ইডেন। সাতাশির সেই রিলায়্যান্স কাপ ফাইনাল। বিশ্বকাপ হাতে অ্যালান বর্ডার। ফাইল চিত্র।
দেখতে-দেখতে মাঝে ঊনত্রিশটা বসন্ত কেটে গেল।
সাতাশির নভেম্বরে যে ক্রিকেটীয় মহাযজ্ঞকে শহরে বসতে দেখেছিল শীতের কলকাতা, দীর্ঘ ঊনত্রিশ বছর পর তার প্রত্যাবর্তন ঘটছে শহরে। দেশে আবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ। শহরে আবার বিশ্বকাপ ফাইনাল। সময়ের প্রেক্ষাপট এ বার শুধু শীতের নভেম্বর নয়। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ। ফর্ম্যাটও ভিন্ন। পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বযুদ্ধের বদলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কিন্তু পদমর্যাদায় তো দু’টোই এক। দু’টোই বিশ্বকাপ ফাইনাল। দু’টোর স্থানও এক।
ঐতিহ্যের ইডেন গার্ডেন্স।
এবং ঊনত্রিশ বছর বাদেও শহরে বিশ্বকাপ আনার নেপথ্য-ব্যক্তিত্বেও কোনও বদল নেই। যে দুঁদে ক্রিকেট-প্রশাসক শহরকে রিলায়্যান্স বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, সেই একই লোক শোনা গেল ইডেনে দ্বিতীয় বারের জন্য বিশ্বকাপ ফাইনাল আনার পিছনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন। তিনি—জগমোহন ডালমিয়া।
শোনা যায়, সাতাশি ফাইনাল ইডেনে আনার জন্য নানাবিধ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল ডালমিয়াকে। বোর্ডে কোষাধ্যক্ষ পদ পর্যন্ত ছেড়ে দিতে হয়েছিল। বিভিন্ন মহল থেকে ইডেনের বিশ্বকাপ ফাইনাল প্রাপ্তি আটকানোর চেষ্টা হচ্ছিল তখন। কেউ বলেছিলেন, দেশের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ফাইনাল হোক। কেউ বলেছিলেন, দেশের ক্রিকেট-মক্কা মুম্বইয়ে হোক। শেষ পর্যন্ত বলা হয়, কলকাতার আবহাওয়াকে ভরসা কী? ফাইনালে যদি বৃষ্টি হয়? সে বছরই বোর্ড কোষাধ্যক্ষ পদে এসেছিলেন ডালমিয়া। কিন্তু পর্যাপ্ত সমর্থন পেতে সেটা ছেড়ে দিয়েছিলেন বর্তমান বোর্ড প্রেসিডেন্ট। এটাও শোনা যায়, বৈঠকে ঢুকেছিলেন পকেটে বিগত কয়েক বছরে কলকাতায় ওই নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টির চার্ট নিয়ে। হাতেগরম দেখিয়ে দিয়েছিলেন, ওই সময় বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই।
বাধার ‘প্রাচীর’ এ বারও ছিল। মুম্বই-বেঙ্গালুরুও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল চেয়েছিল। মুম্বই যুক্তি পেশ করেছিল যে, তারা ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনাল করেছে। তা হলে এটা কেন নয়? বেঙ্গালুরু বলেছিল, আইপিএল ফাইনালের মতো মেগা-ইভেন্ট করার অভিজ্ঞতা তাদেরও আছে। তারাও সমান দাবিদার। উনত্রিশ বছর আগে বৃষ্টির চার্ট বার করেছিলেন। এ বার একটা প্রেজেন্টেশন পাঠানো হল আইসিসিতে। যেখানে বলা হল, ইডেন একবার নয়। দু’বার বিশ্বকাপে উচ্চপর্যায়ের ম্যাচ করেছে। ’৮৭-এর ফাইনাল করেছে। ’৯৬-এর সেমিফাইনাল করেছে। আইপিএল ফাইনাল এক বার নয়, দু’বার করেছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, জনসমর্থনও একটা ব্যাপার। মেলবোর্নে বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখতে এক লক্ষ লোক এসেছিলেন। ভারতে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মধ্যে দর্শকাসনে ইডেন এক নম্বরে। ষাট-পঁয়ষট্টি হাজার লোকে খেলা দেখতে পারবে। মুম্বইয়ে সেটা সম্ভব নয়। বেঙ্গালুরুতেও নয়। জুনের শেষে বার্বেডোজে আইসিসির অধিবেশনে যে প্রেজেন্টেশন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সিএবি কর্তারাও বলাবলি করছেন, ডালমিয়ার একক প্রচেষ্টাতেই এটা সম্ভব হয়েছে। যুগ্ম সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলে দিলেন, ‘‘এটা প্রেসিডেন্টেরই উদ্যোগ।’’ কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-ও বলছেন, ‘‘ডালমিয়া ছাড়া এটা সম্ভব হত না।’’
আর স্বয়ং বোর্ড প্রেসিডেন্ট তিনি নিজে কী বলছেন ঊনত্রিশ বছর পর শহরে বিশ্বকাপ ফাইনাল আনা নিয়ে? ‘‘ইডেন গার্ডেন্সকে আমি চিরকাল মন্দির মনে করে এসেছি। এটা আমার উপাসনার জায়গা,’’ আনন্দবাজারকে বলে দিলেন ডালমিয়া।
যা খবর, তাতে মুম্বই একটা সেমিফাইনাল পাচ্ছে। দ্বিতীয় সেমিফাইনাল হয়তো নয়াদিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা। মুম্বই, নাগপুর, ধর্মশালা, মোহালি, চেন্নাই, নয়াদিল্লি সব মিলিয়ে আটটা শহরে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ চলবে। চলবে ১১ মার্চ থেকে তেসরা এপ্রিল। উদ্বোধনী ম্যাচ হয়তো ধর্মশালায়। ফাইনাল তো ঘোষণা হয়েই গিয়েছে।
একটা হিসাবও তো মেটানোর আছে। ঊনত্রিশ বছর আগে কপিল-গাওস্করের ভারত প্রবল সম্ভাবনা তৈরি করেও ইডেনে কাপ ফাইনাল খেলতে নামতে পারেননি। ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল। এ বার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলিদের পর্ব। উনত্রিশ বছর আগের অপূর্ণতা ইডেন তার কাপ-ফাইনালের দ্বিতীয় ইনিংসে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে পারে কি না সেটাও তো দেখবে কলকাতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy