Advertisement
E-Paper

ট্রফি আসবেই, নিশ্চিত ছিলেন চেন্নাই কোচ

আই লিগে ইতিহাস তৈরির পর কোয়েম্বত্তূরের স্টেডিয়ামের দু’প্রান্তে দেখা গেল দু’রকম দৃশ্য!  

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৮

আই লিগে ইতিহাস তৈরির পর কোয়েম্বত্তূরের স্টেডিয়ামের দু’প্রান্তে দেখা গেল দু’রকম দৃশ্য!

কোচ আকবর নাওয়াসকে শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে চেন্নাই সিটি এফ সি-র পেন্দ্রো মানজ়িরা যখন উৎসবে ডুবে, তখন দেখা গেল কার্ডের জন্য গ্যালারিতে বসে থাকা নেস্তর গার্দিয়োও মাঠে নেমে এসে কাঁদছেন। দলের অপরিহার্য স্প্যানিশ মিডিয়োর পাশে দাঁড়িয়ে দু’হাতে মুখ ঢেকেছেন জোড়া গোল করে ম্যাচের সেরা গৌরব বোরাও। তাঁর চোখেও যে স্বপ্ন ছোঁয়ার আনন্দ।

চেন্নাই সিটি ৩ • মিনার্ভা ১

দক্ষিণ ভারত থেকে লিগের ইতিহাসে প্রথম দল হিসাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের মুহূর্তের এই দৃশ্যেগুলোর কোলাজই বলে দিচ্ছিল চেন্নাইয়ের সাফল্যের রসায়ন।

ম্যাচের পর ফোনে ধরা হলে চেন্নাই কোচের গলাতেও সেই দলগত সাফল্যের জয়গান। ‘‘আমাদের দলের বিদেশিরাই স্থানীয় ছেলেদের তৈরি করে নিয়েছে। সে জন্যই স্প্যানিশ মানজ়ি টুনার্মেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও এ দিন ম্যাচের সেরা হয়েছে গৌরব। যে আমার দলের রক্ষণের ফুটবলার। অসমের এই ছেলেটা পুরো টুর্নামেন্টে একটা গোলও করেনি। এ দিন দুটো গোল করেছে। গৌরবের গোলেই কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হয়েছি আমরা।’’ সাংবাদিক সম্মেলন যাওয়ার তাড়ার সঙ্গে স্টেডিয়াম জুড়ে আবেগের ঢেউ। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চলছিল যা। তার মধ্যেই সিঙ্গাপুর নিবাসী আকবর নাওয়াসের শান্ত গলা থেকে বেরোয় সাফল্যের আরও রহস্য। ‘‘জানেন আমরা কোনও বিদেশিকেই এজেন্টের মাধ্যমে নিইনি। মার্চ থেকে জুন শুধু ফুটবলার খুঁজেছি। আমি আর দলের প্রাক্তন স্প্যানিশ সহকারী জর্ডি ভিয়া নিজেরা গিয়ে বেছে এনেছি মানজ়ি, নেস্তর গর্দিয়োদের। এরা সবাই স্পেনের তৃতীয় বা চতুর্থ ডিভিশনে খেলত। জীবনে প্রথমবার দেশের বাইরে এসেছে ওরা।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আমার এ দিনের দলের ১৮ জনের মধ্যে ১০ জনই ছিল তামিলনাড়ুর ছেলে। ভূমিপুত্র। এডইউন সিডনি, প্রভিতো রাজু বা আলেকজান্দার রোজারিও সব নতুন ছেলে। সারা রাজ্য থেকে প্রতিশ্রুতিমানদের বেছেছি। ওরা এ বার ভারতীয় ফুটবলের আলোয় এসে পড়ল। এটাই বিরাট তৃপ্তি আমার।’’

চেন্নাইয়ের ফুটবলারদের সাত দিনের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন কর্তারা। সব ফুটবলার ফিরলে একটি অনুষ্ঠান করে আকবর নাওয়াসের দলের হাতে ট্রফি তুলে দেবে ফেডারেশন। এ দিন ট্রফি না পেলেও ইংরেজিতে ‘আমরাই চ্যাম্পিয়ন’ লেখা বিশাল ব্যানার নিয়ে আর বরফের টুকরোর মতো ‘ফোম বৃষ্টি’ দিয়েই উৎসব হল নতুন চ্যাম্পিয়নদের। সঙ্গে পুড়ল বাজিও।

মিনার্ভা পঞ্জাবের কাছে শুরুতেই গোল খেয়ে ৫৬ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে ছিলেন, চাপে পড়েননি? ট্যাম্পাইন রোভার্সের মতো দলকে কোচিং করিয়ে আসা চেন্নাই কোচের গলায় আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ে। ‘‘একেবারেই চাপ ছিল না। বহু ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও আমরা জিতেছি। আমি জানতাম আমাদের দলের যা চরিত্র সেটা খেতাব জেতার ম্যাচেও বজায় থাকবে। ছেলেরা বাড়তি উদ্যম নিয়ে ফিরবে। বিরতিতে শুধু বলেছিলাম নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকতে। নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখতে। জানতাম ট্রফি জিতবই।’’ কবে বুঝতে পেরেছিলেন খেতাব আসতে পারে? ‘‘মোহনবাগান ম্যাচের পরই বুঝে গিয়েছিলাম এ বার খেতাব নিয়ে ভাবা যেতে পারে।’’ লিগের কুড়ি ম্যাচের মধ্যে সব থেকে কঠিন ম্যাচ কোনটা ছিল? ভূমিপুত্রদের নিয়ে ভারতীয় ফুটবলে নবজাগরণ আনা আকবরের জবাব, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে দুটি ম্যাচ। ওদের দলটা সত্যিই ভাল। খুব

ভাল খেলেছে।’’

খেতাব জয়ের লড়াইয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল। তারাও তো গোকুলমের সঙ্গে খেলছিল। ওই ম্যাচের ফল জানার চেষ্টা করছিলেন? আই লিগ জেতা নতুন বিদেশি কোচের গলায় ধরা পড়ে নির্লিপ্ততা, ‘‘বিশ্বাস করুন। একবারের জন্যও খোঁজ নিইনি। একটাই তো অঙ্ক ছিল, ম্যাচ জিততে হবে। অন্য ম্যাচের ফলের দিকে তাকাব কেন?’’ আরও বললেন, ‘‘যেখানে আমরা জিতলেই চ্যাম্পিয়ন, সেখানে আর কিছু ভাবার জায়গাই কোথায়! খেলা শেষ হতেই কে যেন এসে বলল, ইস্টবেঙ্গলও জিতেছে।’’

মিনার্ভার কোচ জানিয়ে দিলেন, এখন তিন দিন বিশ্রাম নেবেন। ‘‘সুপার কাপ নিয়ে পরে ভাবব। আই লিগ শেষ। তিন দিন বিশ্রাম নেব। তারপর ভুবনেশ্বরের কথা ভাবব। ছেলেরা সবাই অনেক পরিশ্রম করেছে। ওরা আনন্দ করুক।’’ বলতে বলতে তৃপ্তির সাগরে ডুবে যান আকবর নাওয়াস।

তৃপ্তি তো পাবেনই। খালিদ জামিল, খগেন সিংহর পর তিনিও যে প্রমাণ করে ছাড়লেন—নতুন দল তৈরি করেও চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়। আইজল, মিনার্ভা পঞ্জাবের মতো এ বারের চেন্নাইও যে টেক্কা দিয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী দুই ক্লাবকে।

Chennai City FC I League 2018-19 Minerva Punjab FC Akbar Nawas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy