Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সিস্টেমও হার মানল অচেনা মেসির কাছে

দু’টো প্রশ্ন নিয়ে ম্যাচটা দেখতে বসেছিলাম। দেখার ইচ্ছা ছিল, প্যারাগুয়ে ম্যাচের পরে কি আদৌ ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছে আর্জেন্তিনা? লিওনেল মেসিকে আটকাতে বা কোন নতুন চালটা দেবেন অস্কার তাবারেজ যা আগে দেখা যায়নি?

উরুগুয়ে কোচের ‘চক্রব্যূহ’ স্ট্র্যাটেজিও আটকাতে পারল না।

উরুগুয়ে কোচের ‘চক্রব্যূহ’ স্ট্র্যাটেজিও আটকাতে পারল না।

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

আর্জেন্তিনা ১ (আগেরো)

উরুগুয়ে ০

দু’টো প্রশ্ন নিয়ে ম্যাচটা দেখতে বসেছিলাম। দেখার ইচ্ছা ছিল, প্যারাগুয়ে ম্যাচের পরে কি আদৌ ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছে আর্জেন্তিনা? লিওনেল মেসিকে আটকাতে বা কোন নতুন চালটা দেবেন অস্কার তাবারেজ যা আগে দেখা যায়নি?

মেসি আর আর্জেন্তিনাকে আটকাতে অনেক কিছুই ভেবে এসেছিলেন তাবারেজ। ফিজিকাল ফুটবল। কড়া ট্যাকল। জায়গা ছোট করে দেওয়া। প্রতি-আক্রমণের খেলা। মাঝমাঠের সঙ্গে ফরোয়ার্ড লাইনের যোগসূত্র কেটে দেওয়া। আফসোস, সব কিছুর নিটফল হল শূন্য। কারণটা তো ওই আর্জেন্তিনার ছোট্টখাট্টো ফুটবলারটা। একার হাতেই পুরো উরুগুয়ের গেমপ্ল্যান নষ্ট করে দিল মেসি। প্রমাণ করে দিল, আধুনিক ফুটবলে এক জন কোচ যতই স্ট্র্যাটেজি কষে আসুন না কেন, ব্যক্তিগত প্রতিভার সামনে কখনও কখনও সিস্টেম কাজ আসে না।

ম্যাচটা অনেকের কাছে খুব বোরিং মনে হতে পারে। মনে হতে পারে দুই দলে যখন এত ভাল ফুটবলার আছে, তখন গোল কম হল কেন। নব্বই মিনিট শেষে বলব ম্যাচটা আমাকে একটা দাবার লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দিল। দু’জন কোচই খুব সতর্ক হয়ে খেলার চেষ্টা করেছেন। ‘একটা গোলে সন্তুষ্ট থাকব’ মানসিকতা নিয়েই খেলতে নেমেছিল দু’টো টিম।

শুরুর থেকেই খুব বেশি আক্রমণে যায়নি উরুগুয়ে। বরং আর্জেন্তিনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছিল নিজের হাফে আসার। যাতে প্রতি-আক্রমণে সমস্যায় ফেলতে পারে। মাঝমাঠ থেকেই লোক বাড়িয়ে দিচ্ছিল। যাতে সেন্ট্রালি আর্জেন্তিনা কোনও ফাঁকা জায়গা না পায়। উইংয়ে গিয়ে ক্রস দিতে বাধ্য হয়। প্রথমার্ধে সেই স্ট্র্যাটেজি কাজেও এলো। তার মধ্যেই দু’একবার যখন লিওনেল মেসি বল পেল, ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল আর্জেন্তিনাকে। তাও ওর বাড়ানো ভাল ভাল ক্রসগুলোর সুযোগ নিতে পারল কোথায় আগেরো-পাস্তোরে?

দ্বিতীয়ার্ধে উরুগুয়ে অবশ্য আক্রমণাত্মক শুরু করে। রোমেরো একটা দুর্দান্ত শট না বাঁচালে তখনই হয়তো আর্জেন্তিনা পিছিয়ে পড়ত। কলকাতার আবহাওয়া যেমন দ্রুত পাল্টাচ্ছে, ম্যাচটার ছবিও হঠাত্ করেই পাল্টে গেল। প্যারাগুয়ের সঙ্গে দেখেছিলাম, দ্বিতীয়ার্ধে মেসি যেন হারিয়ে গিয়েছিল ম্যাচটা থেকে। এ দিন উল্টোটা হল। ম্যাচটা আস্তে আস্তে ধরে নিল মেসি। ওর পিছনে থাকার জন্য এডিনসন কাভানির মতো স্ট্রাইকারকে মিডফিল্ডে নেমে খেলতে হয়েছে। গঞ্জালেজ, পেরেরা, লোদেরো, রদ্রিগেজ সবার একটাই কাজ ছিল— মেসিকে বল ধরতে দিও না। কিন্তু তাতে কি মেসির মতো কোনও ফুটবলারকে শান্ত রাখা যায়? সারাক্ষণ জায়গা পাল্টাতে থাকল। মাঝে মাঝে যেমন উইথড্রল রোলে মাঝমাঠে নামল। আবার অনেক সময় উইং থেকে কেঁটে ভিতরে ঢুকল।

মেসির খেলার আসল দিকটা হচ্ছে উইথ দ্য বল দক্ষতা। বলটা একবার পেয়ে গেলে যেন ছাড়তেই চায় না। অদ্ভূত একটা বল কন্ট্রোল। আঠার মতো পায়ের সঙ্গে লেগে থাকে। বারবার পজিশন পাল্টানোয় কেউ ওকে মার্ক করতে পারেনি। মেসি গোটা ম্যাচটায় সোজাসুজি মুভমেন্ট খুব কম করেছে। বল পেয়ে ডান দিক-বাঁ দিক চলে যাচ্ছিল। যাতে ফরোয়ার্ডে থাকা ফুটবলারদের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করতে পারে। আগেরোকে বল সাপ্লাই করতে পারে। আবার হোল্ড আপ প্লে-তেও ওকে ফুল মার্কস দেব। তিন-চারজনকে ড্রিবল করে শটগুলো টার্গেটে রাখছিল। ছোট পাস খেলে আক্রমণ তৈরি করে যাচ্ছিল। গোলের মুভমেন্টটাও মেসির পা থেকে। মেসি পাস দিলেন পাস্তোরেকে। পাস্তোরে থেকে জাবালেতা। জাবালেতার ক্রস আগেরো-কে। আগেরোর হেডে গোল। উরুগুয়ে এর পরে দু’একটা ভাল সুযোগ পেলেও গোল করতে পারেনি। হয়তো লুই সুয়ারেজ থাকলে ম্যাচের ফল অন্য রকম হলেও হতে পারত।

উরুগুয়ের ছক ছিল ফিজিকাল ফুটবল খেলা। আর্জেন্তিনা যত বার বল পাচ্ছিল, পেরেরা-কাভানিরা ট্যাকল করে মুভটা শেষ করেছে। উরুগুয়ের এই শক্তিটাকে তাদের দুর্বলতা বানিয়ে দিল মেসি। ইচ্ছা করেই উরুগুয়ের ডেঞ্জার জোনে বল হোল্ড করছিল, যাতে ওরা ট্যাকলে যায়। এর ফলে আর্জেন্তিনার দখলে যেমন বলটা বেশি থাকছিল, তেমনই উরুগুয়েনরা ট্যাকল করায় মেসিদের সেট পিস সুযোগও তৈরি হচ্ছিল।

মেসির মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন দেখলাম। মাঠে মেসিকে সব সময় শান্ত মেজাজে দেখা যায়। কিন্তু উরুগুয়ের বিরুদ্ধে একটা আগ্রাসী মেজাজ দেখলাম ওর মধ্যে। প্রতিটা বলের জন্য লড়াই করল। আবার উরুগুয়ের ফুটবলারদের সঙ্গে প্রায় হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়ল। এমনকী দেখলাম, সতীর্থদের উপরও মাঝে মাঝে রেগে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি, ও কতটা মরিয়া দেশের হয়ে একটা ট্রফি জিততে।

আর্জেন্তিনা জিতলেও বলব ওদের দলের রক্ষণটা কিন্তু দুর্বল। মেসির সঙ্গে দি’মারিয়া ছাড়া বাকি ফরোয়ার্ডদেরও আরও বেশি করে কম্বিনেশন তৈরি করতে হবে। দলে একটা ‘মেসি’ আছে বলে তার উপরেই সব কিছু চাপিয়ে দিলাম, এই মনোভাব থাকলে কিন্তু বিপদে পড়তে হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE