Advertisement
E-Paper

‘বিদেশে জেতার জন্য আমরা তৈরি’

বিবাহবার্ষিকীতে আনন্দাশ্রু চোখে হাততালি দেওয়া স্ত্রীর সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা দেশে। ওয়ান ডে ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক করে বিশেষ উপহার। এর পর টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড স্পর্শ করা। স্বপ্নের ফর্ম থেকে শুরু করে আসন্ন আফ্রিকান সাফারির চ্যালেঞ্জ, স্ত্রীর আবেগপূর্ণ সমর্থন— সব কিছু নিয়ে খোলামেলা হিটম্যান। দক্ষিণ আফ্রিকার উড়ান ধরলেন গভীর রাতে। তার আগে বুধবার সকালে মুম্বইয়ের বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে রোহিত শর্মা একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার-কে। বিবাহবার্ষিকীতে আনন্দাশ্রু চোখে হাততালি দেওয়া স্ত্রীর সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা দেশে। ওয়ান ডে ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক করে বিশেষ উপহার।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:১৫
দৌড়: ২০১৭-য় সোনার দৌড় চলেছে তাঁর। রোহিত শর্মা এ বার তাকিয়ে নতুন বছরের দিকে। ফাইল চিত্র

দৌড়: ২০১৭-য় সোনার দৌড় চলেছে তাঁর। রোহিত শর্মা এ বার তাকিয়ে নতুন বছরের দিকে। ফাইল চিত্র

প্রশ্ন: রোহিত শর্মা কি জীবনের সেরা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন?

রোহিত শর্মা: হ্যাঁ, এটা বলতেই পারি। পুরো বছরটাই দারুণ গিয়েছে। আরও ভাল লাগছে কারণ, গত বছরটা প্রায় খেলতেই পারিনি। চোটের জন্য বেশির ভাগ সময়টা বাইরে ছিলাম। খুব হতাশ লাগত সেই সময়টায়। সেই কারণে এই বছরটায় যতটা সম্ভব সাফল্য চেয়েছি।

প্র: ২০১৭ নিয়ে আপনি বেশ খুশি, বলা যায়?

রোহিত: হ্যাঁ, বলতে পারেন। বেশি আনন্দ পেতাম যদি আরও টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারতাম। সে সব নিয়ে আক্ষেপ করতে চাই না। সব মিলিয়ে ২০১৭ বেশ ভালই গিয়েছে। এখন আমি ২০১৮-র দিকে তাকিয়ে। আরও সাফল্য চাই নতুন বছরে।

প্র: এটাই কি নিউ ইয়ার রেজোলিউশন? আরও সাফল্য?

রোহিত: নিউ ইয়ার রেজোলিউশন নিচ্ছি, বলব না। নতুন বছর মানেই নতুন চ্যালেঞ্জ। সেগুলোর মোকাবিলা করতে চাই। রেজোলিউশন রাখা মানেই নিজের উপর বাড়তি চাপ এনে ফেলা। সেটা করতে চাই না (হাসি)।

প্র: নতুন বছরের চ্যালেঞ্জ বলতে কিন্তু সবই বিদেশের মাটিতে পরীক্ষা।

রোহিত: আমরা জানি। আমাদের টিম জানে সেটা। ২০১৮ বছরটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টির ফর্ম টেস্টেও দেখাতে চাইব। তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে, টেস্ট ক্রিকেট ফর্ম্যাট হিসেবে একেবারে আলাদা। ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টির মতো নয় যে, ক্রিজে গিয়ে ইচ্ছা মতো শট খেলা যাবে। টেস্টে পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলাকে পাল্টাতে হয়,পাঁচ দিনের খেলা বলে চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি। পাশাপাশি, এটাও বলতে চাই যে, টেস্টে সফল হওয়ার জন্য আমি সব কিছু করতে তৈরি। যদি আট ঘণ্টা পরিশ্রম করলে না হয়, তা হলে দশ ঘণ্টা খাটব। আপাতত ফোকাসটা দক্ষিণ আফ্রিকার উপর। আমি ওখানে আগে খেলেছি। জানি, আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে। উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছি সেই চ্যালেঞ্জের দিকে।

যুগলবন্দি: ভারতীয় ক্রিকেটের তারকা জুটি, রোহিত ও বিরাট। ফাইল চিত্র

প্র: আপনার নিজের বিশ্লেষণটা কী? কেন ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টির সাফল্য টেস্টে দেখা যায়নি?

রোহিত: স্বীকার করে নিতে চাই, অতীতে আমি নিজে সুযোগ হারিয়েছি। এমন মোটেও নয় যে, আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। তবে আমি খুব পজিটিভ মানুষ। সামনের দিকে ইতিবাচক ভঙ্গি নিয়ে তাকাতে চাই। পিছন ফিরে তাকিয়ে আর প্রশ্ন করতে চাই না যে, কেন বেশি টেস্ট খেললাম না? আমি নিশ্চিত, অতীতে যা-ই ঘটুক না কেন, সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

প্র: ক্রিস গেলের মতো শক্তিশালী না হয়েও আপনি ছক্কার ঝড় তোলেন। শিল্পের ছোঁয়ায় কী করে এতটা ধ্বংসাত্মক হতে পারেন?

আরও পড়ুন: বিজয়নের শুভেচ্ছা নাওরেমকে

রোহিত: এটা এক দিনে হয়নি। খুব সহজাত ভাবেই আমার ব্যাটিংয়ে ছিল। ক্রিকেটে ব্যাপারটা কিন্তু শুধুই জোরে বল মারা নয়। ঠিক লাইনে হিট করতে হয়। আমি জোরে বল মারতে চাই না। ১২০ মিটার ছক্কা মারার তো দরকার নেই। ৮০ মিটার মারলেই হয়। ১২০ মিটার মেরে তো আট রান পাওয়া যাবে না (হাসি)। সেই তো ছয় রানই আসবে। সেই থিওরিটা আমি ব্যাটিংয়ের সময় মনে রাখি। ব্যাটিংয়ে আসল হচ্ছে টাইমিং।

প্র: এই যে দেশ-বিদেশের ফর্মুলা, এটাকে আপনি কী ভাবে দেখেন?

রোহিত: ঘরের মাঠে জিতলেই লোকে বলে, এ আর কী এমন ব্যাপার, নিজেদের দেশে জেতার মধ্যে কী আর বাহাদুরি! আমি এটা মানি না। আমি মনে করি, প্রত্যেকটা জয়ই গুরুত্বপূর্ণ। সে দেশের মাঠে হোক কী বিদেশে। কিন্তু এটা ঠিক যে, বিদেশের মাঠে জিতলে বেশি আনন্দ হয় কারণ, একটা দলকে তাদের ডেরায় গিয়ে হারিয়ে আসছি। টিম হিসেবে এই ভারতীয় দল সেটা করে দেখাতে চায়। অতীতে আমরা কিছু ভুল করেছি। সেগুলোকে শুধরে নিতে চেষ্টার ত্রুটি রাখব না আমরা।

প্র: দক্ষিণ আফ্রিকা টিম হিসেবে কেমন? আপনি কি বিশেষ কোনও প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছেন?

রোহিত: আমাদের প্রস্তুতিটা শুরু হবে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে। দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের দেশে সবচেয়ে বিপজ্জনক দল এবং টিম হিসেবে খেলে। ওদের দলে দারুণ কিছু ম্যাচউইনার রয়েছে। আমরা জানি, কাজটা মোটেও সহজ হবে না। কিন্তু চ্যালেঞ্জের জন্য আমরা তৈরি।

প্র: বিবাহবার্ষিকীর দিন আপনি যখন ডাবল সেঞ্চুরিটা করলেন, স্ত্রী রিতিকার চোখে আনন্দাশ্রু খুব আবেগপূর্ণ একটা দৃশ্য হয়ে থাকল। আপনার জীবনে রিতিকার ভূমিকা নিয়ে বলুন।

রোহিত: রিতিকা আমার জন্য প্রচুর আত্মত্যাগ করেছে। টেস্ট ম্যাচ থাকলে আমি যদি ভোর ছ’টায় উঠে পড়ি, তা হলে রিতিকাকেও তা-ই করতে হয়। আমার যে-কোনও সাফল্যের পিছনে ওর প্রচুর অবদান। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, বোঝাপড়া। রিতিকা খুব ভাল বোঝে, কখন কী রকম মানসিক অবস্থানে আমি রয়েছি। বড় কোনও সফরের আগে যখন আমি মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি, ও ঠিক ধরতে পারে কী চলছে আমার মনের মধ্যে। সেই মতো সাহায্য করে যাতে আমি ভাল ভাবে চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হতে পারে। মাঠে আমার সাফল্যটাই লোকে দেখে, এই ব্যাপারগুলো দেখা যায় না। মাঠে যদি আমি ভাল কিছু করি আর গ্যালারিতে রিতিকা থাকে, তা হলে আমার কাছে বিশেষ একটা মুহূর্ত হয়ে থাকে। সেটাই হয়েছিল সে দিন। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম ভাল অ্যানিভার্সারি গিফ্‌ট দিতে পেরে।

প্র: আপনার সাম্প্রতিক ফর্ম দেখে বিরাট কোহালির সঙ্গে তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে...

রোহিত: (থামিয়ে দিয়ে) বিরাটের সঙ্গে আমার কোনও প্রতিযোগিতা নেই। আমি সতীর্থদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামি না, আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রতিপক্ষের সঙ্গে। আমার নিজের সঙ্গে লড়াই থাকতে পারে যে, আগের ম্যাচে ১০০ করেছি তো এ বার ১৫০ করতে হবে। আরও ভাল খেলতে হবে। কিন্তু সতীর্থদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই যে, ও সেঞ্চুরি করল তো আমাকে ডাবল সেঞ্চুরি করতে হবে। বিরাট আর আমি দু’জনেই স্বপ্ন দেখি, ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। টিম ইন্ডিয়ার ক্রিকেটার হিসেবে আমার যেমন দায়দায়িত্ব আছে, তেমনই আছে বিরাটের। আমাদের লক্ষ্যটা এক— দেশের হয়ে ম্যাচ জেতা। তুলনা হওয়াটা মোটেও সমর্থন করি না।

প্র: আপনার অধিনায়কত্বও বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এমন কেউ আছেন যাঁর নেতৃত্বের ধরন আপনাকে প্রভাবিত করেছে?

রোহিত: আমাকে খুব প্রভাবিত করেছে রিকি পন্টিংয়ের ক্রিকেট দর্শন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে রিকি-কে আমি পেয়েছি মেন্টর হিসেবে এবং যে আগ্রাসী ভঙ্গি নিয়ে ও প্রত্যেকটা ম্যাচ জিততে চাইত, সেটা আমার দারুণ লেগেছে। আমি এস এস ধোনির ক্যাপ্টেন্সিরও বড় ভক্ত। দুরন্ত রেকর্ড। ক্রিকেটের সমস্ত গৌরব ভারতে এসেছে ওর অধিনায়কত্বে। কী ভাবে কঠিন সময়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়, ওর থেকে ভাল কে শেখাতে পারবে!

প্র: ধোনিকে যে সমালোচনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে, সেটা নিয়ে আপনার কী মনে হয়?

রোহিত: অবাক হয়ে যাচ্ছি দেখে। আর ভাবছি, এত কম স্মৃতিশক্তি কী করে হতে পারে? ২০১৭ সালটা তো ভালই গিয়েছে এম এস ধোনির। অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। ধর্মশালাতে আমরা সকলে আউট হয়ে যাওয়ার পরেও একা লড়াই করে গেল। শ্রীলঙ্কাতেও দু’টো ম্যাচ জিতিয়েছে। সমালোচকরা চান, ক্রিকেটাররা ধারাবাহিকতা দেখাক। আমরাও ধারাবাহিকতা চাই সমালোচকদের থেকে। তিনটে ম্যাচ দেখে বলবেন না, তিন মাসের পারফরম্যান্স দেখে মন্তব্য করুন।

প্র: আচ্ছা, এই যে বলা হয়, রোহিত শর্মা অসাধারণ এক প্রতিভা, ওঁর ততটা পরিশ্রমের দরকার হয় না— এটা আপনি কী চোখে দেখেন?

রোহিত: এটা বাজে কাগজের ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার সময় হয়েছে। প্রতিভা ভারতীয় দলের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে। তার পরে টিকে থাকতে গেলে পরিশ্রমই একমাত্র পথ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যেকটা রানের পিছনে কী রকম পরিশ্রম আর অধ্যবসায় দরকার হয়, সেটা শুধু খেলোয়াড়রাই জানে।

প্র: এখন লক্ষ্য কী?

রোহিত: ব্যক্তিগত কোনও লক্ষ্য নেই। যা আছে, টিম হিসেবে লক্ষ্য। সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দল হিসেবে আরও উচ্চ শৃঙ্গ জয় করতে চাই। দেশের হয়ে ম্যাচ জিততে চাই।

Rohit Sharma Virat Kohli Ravi Shastri Indian Cricket Team South Africa Tour Cricket Exclusive Interview
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy