শেষ রাউন্ডে নিখুঁত অনির্বাণ লাহিড়ী। (ডান দিকে) আগাস্টার নতুন চ্যাম্পিয়ন জর্ডান স্পিয়েথ। ছবি: এএফপি।
জাদুকরের টুপিতে যেমন লুকিয়ে থাকে একের পর এক চমক, আগাস্টার কোর্সটাও নাকি ঠিক সেই রকম! যে কারণে নিজের সবচেয়ে পছন্দের কোর্স বাছতে বললে উত্তর দিতে তাঁর এক মুহূর্তও লাগল না। ‘‘অবশ্যই আগাস্টা। ঢেউ খেলানো ওই সবুজ ঘাসের একটা নিজস্ব ম্যাজিক আছে!’’সেই জাদুকরি কোর্সে মাস্টার্স অভিষেকেই অনির্বাণ লাহিড়ীর কাট পেয়ে ৪৯তম স্থানে শেষ করাকে, ‘‘ফ্যানটাস্টিক’’ বললেন তিন বার মাস্টার্সে খেলা জীব মিলখা সিংহ।
আগাস্টা মাস্টার্সের শেষ রাউন্ডে কোনও শট না খুইয়ে পার ৭২ স্কোর করে এশিয়ার এক নম্বর গল্ফার অনির্বাণ আফসোস করেছেন, ‘‘আজ মনে হচ্ছিল, হয় বলটা শেষ মুহূর্তে ডজ মেরে গর্তে না পড়ে সরে যাচ্ছে, নয় হোলটা একটু সরে গিয়ে আমার শটগুলো এড়াচ্ছে!’’ যা শুনে এ দিন টেলিফোনের ও প্রান্তে জীব মিলখা সিংহের গলায় উত্তেজনা। বললেন, ‘‘আরে আগাস্টার এটাই তো মজা! এই কোর্স কখন কী করবে, আগাম কিচ্ছু বুঝতে দেয় না! যতবার খেলবেন, মনে হবে নতুন কোর্সে নেমেছেন।’’ এটা কোর্সের মাটি আর ঘাসের বিশেষত্ব, বলছিলেন জীব। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম দিন মাটি যত ঝুরো আর ঘাসে বল গড়ানোর গতি যা থাকে, সেটা ক্রমশ বদলায়। টুর্নামেন্ট এগনোর সঙ্গে মাটি এঁটে গিয়ে ক্রমশ কঠিন হয়। বলের স্পিডও বেড়ে যায়। ওখানে প্রথম বার নেমেই এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া খুব কঠিন। অনির্বাণের সেই সমস্যাই হল। তবু অভিষেকেই কাট পাওয়া ফ্যানটাস্টিক অ্যাচিভমেন্ট!’’
জীব ২০০৭-এ নিজের মাস্টার্স অভিষেকে শেষ করেন ৩৭তম স্থানে। তার পরের বছর যুগ্ম ২৫ হয়ে। সেই অভিজ্ঞতা টেনে বললেন, ‘‘আগাস্টায় প্রতি রাউন্ডে স্ট্র্যাটেজি বদলাতে হতে পারে। ওখানে যে তিন বার খেলেছি, কোর্সটা তিন রকম আচরণ করেছিল। অনির্বাণের তো সবে প্রথম বছর!’’
জীব বলছিলেন, ‘‘সময়ের ফারাকের জন্য অনির্বাণের সব ক’টা রাউন্ড দেখা হয়নি। তবে মাস্টার্স খেলবে জানার পর তাইল্যান্ডে আমার সঙ্গে ওর লম্বা আলোচনা হয়েছিল।’’ ঠিক কী টিপস দেন ভাঙলেন না। শুধু বললেন, ‘‘গল্ফারকে পরামর্শ তো অনেকেই দেয়। সে নিজে তার কতটা কাজে লাগাতে পারল সেটাই আসল। আর এ ব্যাপারে অনির্বাণকে আমি ফুল মার্কস দেব।’’ দ্বিতীয় রাউন্ডে কাট পেলেও এলোমেলো খেলেছিলেন অনির্বাণ। পরে স্বীকার করেন, ফোকাস ধরে রাখা সমস্যা হচ্ছিল। জীব অবশ্য বলছেন, মাস্টার্সের মঞ্চে এটা হতেই পারে। ‘‘ওখানে পরিবেশটাই যাকে বলে হাই বাজ্! মিডিয়ার হইচই, বিশ্ব সেরাদের ভিড়, প্রচুর দর্শক। সব মিলিয়ে একটু চাপে ফেলে। গল্ফারকে চেষ্টা করে এর থেকে মনকে দূরে সরিয়ে নিয়ে নিজস্ব জোন-এ ঢুকে পড়তে হয়। আমার ধারণা অনির্বাণ সেটা পেরেছে। তাই পরের দু’টো রাউন্ডে উন্নতি করেছে।’’
তেতাল্লিশের জীব এর পর সাতাশের অনির্বাণকে ‘‘গুড কিড’’ বলে যোগ করলেন, ‘‘অনির্বাণের বড় সুবিধা, বয়সের তুলনায় পরিণত আর মাথাটা দারুণ ঠান্ডা। মাস্টার্সের অভিজ্ঞতা থেকে ও ইতিবাচক জিনিসগুলোই নেবে। আত্মবিশ্বাসটাও পাবে যে হ্যাঁ, আমার স্থান এখন বিশ্বসেরাদের সঙ্গেই।’’ এবং জোর দিয়ে বলছেন, পরের বার আরও ভাল করবেন অনির্বাণ। জীবের কথায়, ‘‘কোর্সটা দেখে নিল। শট ম্যানেজমেন্ট এ বার আরও ভাল হবে। প্রস্তুতিও আরও জোরদার। একটু সময় দিন। পরের বার মাস্টার্সে কিন্তু চমকে দিতে পারে অনির্বাণ!’’
অনির্বাণ শেষ করলেন ঊনপঞ্চাশে
শেষ দিন সতর্ক খেলে ঊনপঞ্চাশতম স্থানে নিজের মাস্টার্স অভিষেক শেষ করলেন অনির্বাণ লাহিড়ী। শেষ রাউন্ডে কোনও শট না খুইয়ে তাঁর স্কোর পার-৭২। প্রথম রাউন্ডের ৭১ স্কোরের পর তাঁর দ্বিতীয় সেরা রাউন্ড। তবে মাস্টার্সে ঊনপঞ্চাশ তম হওয়ায় বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে তিনি এক ধাপ নেমে এখন পঁয়ত্রিশ নম্বর। এ দিকে, দ্বিতীয় আবির্ভাবেই আগাস্টায় তোলপাড় তুলে সবুজ জ্যাকেট জিতে নিলেন একুশ বছরের মার্কিন জর্ডান স্পিয়েথ। প্রথম দুই রাউন্ডে মেজরের আসরে বিশ্বরেকর্ড স্কোর করে কাট পেয়েছিলেন। শেষ দিন ১৯৯৭-এ টাইগার উডসের গড়া ১৮-আন্ডার ২৭০ স্কোরের টুর্নামেন্ট রেকর্ড স্পর্শ করে উঠে এলেন বিশ্বের দু’নম্বরে। জাস্টিন রোজ, ফিল মিকেলসনের মাপের চ্যাম্পিয়নদের চাপ সামলে জিতলেন চার শটে। সঙ্গে ১৮ লক্ষ ডলারের বিজয়ীর চেক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy