Advertisement
E-Paper

আলো-আঁধারি শহরে শিখরে ওঠার লড়াই

রোহিত শর্মারা শুক্রবার যে-হোটেল থেকে বেরিয়ে এশিয়ার সিংহাসন দখলের অভিযানে নামবেন, সেই হোটেল তেরো বছর আগে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের ওই বানিয়াস বলরুমে সে-দিন হাজির ছিলেন ভারতীয় পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা এক ব্যক্তি। তাঁর মেয়ের বিয়েতে। 

কৌশিক দাশ

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৬

সোনার শহরে আপনাকে স্বাগত। যে শহর কখনও ঘুমোয় না, সেখানে আপনাকে স্বাগত।

রোহিত শর্মারা শুক্রবার যে-হোটেল থেকে বেরিয়ে এশিয়ার সিংহাসন দখলের অভিযানে নামবেন, সেই হোটেল তেরো বছর আগে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের ওই বানিয়াস বলরুমে সে-দিন হাজির ছিলেন ভারতীয় পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা এক ব্যক্তি। তাঁর মেয়ের বিয়েতে।

শোনা যায়, সে-দিন ওই ব্যক্তিকে দেখার জন্য উপচে পড়েছিল মিডিয়া। হোটেলের অতিথিবর্গ এক বার চেষ্টা করেছিলেন, যদি তাঁকে চোখে দেখা যায়। কিন্তু সেই খোঁজার মধ্যে ভালবাসা নয়, ছিল ভয়। ছিল ত্রাস।

শুক্রবার দুপুরেও দুবাইয়ের এই বিখ্যাত হোটেলের সামনে ভিড় জমাবেন সাধারণ মানুষ। এক ঝলক দেখতে চাইবেন তাঁদের নায়কদের। কিন্তু সেই চাওয়ার মধ্যে থাকবে ভালবাসা, থাকবে আবেগ, থাকবে আর্তি। টিম বাসে রোহিত, ধোনিদের উঠতে দেখলে তাঁরা নিশ্চিত ভাবে গর্জে উঠবেন— ‘‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা।’’

আলো-আঁধারির এই দুবাইয়ে আপনাকে স্বাগত। যেখানে বৈভব আছে, ঔজ্জ্বল্য আছে, অন্ধকার গলি আছে, চোখধাঁধানো সোনার সম্ভার আছে। আর আছে ক্রিকেট!

নাইফ রোড দিয়ে যদি কোনও নবাগত মিনিট দশেক হেঁটে দুবাইয়ের ‘গোল্ড সউক’ অঞ্চলে পৌঁছে যান, তা হলে তাঁর মাথা ঘুরে যেতে বাধ্য। এ কি বাস্তবের দুনিয়া, নাকি আলিবাবার সেই গুহা! দু’পাশে সোনার সম্ভার। কোথাও এক মানুষ লম্বা সোনার পোশাক। কোথাও সোনার বিশাল হার, যা পরলে কোমর পর্যন্ত নেমে আসবে। চমকে দেবে একটা বিশালাকার সোনার আংটি। গিনেস বুকে যে-আংটির নাম আছে বিশ্বের সব চেয়ে ভারী অঙ্গুরীয় বলে। যে-আংটির ওজন ৬৩.৮৫৬ কেজি!

কিন্তু সেই আংটির ঔজ্জ্বল্যের চেয়ে কম কি ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা-শিখর ধওয়নের ব্যাট? দু’জনেই আগের ম্যাচে বিশ্রাম নিয়ে ফাইনালের জন্য দলে ফিরছেন। এশিয়া কাপে দু’‌টো সেঞ্চুরি করে ধওয়নই এখন প্রতিযোগিতার সেরা ব্যাটসম্যান। বড় প্রতিযোগিতায় নামলে কি আপনি বদলে যান? বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফাইনালে নামার ২৪ ঘণ্টা আগে সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্নটা উড়ে এসেছিল ধওয়নের দিকে। যা শুনে ভারতের সহ-অধিনায়ক বলেন, ‘‘সে-রকম কোনও ব্যাপার নেই। আমার কাছে সব ম্যাচই বড়। আমি সব সময় নিজের সেরাটা দিতে চাই। কখনও সফল হই, কখনও হই না।’’

এশিয়ার সিংহাসন দখলে ভারতের সামনে এখন একটাই বাধা, বাংলাদেশ। ফাইনালে কতটা লড়াই হতে পারে বলে মনে হয়? সুপার ফোরের ম্যাচে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিলেও ধওয়ন কিন্তু যথেষ্ট সম্মান করছেন প্রতিপক্ষকে। বলছেন, ‘‘বাংলাদেশ বেশ ভাল দল। গত কয়েক বছর ধরে ওদের খেলায় উন্নতি হয়েছে। তবে সব কিছু খুঁটিয়ে দেখেই আমরা ফাইনালের ছক করেছি।’’

জানা গিয়েছে, বুধবারের পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশ ম্যাচ দেখেছেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। বাংলাদেশের খেলা দেখার পরে ভারতীয় গেমপ্ল্যানের যা নির্যাস পাওয়া যাচ্ছে, তা এই: নতুন বলে এমনিতেই সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু ওদের টানছে মিডল অর্ডার এবং অবশ্যই মুশফিকুর রহিমের ব্যাট। যে-মিডল অর্ডার ভাঙার দায়িত্বে থাকবেন কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চহালেরা।

ধওয়ন যতই সমীহ করুন, ঘটনা হল, চোটে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের চেয়ে ছন্দে থাকা এই ভারতীয় দল অনেক এগিয়ে। যার ফলে মাঠে কতটা লড়াই হবে, বলা কঠিন। কিন্তু মাঠের বাইরে, গ্যালারিতে লড়াইটা হবে সমানে-সমানেই!

বিত্তশীল এই শহরটা আবার এ-পার বাংলা আর ও-পার বাংলার মানুষের মিলনস্থলও বটে। বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠার পরে সে-দেশের মানুষের মধ্যে টিকিট কেনার ধুম পড়ে গিয়েছে। বেহালা পর্ণশ্রীর ছেলে, পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে দুবাইয়ে রয়েছেন নিজের ব্যবসার সূত্রে। আজ বলছিলেন, ‘‘আমার অফিসে বাংলাদেশের অনেক মানুষ আছে। তাদের জন্য এখন টিকিট জোগাড় করছি।’’ জানা গেল, দল হেরে যাওয়ায় অনেক পাকিস্তানি সমর্থক তাঁদের টিকিট বিক্রি করে দিচ্ছেন। যা কিনে নিচ্ছেন বাংলাদেশিরা। অনলাইনে আর কোনও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।

শুধু মাঠে যাওয়াই নয়, গঙ্গাপাড়ের বাঙালিরা যাবেন রীতিমতো তৈরি হয়ে। মুখে পতাকা এঁকে, ঢাক-ঢোল নিয়ে। যদি বাদ্যযন্ত্র আটকেও যায়, কুছ পরোয়া নেহি। ঢাকি ভাড়া পাওয়া যায় স্টেডিয়ামে। দেড়শো দিরহাম (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় তিন হাজার) দিলে বাজিয়ে দিয়ে

যায় এসে।

আর পদ্মাপাড়ের বাংলার মানুষেরা কী ভাবে তৈরি হচ্ছেন? শারজা-দুবাই সীমান্তে থাকা ঢাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব জুলফিকার হায়দার খান জানাচ্ছেন, তাঁদের এখান থেকে বেশ কয়েকটি দল মাঠে যাবে। সেই দলে থাকবে ‘টিম বাংলাদেশ’ বলে একটি গ্রুপ। নিজস্ব জার্সি পরে সেই ‘টিম’ মাঠে যাবে মর্তুজা, মুশফিকুরদের তাতাতে।

কিন্তু তাতালেও লড়াইটা কতটা হবে, প্রশ্ন সেখানেই। নতুন বলে ভুবনেশ্বর, বুমরা ফেরা মানেই শুরু থেকে বিপক্ষ চাপে। ওয়াকার ইউনিস তো বলেই দিয়েছেন, বুমরা ফিরলে ভারতীয় বোলিংয়ের চেহারাই বদলে যাবে। তার পরে স্পিন জুটি ‘কুলচা’। ধওয়নই বলছিলেন, ‘‘কুলদীপের গুগলি এখনও অনেকে বুঝতে পারে না। মাঝের ওভারগুলোয় এ-রকম স্পিনার থাকায় আমাদের সুবিধে হয়ে যায়।’’ এত সব বলেও কিন্তু ভারতকে এগিয়ে রাখতে চান না তিনি। সতর্ক ধওয়নের মন্তব্য, ‘‘বাংলাদেশকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার প্রশ্নই নেই। ওরা পাকিস্তানের মতো বড় দলকে হারিয়ে এসেছে। আর কাগজে-কলমে কোন দল কী রকম, তাতে কিছু যায়-আসে না। মাঠে কে কী রকম খেলল, সেটাই আসল।’’

ধওয়নের সাংবাদিক বৈঠক শেষ হল। ভারত-বাংলাদেশের বাকি ক্রিকেটারেরা বিশ্রাম নিলেন হোটেলে। রাত বাড়তে থাকল। মাথাচাড়া দিতে থাকল নতুন এক দুবাইও। যেখানে রাস্তায় ঝড়ের গতিতে উড়ে যায় ফেরারি বা ল্যাম্বর্ঘিনি। নৈশ ক্লাবগুলোয় বাড়তে থাকে লাস্যময়ীদের ভিড়।

অপেক্ষার পালা চলে সূর্য ওঠার। যখন আঁধার মুছে গিয়ে থাকবে শুধু আলো। আর ক্রিকেট।

Cricket Asia Cup 2018 India Bangladesh Final
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy