবদ্য দেখাচ্ছে। দুই, হোল্ড আপ প্লে। প্যারাগুয়ে ডিফেন্সের ভিড়ের মধ্যেও বল হারালেন না। আঠার মতোই বলটা যেন লেগে ছিল তাঁর বাঁ পায়ের সঙ্গে। তিন, সাইডব্যাকদের খেলায় আনলেন। আক্রমণে লোক বাড়াতে সুইচ প্লে করে গেলেন। যে কারণে সাইডব্যাকে থাকে রোখো-জাবালেতারাও আক্রমণে যোগ দিলেন। আর একটা হলুদ কার্ড দেখলেই ফাইনালে আর খেলা হত না তাঁর। এই কারণেই হয়তো খুব বেশি কড়া ট্যাকলে গেলেন না।

এই প্রথম আর্জেন্তিনার হয়ে একটা ম্যাচে তিনটে গোলের পাস বাড়ালেন মেসি। বার্সেলোনার হয়ে পুরোপুরি গোল করার দায়িত্ব নিলেও দেশের হয়ে প্লে-মেকারের ভূমিকাটাও নিতে হচ্ছে তাঁকে। মূলত গোল সাজানোর কাজটাই করছেন তিনি। ফরোয়ার্ডে অ‌‌‌‌নেক প্লেয়ার থাকলেও গোল সাজা‌নোর লোক কম। যোগ্য টিম প্লেয়ার হিসাবে সেই অভাবটাও পূরণ করছেন মেসি।

এই সংক্রান্ত আরও:

প্যারাগুয়েকে উড়িয়ে কোপা-স্বপ্নের আরও কাছে আর্জেন্তিনা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

messi copa america soham dey kolkata paraguay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE