ওয়াকার ইউনিস।। ফাইল চিত্র
এক জন ফাস্ট বোলারের হাত থেকে বেরনো গোলাটা ব্যাটসম্যানের কাছে পৌঁছতে যন্ত্রের হিসেবে মোটামুটি .৫৫ সেকেন্ড লাগে। যদি সেটা ১৪০ কিলোমিটার গতিতে আসে। এ বার আরও আট-দশ কিলোমিটার গতি বাড়িয়ে দিন। অঙ্ক বলছে, তা হলে সেটা মোটামুটি .৪০ থেকে .৩৫ সেকেন্ডের মধ্যে ব্যাটসম্যানের কাছে পৌঁছে যাবে। ওই সামান্য সময়ের মধ্যে ব্যাটসম্যানকে ঠিক করে নিতে হবে কোন শট খেলবে!
অঙ্ক বলছে না, ওই রকম ১৪৫-১৫০ কিলোমিটার গতির সঙ্গে বলটা যদি অফস্টাম্পের হাত খানেক বাইরে থেকে সুইং করে লেগস্টাম্পের ওপর আছড়ে পড়ে, তা হলে ব্যাটসম্যানের কী হাল হবে? অঙ্ক না বললেও ক্রিকেট ইতিহাস বলেছে। হয় মিডল বা লেগ স্টাম্পটা উড়ে যাবে, না হলে ব্যাটসম্যান এক পায়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠ ছাড়বেন!
যে হাত থেকে ওই মারাত্মক ইনসুইং আর ইনসুইং ইয়র্কারগুলো বেরোত, সেই হাতে কফির কাপটা ধরে ওয়াকার ইউনিস বলে উঠলেন, ‘‘আপনাদের বুমরা ছেলেটাও কিন্তু খুব ভাল বোলিং করছে।’’
আবু ধাবির শেখ জাইদ স্টেডিয়ামের ভিআইপি লাঞ্চ রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে সর্বকালের অন্যতম সেরা পেসারের জবাব, ‘‘ভারতের বোলিং বেশ ভালই হচ্ছে। তবে অবশ্যই গত কালের ম্যাচ (আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে) বাদ দিয়ে।’’
আফগানিস্তান ম্যাচে প্রথম দলের পাঁচ জনকে বাইরে রেখে নেমেছিল ভারত। ছিলেন না নতুন বলের দুই অস্ত্র ভুবনেশ্বর কুমার এবং যশপ্রীত বুমরা। ওয়াকার মনে করেন, বুমরা দলে ফিরলেই ভারতীয় বোলিংয়ের চেহারাটা বদলে যাবে। নতুন বলে চাপে ফেলতে পারবে ব্যাটসম্যানদের। একই সঙ্গে তাঁর ধারণা, আফগান ম্যাচের ঝাঁকুনিটা ভারতের পক্ষে ভালই হবে।
বুমরার ইয়র্কার যেমন ভাল লেগেছে ওয়াসিম আক্রমের, তাঁর একদা সতীর্থের গলাতেও ‘বুম বুম’-এর প্রশংসা। বলছিলেন, ‘‘বুমরা ইয়র্কারটা তো নিশ্চিত ভাবেই ভাল দেয়। তবে আরও একটা অস্ত্র আছে বুমরার ঝুলিতে।’’ কী সেটা? ওয়াকারের ব্যাখ্যা, ‘‘বুমরার গতি। বুমরাকে দেখে বোঝা যায় না, কিন্তু ওর বলে ভাল গতি আছে। যে ভাবে বল করতে আসে, তাতে ব্যাটসম্যান সব সময় বুঝতে পারে না, বল কতটা গতিতে আসবে। ওই চোরা গতি সমস্যায় ফেলে দিতে পারে ব্যাটসম্যানদের। এটা বুমরার একটা বড় সুবিধে।’’
ক্রিকেট দুনিয়ায় বুমরার ইয়র্কার যতটা আলোচ্য বিষয়, ততটাই আলোচনায় উঠে আসে এই ভারতীয় পেসারের ব্যতিক্রমী অ্যাকশন। যা নিয়ে ওয়াকার বলছিলেন, ‘‘অবশ্যই ব্যাটসম্যানদের সমস্যা হয় বুমরার বোলিং অ্যাকশন বুঝতে। ওর অ্যাকশনে মনে হয়, বলটা ভিতরে আসবে। কিন্তু দেখা যায়, কোনও কোনও সময় বাইরে বেরিয়েও যাচ্ছে। ওখানেই সমস্যায় পড়ে যায় ব্যাটসম্যানরা।’’
মঙ্গলবার দুবাইয়ে সুপার ফোরে ভারতের শেষ ম্যাচ অবিশ্বাস্য ভাবে টাই হয়ে যায় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। রোহিত শর্মা, শিখর ধওয়ন না খেলায় অধিনায়কত্ব করেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। অধিনায়ক হিসেবে নিজের দুশোতম ওয়ান ডে ম্যাচে কিন্তু কিছুটা হলেও চাপে পড়ে যান ক্যাপ্টেন কুল। তাঁকে মেজাজ হারাতেও দেখা গিয়েছে।
একটি ঘটনার ভিডিয়ো তো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। বোলার কুলদীপ যাদব চাইছিলেন, ফিল্ডিংয়ে বদল। ধোনি রাজি হননি। কুলদীপ এর পরে বার কয়েক একই কথা বলে গেলে ধোনির জবাব আসে, ‘‘বোলিং করেগা ইয়া বোলিং চেঞ্জ করে (বোলিং করবে না, বোলার বদল করে দেব)?’’
ম্যাচের পরেও ধোনি খুব একটা শান্ত হননি। স্বীকার করে নিয়েছেন, এই ম্যাচ ভারত হারতেও পারত। তবে ঘুরিয়ে ইঙ্গিত করেছেন, আম্পায়ারের দুটো ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যা ভারতের কাজটা কঠিন করে দেয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে ধোনি বলেন, ‘‘রান তাড়া করতে গিয়ে গোটা দুয়েক রান আউটও হয়। এর বাইরে কয়েকটা এমন ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। কারণ আমার জরিমানা হোক, সেটা চাই না।’’
ধোনি এবং দীনেশ কার্তিক— দু’জনেই আফগান ম্যাচে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছিলেন। কোনও সন্দেহ নেই, ধোনির কথায় উঠে আসছে সেই ঘটনারই ইঙ্গিত। ওই সময় ধোনি বা কার্তিক, কেউ রিভিউ নিতে পারেননি। কারণ তার আগে একটা রিভিউ নিয়ে নষ্ট করেছিলেন কে এল রাহুল। যার জন্য ম্যাচের পরে অনুশোচনাও করেছেন তিনি। সাংবাদিক বৈঠকে এসে রাহুল বলেন, ‘‘এখন মনে হচ্ছে, রিভিউটা না নিলেই ভাল হত। কিন্তু ওই সময় মনে হয়েছিল, বলটা বোধ হয় বাইরে যাচ্ছে।’’
তবে বুধবার বেলা গড়ানোর পরে ধোনির মেজাজ বোধ হয় শান্ত হয়েছে। জানা গেল, হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে ভক্তদের সঙ্গে দেদার ছবি তোলেন তিনি। যেখানে ছিল ভারত-পাকিস্তানের দুই ‘সুপারফ্যান’ও— বশির চাচা ও সুধীর। দু’জনের মাঝে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায় ক্যাপ্টেন কুলকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy