Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
রিভার্স সুইং

আটে আট করে এ বার ভারতকে চাই ফাইনালে

এক জন ক্যাপ্টেন নিজের টিমকে কোন উচ্চতায় তুলে নিয়ে যেতে পারে, দেখিয়ে দিল ব্রেন্ডন ম্যাকালাম! ও পুরো টিমটার প্রেরণা। নিউজিল্যান্ডের প্রত্যেক ক্রিকেটার ওকে যে রকম ভালবাসে, ততটাই শ্রদ্ধা করে। ওর মতো হতে চায়। ব্রেন্ডন নিজে অসাধারণ ব্যাটসম্যান। ব্যাটিংটা করে একদম রাজকীয় মেজাজে। আর এমন আক্রমণাত্মক সব ফিল্ডিং সাজায় যা আমি অন্তত আগে কখনও দেখিনি।

রিচার্ড হ্যাডলি
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০৪:১৬
Share: Save:

এক জন ক্যাপ্টেন নিজের টিমকে কোন উচ্চতায় তুলে নিয়ে যেতে পারে, দেখিয়ে দিল ব্রেন্ডন ম্যাকালাম!

ও পুরো টিমটার প্রেরণা। নিউজিল্যান্ডের প্রত্যেক ক্রিকেটার ওকে যে রকম ভালবাসে, ততটাই শ্রদ্ধা করে। ওর মতো হতে চায়। ব্রেন্ডন নিজে অসাধারণ ব্যাটসম্যান। ব্যাটিংটা করে একদম রাজকীয় মেজাজে। আর এমন আক্রমণাত্মক সব ফিল্ডিং সাজায় যা আমি অন্তত আগে কখনও দেখিনি। ভেবে দেখুন, এক দিনের ম্যাচে চারটে স্লিপ, একটা গালি! কিন্তু এটাই ব্রেন্ডন! অবিশ্বাস্য আগ্রাসী এবং জেতা ছাড়া আর কিছু ভাবে না!

এমন ক্যাপ্টেনের হয়ে খেলার সুযোগ পেলে আমি নিজেই বর্তে যেতাম!

সেই ব্রেন্ডন দারুণ তৎপর এক টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্ক্রিপ্টটা লিখেছিল। যে স্ক্রিপ্ট মেনে বিশ্বকাপে সম্ভবত নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সবচেয়ে জাদুকরী মুহূর্তটা তৈরি হল আজ!

এই লেখা নিয়ে বসার সময় ম্যাচ শেষ হওয়ার পর পুরো একটা ঘণ্টাও কাটেনি। আর সত্যি বলতে কী, আমি এখনও একটা ঘোরের মধ্যে। জয়ের হ্যাংওভারটা কিছুতেই কাটছে না! নিউজিল্যান্ডের হয়ে নিজের লম্বা ক্রিকেট কেরিয়ারে টিমকে তাতিয়ে তোলা এমন দর্শক-উন্মাদনা আগে কখনও দেখিনি, যা আজ দেখলাম ইডেন পার্কে। শেষ ওভার পর্যন্ত রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলে ম্যাচটা যতটা নাটকীয় হল, গ্যালারির সমর্থনও ছিল ঠিক ততটাই নাটকীয়! সবচেয়ে বড় কথা, গ্যালারির গলা ফাটানো উৎসাহদানে এক বারও ভাঁটা পড়ল না।

আমাদের জন্য মুহূর্তটা সত্যিই অবিস্মরণীয়! আবেগটাও উপচে গেল যে কারণে। আনন্দে কেঁদে ভাসাল নিউজিল্যান্ড ড্রেসিংরুম। অন্য দিকে, স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যাওয়ার মর্মান্তিক যন্ত্রণায় চোখের জল সামলাতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা, হারলেও যারা মাঠ ছাড়ল বীরের মর্যাদায়। তবে আমার মতে যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে নিউজিল্যান্ড। আজকের যুদ্ধে মাঠে ওরা অনেক বেশি চটপটে, অনেক বেশি ক্ষুধার্ত আর অনেক বেশি নির্মম ছিল। ম্যাচের শেষে এক জন আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, ওই রকম বিস্ফোরক শুরু করে দেওয়ার পর ম্যান অব দ্য ম্যাচের সম্মানটা ব্রেন্ডনেরই প্রাপ্য ছিল না কি? আমার উত্তর ‘না’। ওটা এলিয়টকে দেওয়া একদম ঠিক হয়েছে। কারণ অসম্ভব চাপের মুখে ও-ই সবচেয়ে বেশি লড়াই দেখিয়েছে। নিজের ইনিংস যে রকম বুদ্ধি করে গড়ল, যে সতর্কতায় গ্যাপগুলো বেছে নিয়ে মারল, সর্বোপরি শেষের ওই উইনিং বিগ হিটsssss এক কথায় চাঞ্চল্যকর! দিনের শেষে ওর ওই একটা ছক্কাই কিন্তু দু’টো টিমের মধ্যে ফারাক গড়ে দিয়ে ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে দিল। নিঃসন্দেহে আজকের সেমিফাইনালটাই টুর্নামেন্টের সেরা ম্যাচ। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা এসপার-ওসপার লড়াইয়ে আসল সময়ে মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাচ বের করার জন্য বাকিদের তুলনায় এলিয়টই সেরার সম্মানের সবচেয়ে যোগ্য দাবিদার। ঘটনাচক্রে গ্রান্ট এলিয়ট নিজে দক্ষিণ আফ্রিকান, জোহানেসবার্গে জন্ম। সেই ছেলের মারা ছক্কাতেই তার জন্মভূমির হারাটা বেশ চমকপ্রদ। তবে আমরা, নিউজিল্যান্ডাররা অবশ্য অভিযোগ করছি না!

দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বেশ খারাপ লাগছে। এর পর ‘চোকার’ তকমাটা ভূত হয়ে ওদের তাড়া করেই চলবে। অথচ জোর দিয়ে বলছি, আজ ওরা মোটেই চোক করেনি। উল্টে জান-প্রাণ দিয়ে লড়েছে। আত্মবিশ্বাস বা আবেগ, ওদের কোনওটারই অভাব ছিল না। খান-দুই ক্যাচ ফেলা বাদ দিলে অসাধারণ খেলেছে! তবে আমি গ্যারি কার্স্টেন বা টিম ম্যানেজমেন্টের অন্য কোনও সদস্য হলে এই টিমকে কী বলে সান্ত্বনা দেব বুঝতে পারতাম না। কাজটা অসম্ভব কঠিন। মনে রাখবেন, বাকি সব ক’টা টিম এখানে কাপ জিততে এসেছে। দক্ষিণ আফ্রিকানরা কিন্তু খেলছিল নিজেদের দেশের হয়ে একটা পার্থক্য গড়ে দিয়ে মর্যাদা অর্জন করতে। নিছক একটা ক্রিকেট ম্যাচ জেতার চাপ নয়, ওদের চাপটা ছিল একেবারে অন্য মাত্রার।

টুর্নামেন্টের আগে অমি কিন্তু ভেবেছিলাম এ বার ডে’ভিলিয়ার্সরাই কাপটা নিয়ে যাবে। হিসাব অনুযায়ী ওরাই ছিল টুর্নামেন্টের সেরা টিম। কিন্তু নিজেদের সমস্যাগুলো দারুণ ভাবে লুকিয়ে রেখেছিল। যেমন ডেল স্টেইনের ফিটনেস, যা এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচে বড় ইস্যু হয়ে গেল। পঞ্চম বোলারের অভাবটাও ভোগাল। এ বার ইংল্যান্ড, ২০১৯-এর জন্য ওদের আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। কাজটা সহজ হবে না। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়ামন্ত্রী নাকি টিম দেশ ছাড়ার আগে বলেছিলেন, হেরে ফিরো না! ওই মন্তব্যটা এখন ডে’ভিলিয়ার্সদের চূড়ান্ত অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে বাধ্য। ওদের জন্য সত্যিই আমার মন কাঁদছে। তবে আবার বলছি, আজ ওরা মোটেই চোক করেনি। হারলেও বীরের মতো মাঠ ছেড়েছে।

আমরা এখন খেতাবের থেকে মাত্র এক ম্যাচ দূরে। তবে তাসমান সমুদ্রের ওপারে পরিস্থিতি আর আগের মতো থাকবে না। এমসিজি-র ফাইনালে আমাদের সামনে যদি অস্ট্রেলিয়া পড়ে, তা হলে অবিশ্বাস্য রকমের আক্রমণাত্মক অস্ট্রেলীয় জনতা আমাদের আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে করে দেওয়ার আশায় ওত পেতে থাকবে। নব্বই হাজার দর্শকে ঠাসা এমসিজি-র ফুটন্ত কড়াই আমাদের ছেলেদের ভয় ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এত বিশাল গ্যালারির সামনে খেলার অভিজ্ঞতা ওদের তেমন নেই। কিন্তু এটাও ঠিক, টানা আটটা ম্যাচ দাপটে জিতে ওরা দেখিয়ে দিয়েছে এই টিমটার চারিত্রিক দৃঢ়তা কতখানি। সামনে যে-ই পড়ুক, কাপ জেতার ক্ষমতা ওদের আছে।

তবু দর্শক সমর্থন মাথায় রেখে বলছি, নিউজিল্যান্ড চাইবে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া নয়, প্রতিপক্ষ হোক ভারত!

তবে মন যা-ই চাক, মস্তিষ্ক বলছে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া পরিষ্কার ফেভারিট। মানছি ভারত অসাধারণ খেলছে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সব বিভাগে সমানে সমানে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে। কিন্তু মাইকেল ক্লার্কদের টেক্কা দিতে হলে নতুন বলটা দারুণ ভাবে সামলাতে হবে। অর্থাৎ মিচেল স্টার্ককে মাথায় চড়তে দেওয়া চলবে না। সেটা করে দেখিয়ে বোর্ডে তিনশো প্লাস তুলতে হবে। একমাত্র তা হলেই ভারতের কোনও সুযোগ দেখছি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE