Advertisement
E-Paper

ইস্টবেঙ্গল ছাড়া নিয়ে মুখ খুলে বিস্ফোরক মর্গ্যান

এক সপ্তাহ আগে ইস্টবেঙ্গল কোচের পদ থেকে তাঁর আচমকা ইস্তফা শোরগোল ফেলে দিয়েছিল ময়দানে। কিন্তু লাল-হলুদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখে কলুপ এঁটেছিলেন। নিঃশব্দে ফিরে যান অস্ট্রেলিয়া। অবশেষে মুখ খুললেন। সোমবার দুপুরে পার‌্থ থেকে ট্রেভর জেমস মর্গ্যান ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার-কে। এক সপ্তাহ আগে ইস্টবেঙ্গল কোচের পদ থেকে তাঁর আচমকা ইস্তফা শোরগোল ফেলে দিয়েছিল ময়দানে। কিন্তু লাল-হলুদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখে কলুপ এঁটেছিলেন।

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:০০
সোজাসাপ্টা: কর্তাদের দিকে পাল্টা তোপ দাগলেন মর্গ্যান। ফাইল চিত্র

সোজাসাপ্টা: কর্তাদের দিকে পাল্টা তোপ দাগলেন মর্গ্যান। ফাইল চিত্র

প্রশ্ন: গত ১৬ এপ্রিল শিবাজিয়ান্স ম্যাচে হারের পরেও পদত্যাগের দাবি উড়িয়ে দিয়েছিলেন। হঠাৎ কী হল যে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত বদলে ফেললেন?

ট্রেভর জেমস মর্গ্যান: পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আমি শিবাজিয়ান্স ম্যাচের আগের দিনই নিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু ফুটবলারদের মনোবলে আঘাত লাগবে বলে কাউকে জানাইনি। ঠিক করেই রেখেছিলাম, ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদারকে ই-মেলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেব।

প্র: সিদ্ধান্ত যদি আগেই নিয়ে থাকেন, তা হলে সেটা ম্যাচের পর সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করলেন না কেন?

মর্গ্যান: ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু তখনও পর্যন্ত ক্লাব সচিবকে পদত্যাগপত্র পাঠাইনি। তাই সাংবাদিক বৈঠকে ইস্তফার কথা ঘোষণা করাটা অনৈতিক হতো।

প্র: শিলিগুড়ি ডার্বিতে হারের পর থেকেই ‘গো ব্যাক মর্গ্যান’ দাবি তীব্র হয়েছে। সমর্থকদের জন্যই কি আপনি ক্লাব ছাড়লেন?

মর্গ্যান: একেবারেই না। আর একটা কথা বলি। সে দিন সমর্থকদের বিক্ষোভ কতটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার।

প্র: কী বলছেন?

মর্গ্যান: ঠিকই বলছি। আগের দিনই টিম ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছিলাম, ১৪ এপ্রিল ক্লোজ্ড ডোর প্র্যাক্টিস করাব। তা হলে কী ভাবে মাঠে ঢুকল এই সব লোকরা? বিক্ষোভের পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও কোনও নিরাপত্তারক্ষী কেন ছিল না? বড় কোনও দুর্ঘটনাও তো সে দিন ঘটে যেতে পারত।

আরও পড়ুন: বিরাটদের দল গঠন নিয়ে প্রশ্ন

প্র: তা হলে ইস্তফার কারণ কী?

মর্গ্যান: সহকারী ওয়ারেন হ্যাকেট-কে যে ভাবে বরখাস্ত করা হল, তা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ওকে আমিই ইস্টবেঙ্গলে এনেছিলাম। গত ২৭ মার্চ ক্লাবের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছিল, তাতেও একবারের জন্য হ্যাকেটের প্রসঙ্গ ওঠেনি। পরের দিন খবরের কাগজ পড়ে জানতে পারলাম ওকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। যুক্তি দেওয়া হল, ফেডারেশন ওকে নির্বাসিত করেছে বলে শাস্তি দিচ্ছে ক্লাব। আমার প্রশ্ন, একই অপরাধের জন্য কত বার শাস্তি দেওয়া হবে হ্যাকেট-কে? ক্লাব চাইলে তো চার্চিল ম্যাচের পরেই ওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারত। ৫-৬ সপ্তাহ পরে তা নেওয়া হল কেন? তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আর থাকব না।

প্র: হ্যাকেট-কে সরানোটাই কি একমাত্র কারণ?

মর্গ্যান: অবশ্যই নয়। একাধিক কারণ আমাকে বাধ্য করেছে ইস্টবেঙ্গল ছাড়তে।

প্র: আর কী কী কারণ আছে?

মর্গ্যান: চেন্নাই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচের পর আই লিগে লম্বা বিরতি ছিল। ফুটবলারদের তাই ছুটি দিয়েছিলাম। সেই সঙ্গে বলে দিয়েছিলাম, ২৭ মার্চ সোমবার থেকে অনুশীলন শুরু হবে। শনিবারের মধ্যে তোমাদের দলে যোগ দিতে হবে। কিন্তু চেন্নাই ম্যাচের দিন সকালে সচিব ই-মেল করে জানালেন, সকলের ছুটি বাতিল। যারা অনুশীলনে যোগ দেবে না তাদের মাইনে কেটে নেওয়া হবে। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। কী হচ্ছে এ সব? কোচ আমি। আর সচিব কি না সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কবে থেকে অনুশীলন হবে! ডার্বির ঘটনা তো আরও মারাত্মক।

প্র: কী রকম?

মর্গ্যান: শিলিগুড়িতে ম্যানেজার হিসেবে যিনি (তপন দাস) গিয়েছিলেন, হাইটাইমের সময় তাঁকে দেখলাম মোবাইল ফোনে ম্যাচ নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, ফোনের অপর প্রান্তে কোনও শীর্ষ কর্তা ছিলেন। ফোন রেখেই ম্যানেজার আমাকে বোঝাতে শুরু করলেন, কাকে তুলে কাকে নামানো উচিত। টেকনিক্যাল বিষয়ে ওঁর পরামর্শ আমি শুনব কেন?

প্র: আই লিগে ব্যর্থতার জন্য কিন্তু আপনাকেই দায়ী করা হচ্ছে। কারণ, এই মরসুমে ফুটবলার নির্বাচন আপনিই করেছিলেন।

মর্গ্যান: কে বলল ফুটবলার নির্বাচন আমি করেছি? একমাত্র রবিন সিংহ-কে আমি রিক্রুট করেছিলাম। বাকিদের কাউকে আমি আনিনি। ব্যর্থতার দায় তো সব সময় কোচকেই নিতে হয়। আমিও নিচ্ছি।

প্র: তার মানে মরসুমের শুরুতে দল গঠন নিয়ে কর্তারা আপনার সঙ্গে আলোচনা করেননি?

মর্গ্যান: করেছিলেন। আমি ফুটবলারদের তালিকা তৈরি করেও দিয়েছিলাম। যখন জিজ্ঞেস করলাম, আমার দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ফুটবলাররা কোথায়? উত্তরে ওঁরা বলেছিলেন, প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ওরা অন্য ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছে।

প্র: ক্রিস্টোফার পেন-কেও আপনি আনেননি?

মর্গ্যান: না, আমি আনিনি। ইল্দার আমিরভের পরিবর্ত হিসেবে আমার পছন্দ ছিল কেরল ব্লাস্টার্সের সেদ্রিক হ্যাঙবার্ট। ওর সঙ্গে আমার পাকা কথাও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দেখলাম সই করল পেইন। অনেকেই হয়তো জানেন না, চার বিদেশির কাউকেই আমি আনিনি।

প্র: ভবিষ্যতে কি ইস্টবেঙ্গলে ফেরার কোনও সম্ভাবনা আছে?

মর্গ্যান: এই মুহূর্তে সেই সম্ভাবনা দেখছি না। গত তিন বছরে ছ’জন কোচ বদল হয়েছে ইস্টবেঙ্গলে। কর্তারা কিন্তু থেকেই গিয়েছেন। অদূর ভবিষ্যতেও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। আপাতত আমি পরিবারে সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। তার পরে নতুন চাকরির খোঁজ করব।

Trevor Morgan Interview East Bengal Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy