প্র্যাকটিসে ধোনি। মঙ্গলবার।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রিয় অধিনায়কের ছবি সদর্পে পোস্ট করে দিচ্ছেন সুরেশ রায়না। সমালোচকদের জ্বলুনি বাড়িয়ে তলায় লিখে দিচ্ছেন ‘রেসপেক্ট’।
আক্রমণের দাঁত-নখ বার করে ফেলা ভারতীয় সাংবাদিকদের এক ঝটকায় নখদন্তহীন করে দিয়ে চলে যাচ্ছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ‘ক্যাপ্টেন বললে মাঠে জীবন দিতে পারি’ সদম্ভে ঘোষণা করে!
মোহিত শর্মারা নাকি বুঝে পাচ্ছেন না, দেশের সর্বকালের অন্যতম কিংবদন্তি অধিনায়ককে কী করে এমন টেনে নামাতে পারে দেশজ মিডিয়া। দেশকে এত সাফল্য দেওয়ার পরেও কী করে তারা তীব্র ইঙ্গিত ছুঁড়তে পারে— তুমি এ বার যাও! অন্য কেউ আসুক। দু’টো ম্যাচ হেরে যাওয়া এতটা অপরাধ? ব্রাজিল হারে না? আর্জেন্তিনা হারে না? এমএসডি একা হারেন?
২৩ জুন, ২০১৫ ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের ব্যতিক্রমী দিন হিসেবে বিচার্য হওয়া উচিত। তিন ম্যাচের ওয়ান ডে যুদ্ধে ইতিমধ্যে পরাজিত একটা টিম। যারা বুধবারের শেষ ওয়ান ডে-র আগে ‘বাংলাওয়াশের’ প্রেত দেখছে। দেশে যে টিমের অধিনায়ককে প্রতি মুহূর্তে তোলা হচ্ছে কাটাছেঁড়ার টেবলে এবং ছুরি-কাঁচি নিয়ে বসে পড়ছেন একের পর এক বিশেষজ্ঞ। বিষেণ সিংহ বেদী থেকে ধোনির ছোটবেলার কোচ, এক-এক মন্তব্যে গনগনে আবহকে আরও ফুটন্ত কড়াইয়ে বসিয়ে দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনও খেলার যে কোনও টিমের সংসারে বহির্বিশ্বের তপ্ত ছোঁয়া লাগা স্বাভাবিক। অন্তর্তদন্তের আগুনে পুড়ে যাওয়াই প্রত্যাশিত।
কিন্তু এমএসডির ভারতে দু’টোর একটাও হচ্ছে না। বরং মিডিয়াকে প্রশ্ন পিছু একহাত নিচ্ছে টিম। শ্লেষযুক্ত মন্তব্য করে। তিক্ত প্রশ্নে পাল্টা দিয়ে।
ভাল করে বললে, দিচ্ছে টিম সিএসকে।
অশ্বিন মঙ্গলবার দুপুরে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ধোনিকে নিয়ে যা বলে গেলেন, ভারত অধিনায়ক লাইন দু’টোকে ল্যামিনেট করে অনায়াসে চার বছর আগের বিশ্বকাপ ট্রফিটার পাশে রেখে দিতে পারেন। ধোনির চেয়ে বেশি ট্রফি বিশ্বের অনেক অধিনায়ক পেয়েছেন। কিন্তু এমএসডির মতো সতীর্থদের এমন নিঃশর্ত আনুগত্য কেউ পেয়েছেন কি? রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো কেউ বলতে পেরেছেন, “আজ না দাঁড়ালে আর কবে ওর পাশে দাঁড়াব? ক্রিকেট টিম আমার কাছে সেনাবাহিনীর মতো। তুমি যদি তোমার অধিনায়কের সঙ্গে না থাকো, গুলি তুমি খাবেই। ক্যাপ্টেন যদি বলে মাঠে আমাকে জীবন দিতে হবে, আমি তাই করব। আমাকে সেটা করার জন্য প্রস্তুতও থাকতে হবে!”
এক কথায়, অবিশ্বাস্য মন্তব্য। ভারতীয় টিম বিপর্যয় প্রথম বার দেখছে, এমন নয়। লজ্জাজনক হার অতীতে এসেছে, ভবিষ্যতেও হয়তো আসবে। কিন্তু এমন মন্তব্য আসবে?
টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ কেউ বললেন, অশ্বিনের মন্তব্যে তাঁরা আশ্চর্য নন। সতীর্থরা বহু দিন ধরেই এমএসডির পাশে আছে, মিডিয়া শুধু দেখতে পায়নি। বরং এত টানা-হ্যাঁচড়ার পর এটা নাকি আসারই ছিল। বলা হচ্ছে যে অধিনায়ক জনমত, বিশেষজ্ঞ, মিডিয়ার বিরুদ্ধচারণ করে ফর্মহীন ব্যাটসম্যানকে খেলিয়ে যায় দিনের পর দিন, কেউ খারাপ পারফর্ম করলে চিরতরে তাঁর নাম ব্ল্যাকলিস্টে ফেলে দেয় না, তার পাশে টিম দাঁড়াবে না তো আর কার পাশে দাঁড়াবে? শোনা গেল, সিরিজ হারের পর প্রচারমাধ্যমে টিম ও তার অধিনায়ককে ঘিরে চরম বিদ্বেষ দেখে দু’টো জিনিস চালু করে দেওয়া হয়েছে। ঘরে কাগজ ঢুকছে না। নিউজ চ্যানেল সার্ফ করা হচ্ছে না।
মুখোমুখি হলে নুনের ছিটেগুলো শুধু আসছে। টিম আরও একটা ব্যাপার নিয়ে নাকি রুষ্ট হয়ে পড়ছে। হিসেব করে দেখা গিয়েছে, চলতি ক্রিকেট মরসুমে পঁচাত্তর শতাংশ ম্যাচ জিতেছে ভারতীয় ক্রিকেট টিম। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল উঠেছে। কিন্তু সে সব না দেখে অনেক বেশি করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাময়িক বিপর্যয়কে তুলে আনছে প্রচারমাধ্যম। যা অনভিপ্রেত। যে বিক্ষুব্ধ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ চলল প্রাক ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে। অশ্বিন বললেন, “স্ট্যাটস দিয়ে আপনারা যা প্রমাণ করার ইচ্ছে হয়, করুন। কিন্তু এটাও জেনে রাখুন, পুরো টিমের খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য একা এমএস ধোনিকে আপনারা দোষারোপ করতে পারেন না।” এবং মুস্তাফিজুর রহমান নিয়ে জিজ্ঞেস করায় যেটা এল, অতুলনীয়। অশ্বিন বললেন, “কী করা যাতে পারে? কিডন্যাপ তো করতে পারি না!”
মনে হচ্ছে, বুধবারের মীরপুর যুদ্ধটা এর পর দ্বিমুখী হয়ে গেল। এক দিকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। অন্য দিকে, মুস্তাফিজুর ও মিডিয়া।
এম বনাম এম স্কোয়ার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy