Advertisement
E-Paper

দেখে গেলাম এক নয়া শক্তির উদয়

পরনে আইজল এফসি-র সাদা জার্সি। স্মার্টফোনে মাঝে মাঝেই চোখ বুলিয়ে ভদ্রমহিলা জেনে নিচ্ছিলেন মোহনবাগানের ম্যাচের ফল। তাঁর টিম তখন লাজং-এর কাছে ০-১ পিছিয়ে! আর রবীন্দ্র সরোবরে ১-১।

দীপেন্দু বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৭ ০৩:৪৮
স্বপ্নভঙ্গ: জিতেও এল না আই লিগ। হতাশ সনি নর্দে। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

স্বপ্নভঙ্গ: জিতেও এল না আই লিগ। হতাশ সনি নর্দে। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

পরনে আইজল এফসি-র সাদা জার্সি। স্মার্টফোনে মাঝে মাঝেই চোখ বুলিয়ে ভদ্রমহিলা জেনে নিচ্ছিলেন মোহনবাগানের ম্যাচের ফল। তাঁর টিম তখন লাজং-এর কাছে ০-১ পিছিয়ে! আর রবীন্দ্র সরোবরে ১-১।

আমাদের কলকাতা হলে নির্ঘাৎ বাছা বাছা সব গালাগাল এই সময় ভেসে আসত গ্যালারি থেকে। কিন্তু লাজং-এর গ্যালারিতে আইজল এফসি-র সমর্থকরা গলা ফাটিয়ে গাইছিলেন, ‘‘ট্রা-লা-লা-লা-রে-লা, আইজল এফসি।’’ দ্বিতীয়ার্ধে আইজল গোল শোধ দিয়ে ১-১ করতেই বেড়ে গেল সেই গানের আওয়াজ।

লাজং এফসি-র কর্ণধার লারসিং মিং-এর মা আমার পাশে বসে এ সব কাণ্ড দেখে হাসছিলেন। রেফারি প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই লাজং কর্তার মা বললেন, ‘‘তোমাদের মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ডার্বির চেয়েও কিন্তু কোনও অংশে কম নয় আমাদের ডার্বি। আমার টিম হেরে গেলেও আজ খুব আনন্দ হচ্ছে। এই প্রথম আই লিগ এল আমাদের নর্থ-ইস্ট-এ।’’ উল্টোদিকে আইজল সমর্থকদের গ্যালারিতে তখন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস শুরু হয়ে গিয়েছে।

ব্যক্তিগত কাজে পরের রবিবার আমার শিলং যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইজল-এর এই রূপকথার দৌড় দেখব বলে এ দিনই চলে এসেছিলাম শিলংয়ে। বিমানবন্দর থেকে হোটেলে যাওয়ার পথেই দেখছিলাম একের পর এক বাস ঢুকছে শিলংয়ে। আর তাতে ভর্তি আইজল সমর্থক। বাসে টাঙানো পতাকা, ফেস্টুন। শহরে এত ভিড় যে হোটেলে কোনও ঘর খালি নেই। শেষমেশ লাজং এফসি-র কর্ণধার লারসিং মিং-কে ফোন করে স্টেডিয়ামে ঢোকার টিকিট পেলাম।

আইজল কোচ খালিদ জামিল-কে মহীন্দ্রা ইউনাইটেডে খেলার দিন থেকে চিনি। জানি ও শৃঙ্খলাপরায়ণ। তুকতাক বিশ্বাস করে। কোচ হিসেবে ওর একটা তুকতাক হল, ম্যাচ চলাকালীন জল খেতে খেতে খেলা দেখা। সেটা আজও দেখলাম। অবাক লাগছে এটা ভেবে যে, এক বছর আগেও আমার যে বন্ধু লেস্টার সিটি নিয়ে রাতে ফোনে গল্প করত, সে আজ নিজেই ভারতের লেস্টার সিটির জন্ম দিল আই লিগে। আর এই পুরো কৃতিত্বটাও খালিদের। ম্যাচ শেষে ধন্যবাদ জানিয়ে সে কথা বলতেই হেসে উঠল আই লিগ চ্যাম্পিয়ন কোচ। তৃপ্তির হাসি দেখতে পেলাম ওর মুখে। স্বপ্নপূরণের হাসি।

আরও পড়ুন: রূপকথার উত্থান, শূন্য থেকে শিখরে আইজল

অথচ, ওদের এ বারের আই লিগ খেলার কথাই ছিল না। অবনমনের আতঙ্ক থেকে কোনওরকমে খেলার সুযোগ পেয়ে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা অবিশ্বাস্য ঘটনা! এর চেয়ে বড় ম্যাজিক ভারতীয় ফুটবল কোনও দিন দেখেছে কি না সন্দেহ। তা-ও আবার এমন এক কোচের অধীনে, যার চাকরিই ছিল না মরসুমের শুরুতে। স্থানীয় কিছু তরুণ ফুটবলার। তিনটে মুম্বইয়ের ছেলে। কলকাতা লিগে খেলে যাওয়া তিনটে মাঝারি মানের বিদেশি। তারাই কি না হেভিওয়েটদের মাটিতে ফেলে চ্যাম্পিয়ন!

যেটা দেখাল ওদের কোচ খালিদ জামিল। ওকে এখনই জাতীয় কোচ করা হোক। ভারতীয় ছেলেদের নিয়ে দেশের ফুটবল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য খালিদের চেয়ে যোগ্য লোক খুঁজে পাচ্ছি না এই মুহূর্তে।

অভিনন্দন, আইজল এফসি!

Dipendu Biswas Aizawl FC I League Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy