Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিরতিতে সঞ্জয়ের টোটকায় বদলে গেল বাগানের চেহারা

অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো কেশর উড়িয়ে লিগ শীর্ষে থাকা মোহনবাগান কি এ বার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে? যে তিন জন বঙ্গ সন্তান কোচ এর আগে বাংলাকে এই ট্রফি দিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বলছেন, এ বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে মোহনবাগানই। সুভাষ ভৌমিক: মোহনবাগানের এ বার যা টিম, তাতে ওরা আই লিগ না পেলে আমি হতাশ হব। চ্যাম্পিয়নশিপের কথা মাথায় না রেখে খেলুক। ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোলেই সাফল্য আসবে। সুব্রত ভট্টাচার্য: মোহনবাগানকে রোখা যাবে না। এই মুহূর্তে ৭০ শতাংশ এগিয়ে ওরা। বাকি ৩০ শতাংশ পথ পেরোনো কঠিন হবে না।

দু’গোল দিয়ে নায়ক। শনিবার সনি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

দু’গোল দিয়ে নায়ক। শনিবার সনি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

তানিয়া রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৬
Share: Save:

মোহনবাগান ২ (সনি ২)

ভারত এফসি ০

অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো কেশর উড়িয়ে লিগ শীর্ষে থাকা মোহনবাগান কি এ বার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে?

যে তিন জন বঙ্গ সন্তান কোচ এর আগে বাংলাকে এই ট্রফি দিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বলছেন, এ বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে মোহনবাগানই।

সুভাষ ভৌমিক: মোহনবাগানের এ বার যা টিম, তাতে ওরা আই লিগ না পেলে আমি হতাশ হব। চ্যাম্পিয়নশিপের কথা মাথায় না রেখে খেলুক। ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোলেই সাফল্য আসবে।

সুব্রত ভট্টাচার্য: মোহনবাগানকে রোখা যাবে না। এই মুহূর্তে ৭০ শতাংশ এগিয়ে ওরা। বাকি ৩০ শতাংশ পথ পেরোনো কঠিন হবে না।

মনোরঞ্জন ভট্টচার্য: টিমটা দুরন্ত ছন্দে রয়েছে। এটা ধরে রাখতে পারলে মোহনবাগানই চ্যাম্পিয়ন হবে।

মোহনবাগানের হাতে এখনও আটটা ম্যাচ। তার মধ্যে ছ’টা আবার অ্যাওয়ে। শনিবার ভারত এফসিকে বধ করে ভারত সফরে বেরোবেন বোয়া, সনি, বলবন্তরা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তাঁদের টানা পাঁচটা ম্যাচ খেলতে হবে। আর এই পাঁচ ম্যাচের উপরই বাগানের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভাগ্য অনেকখানি নির্ভর করছে। ফুটবলাররা যাতে বাড়তি চাপে না পড়েন, তাই মোহন কোচ ফুটবলারদের সামনে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের কোনও বোর্ড ঝুলিয়ে দিচ্ছেন না। তবে এ দিন জোড়া গোল করে বাগানকে জেতানোর নায়ক সনি নর্ডি বলে দিলেন, ‘‘টানা পাঁচটা অ্যাওয়ে ম্যাচের সব ক’টা অপরাজিত থাকতে চাই। তার তিনটি জিততেই হবে।’’

বাগানের পাখার ঝাপটায় রহিম নবিদের টিমকে মাটিতে আছড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন সঞ্জয়। সনির চোখ ধাঁধানো গোলের পরও অবশ্য বলতে হবে প্রথমার্ধে কোচের স্ট্র্যাটেজি অনুাযায়ী খেলতেই পারেনি সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। বরং সে সময় ভারত এফসি ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে রেখেছিল। সঞ্জয় এ দিন ৪-৪-১-১ স্ট্র্যাটেজিতেই টিম সাজিয়েছিলেন। পাল্টা ভারত এফসি পুরোটাই ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলে। স্টুয়ার্ড ওয়াটকিসের আসল লক্ষ্য ছিল, ফানেল তৈরি করে কাতসুমিদের আক্রমণকে ভোঁতা করা। পাশাপাশি বোয়াদের আটকাতে অভিজ্ঞ চার ডিফেন্ডারকে ব্যবহার করেছিলেন তিনি—মেহরাজউদ্দিন, গৌরমাঙ্গি, নবি এবং জারুন। এর মধ্যে জারুন ছাড়া বাকি তিনজনেরই কলকাতার দু’প্রধানে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

বিরতিতে ড্রেসিংরুমে চেতলার বঙ্গসন্তানের পেপটকে অবশ্য বদলে যায় বাগানের শরীরী ভাষা। সনিদের এমন কী বলেছিলেন সঞ্জয়? ‘‘তোমরা যেমন খেলছ, তার চেয়ে আরও একটু ভাল খেলো। পাসগুলো ঠিক করে করো। আর উইং দিয়ে বারবার আক্রমণের ঝড় তুলে ওদের স্ট্র্যাটেজি এলোমেলো করে দাও।’’ ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বোধহয় এটাই যথেষ্ট ছিল। শেষ পঁয়তাল্লিশ মিনিট মোহন কোচের এই নব স্ট্র্যাটেজিতেই সাফল্য আসে বাগানে। এ দিন মোহনবাগানের দু’টি গোলই হয়েছে উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে। সনির প্রথম গোলের আগে অবশ্য একটি পেনাল্টি দেননি তামিলনাড়ুর রেফারি শ্রীকৃষ্ণা। ভারত এফসির জারুন পেনাল্টি বক্সের ভেতর বলবন্তকে ফেলে দেন। পরিষ্কার ফাউল। তবে সেই পেনাল্টি না পেয়েই যেন দ্বিগুণ তেতে চায় বাগান ফুটবলাররা। নিট ফল, ঘটনার পাঁচ মিনিটেই সনির দুরন্ত গোল।

লাজং এফসি ম্যাচে গোল না পাওয়ার হতাশা আর আক্ষেপ যেন এ দিন কিছুটা হলেও মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন হাইতির স্ট্রাইকার। যদিও এ দিন তিনি একশো শতাংশ ফিট ছিলেন না। প্রথম গোলটার সময় দু’জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে একক দক্ষতায় ডান পায়ের শটে তিনি মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন। বলবন্তের সেন্টার থেকে পরের গোলটাও বেশ ভাল। এটি অবশ্য গ্যালারিতে বসে থাকা স্ত্রীকে উৎসর্গ করেন সনি। ম্যাচের পর ভারত এফসির কোচ ওয়াটকিস স্বীকার করে নেন, ‘‘সনির মতো একজন স্ট্রাইকার ছিল বলেই আমরা হেরে গেলাম।’’

চৈত্র মাস শেষের মুখে। নব বর্ষের আগমনী বাজতে শুরু করেছে। বাংলার নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে সঞ্জয় আর তাঁর টিমকে ঘিরে। ১২ ম্যাচ খেলে মোহনবাগানের পয়েন্ট ২৮। ১৩ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে চারে পুণে এফসি। ১৩ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে দুই এবং তিনে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি এবং রয়্যাল ওয়াহিংডোর থেকেও এই মুহূর্তে অনেকটাই এগিয়ে সঞ্জয়ের টিম।

দেখার, সুভাষদের পথে চতুর্থ বঙ্গ সন্তান কোচ হিসেবে সঞ্জয় বাংলাকে আই লিগ দিতে পারেন কি না!

মোহনবাগান: দেবজিৎ, ধনচন্দ্র, বেলো, আনোয়ার, প্রীতম, ডেনসন (বিক্রমজিৎ), সনি, শেহনাজ, কাতসুমি (রাম), বোয়া (শৌভিক), বলবন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE