Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ধোনি-সৌরভ তুলনায় ঢুকব না, উত্তরটা বায়াসড লাগবে

নির্বাচকদের আইন দেখিয়ে কেন বাঁচিয়েছিলেন ধোনিকে? শ্রীনি লাইন মেনে না চললে সত্যিই কি লোকজন ব্রাত্য হয়ে যায়? আড়াই বছর বাদে প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রথম সাক্ষাৎকারে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন মুখ খুললেন গৌতম ভট্টাচার্যের সামনে। আজ শেষ কিস্তি।নির্বাচকদের আইন দেখিয়ে কেন বাঁচিয়েছিলেন ধোনিকে? শ্রীনি লাইন মেনে না চললে সত্যিই কি লোকজন ব্রাত্য হয়ে যায়? আড়াই বছর বাদে প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রথম সাক্ষাৎকারে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন মুখ খুললেন গৌতম ভট্টাচার্যের সামনে। আজ শেষ কিস্তি।

যাঁদের তুলনা শ্রীনিকেও অস্বস্তিতে ফেলেছে

যাঁদের তুলনা শ্রীনিকেও অস্বস্তিতে ফেলেছে

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

প্র: অন্য অনেক দেশ হলে সমান্তরাল ভাবে ধোনির এক জন প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি রেখে দিত।

শ্রীনিবাসন: না, না। প্রশ্নই নেই। ওর সবচেয়ে বড় গুণ হল, মানুষ হিসেবে ভীষণ বিশ্বাসী। খুব স্ট্রেট ফরোয়ার্ড। আর সৎ। যে ভাবে ও ভাবে, কঠিনতম পরিস্থিতিতেও নিজের ওপর আস্থা রাখে, তাতে অভিভূত না হয়ে উপায় নেই।

প্র: কিন্তু অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডে গিয়ে ০-৮ হারার পর তো নেতৃত্বে বদল হতেই পারত। শোনা যায়, আপনি সেটা হতে দেননি।

শ্রীনিবাসন: (কোনও উত্তর নেই। মুখে একটা হালকা হাসি।)

প্র: এমনও শোনা যায় যে চেন্নাইয়ের বৈঠকে নির্বাচকেরা ধোনিকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলেন। কিন্তু আপনি নাকি সেখানে হঠাৎ করে আবির্ভূত হয়ে যান। সত্যি কথা?

শ্রীনিবাসন: সত্যি কথা। বিশ্বকাপ জেতার ক’মাস পরে যখন আমরা অস্ট্রেলিয়াতে একটা টেস্ট ম্যাচ হেরে যাই, তখন ওরা ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন্সি থেকে ওকে সরাতে চাইছিল। এরই কয়েক মাস বাদে আমরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যাই এবং জিতি। ওকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা কত ঠিক ছিল, এটা থেকেই পরিষ্কার।

প্র: চেন্নাইয়ের সেই বৈঠকে আপনি নাকি হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে নির্বাচকদের রুল বই ছুড়ে বলেছিলেন, দেখে নাও বিদেশে-স্বদেশে টিম চূড়ান্ত হওয়ার আগে প্রেসিডেন্টের অনুমতি দরকার। আর আমি মোটেও অনুমতি দিচ্ছি না।

শ্রীনিবাসন: রুল বই ছুড়ে মারিনি। তবে পয়েন্ট আউট করি। আর দেখিয়ে দিই নিয়মে কী আছে। আমার মনে হয়েছিল এটা ধোনি কোনও মতেই ডিজার্ভ করে না।

প্র: ক্রিকেট-অনুরাগী হিসেবে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে ধোনির নেতৃত্বে ভারত কেমন করবে বলে মনে হয়?

শ্রীনিবাসন: ক্রিকেট-অনুরাগী হিসেবে আমি চাই ভারত জিতুক। তবে একই সঙ্গে আমার মনে হয় বিশ্বকাপটা এ বার খেলা হচ্ছে একেবারে অন্য রকম পরিবেশে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। খুব টাফ। তবে আমি ইন্ডিয়া ভাল করছে, এই আশাতেই বসে রয়েছি।

প্র: কখন আপনার বেশি টেনশন হয়? যখন আইপিএল ফাইনালে সিএসকে চাপে, নাকি যখন ভারত চাপের মুখে পড়েছে?

শ্রীনিবাসন: যখন ভারত খেলছে।

প্র: আমাদের অনেকের কাছেই ২০১১ বিশ্বকাপের সেরা মুহূর্ত হল, ধোনি জয়সূচক ছক্কা মেরে ব্যাটটা ঘোরাচ্ছেন। আপনার গত বিশ্বকাপে প্রিয় মুহূর্ত কোনটা?

শ্রীনিবাসন: ওই ধোনির ছক্কাটাই। দ্য লাস্ট সিক্সার আর তার পর ওর অ্যাটিটিউডটা।

প্র: এত ক্রিকেটারের সঙ্গে মেশেন, এত দিন ধরে দেখছেন, কারও কাছ থেকে এমন কোনও মানসিক প্রবণতা ধার করেছেন যা পরে আপনার ব্যবসায় কাজে লেগেছে?

শ্রীনিবাসন: এত দেখেটেখে আমার মনে হয়েছে আউটস্ট্যান্ডিং ক্রিকেটারদের মধ্যে কম-বেশি কিছু কমন গুণ থাকেই। যেমন দীর্ঘ সময় ধরে কনসেনট্রেশন। অবিরত ফোকাস। আর অসম্ভব সঙ্কল্প যে এটা আমি করেই ছাড়ব।

প্র: আপনি অধিনায়ক ধোনির খুব প্রশংসা করছিলেন। অন্তত ভারতের পূর্বপ্রান্তে অনেকেই আপনার বিশ্লেষণের সঙ্গে পুরো অংশে একমত হবে না। অনেক অস্ট্রেলীয় নক্ষত্রও না। তারা মনে করে ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টিতে যদি ধোনি রাজা অধিনায়ক হন, তা হলে টেস্ট ক্রিকেটের সেরা নেতা হলেন সৌরভ।

শ্রীনিবাসন: (হাসি) এই রে! আমাকে আবার এ সব নিয়ে প্রশ্ন-টশ্ন করবেন না।

প্র: আপনার রায় কার দিকে?

শ্রীনিবাসন: এ সবের মধ্যে আমার ঢোকা ঠিক হবে না।

প্র: কেন?

শ্রীনিবাসন: এই সব বিতর্ক চলবেই। দু’জনের মধ্যে কে বেশি ভাল একা হাতে সেটার সমাধান পাবলিকই আপনা করে দেবে। প্রশাসকদের এতে মতামত দেওয়া ঠিক নয়।

প্র: কিন্তু আপনি তো এক জন ভরপুর ক্রিকেট অনুরাগী। শুনেছি ইন্ডিয়া সিমেন্টসের খেলা দেখার জন্য অনেক সময় রোদ্দুরে গাছের তলায় একা বসে দেখেন। নিজের পদের বাইরে এসে বলুন না ক্যাপ্টেন হিসেবে কাকে বেশি ভাল লাগে?

শ্রীনিবাসন: না, না সেটা বলা ঠিক হবে না। আমি যে উত্তরই দিই না কেন, সেটা বায়াসড মনে হতে পারে।

প্র: যুবরাজ সিংহের চিকিৎসার পুরো টাকা যেমন বোর্ড বহন করেছে। তেমনই আবার পছন্দসই ক্রিকেটার না হলে আপনার আমলে তারা সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে পড়েছে। কমন অভিযোগ যে, শ্রীনির বোর্ডের অফিশিয়াল লাইন মেনে না চললে, তারা দ্রুত ব্রাত্য হয়ে যাবে। যেমন মোহিন্দর। যেমন বেঙ্গসরকর। যেমন সৌরভ।

শ্রীনিবাসন: এটা একদমই মানলাম না। এটা বলা খুব আনফেয়ার হল। বেঙ্গসরকরকে অনেক আগে একটা বেনিফিট দেওয়ার পর আমরা আবার এককালীন বেনিফিট দিয়েছি। মোহিন্দরকেও দিয়েছি এককালীন বেনিফিট। এক বার যারা বেনিফিট পেয়েছে, তাদের কিন্তু ওয়ান টাইম বেনিফিট আবার পাওয়ার কথা নয়। তা সত্ত্বেও দিয়েছি।

প্র: আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে আপনি চাকার ধরার তীব্র প্রক্রিয়া চালু করেছেন। এই উদ্যোগটা কিন্তু সবাই স্বাগত জানাচ্ছে।

শ্রীনিবাসন: হু।ঁ

প্র: অনেকেই জানতে চায়, এখনকার চাকাররা তো ধরা পড়ছে। প্রবাদপ্রতিম যে সব চাকার বিশ্বরেকর্ড-টেকর্ড নিয়ে বসে আছে, তাদেরটা কি কেড়ে নেওয়া হবে?

শ্রীনিবাসন: (মুখে স্মিত হাসি) যা ঘটে গিয়েছে, ঘটে গিয়েছে। এখন সামনের দিকে তাকানোই ভাল। ইউ শুড লুক ফরোয়ার্ড।

প্র: এত ডামাডোল, সুপ্রিম কোর্টের খাঁড়া আর টালমাটালের মধ্যেও আপনার টিম আর নম্বরের অঙ্ক ঠিক থেকে যায়। অঙ্কের হিসেবে আপনি শুধু আগেই থেকে যান না, বিরোধীদের প্রায় টেনিস ম্যাচের মতো হারিয়ে দেন ৬-২,৬-৩।

শ্রীনিবাসন: (হাসি) আরে, আমি এক সময় টেনিসে চেন্নাইয়ের ইউনিভার্সিটি ক্যাপ্টেন আর র‌্যাঙ্কড জুনিয়র প্লেয়ার ছিলাম।

প্র: আপনার কর্মপদ্ধতির আর একটা রহস্যময় দিক হল, নিজের টিমটাকে অক্ষত রেখে দিতে পারা। শত ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যেও আপনার ‘কোর’ টিমটা অক্ষত থেকে গিয়েছে।

শ্রীনিবাসন: ক’জন জানে যে ভারতীয় সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে ওয়েজ এগ্রিমেন্ট ফর কালেক্টিভ বার্গেনিং-এর ঝকমারিটা গত বাইশ বছর ধরে আমি সামলাচ্ছি। ভারতের সমস্ত ইউনিয়নের ফেডারেশন সেখানে থাকে। আমি বসি গোটা সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির তরফে। একা বসে পুরো ব্যাপারটা শান্তিপূর্ণ ডিল করি। কী করে হয়?

প্র: এই যে এত বিতর্ক, ব্রেকিং নিউজ আর আদালতের খাঁড়া— আপনার ঘুম নষ্ট হয় না?

শ্রীনিবাসন: আমি সব সময়ই সামনের দিকে কী করব সেটা নিয়ে ভাবতে চেয়েছি। যেটা এখুনি ঘটে গেল, সেটাকে পিছনে রেখে সামনে এগিয়ে গিয়েছি।

প্র: ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাস আপনাকে কী ভাবে মনে রাখবে বলে মনে হয়?

শ্রীনিবাসন: আসলে যে সব লোক আমাকে জানে, চেনে আর বোঝে, তারা বলবে আমি মানুষটা এ ভাবে ভাবিই না। আমি আমার কাজ করি। সামনে এগিয়ে যাই। কে কী আমার সম্পর্কে ভাববে, কী ভাবে মনে রাখবে সেগুলো আমার চিন্তাতেও আসে না। আই জাস্ট ডু মাই জব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE