Advertisement
E-Paper

সোনা পেলে বাড়ি করবে অঙ্কুশিতা

রবিবার গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত প্রার্থনায় বসতে চলেছে তার জন্য। কারণ, বিশ্ব যুব মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যে পাঁচ জন ভারতীয় মহিলা রবিবার ফাইনালে নামছেন, তাদের মধ্যে বাকি চার জনই হরিয়ানার বাসিন্দা। অঙ্কুশিতা পূর্ব ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১০

বাড়ি গুয়াহাটি থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে তেজপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে। যেখানে একটাই স্কুল। বাবা সেই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক এবং মা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী। তিন ভাই-বোনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর মতো অবস্থা। কারণ প্রতি মাসে বেতন পান না বাবা।

সেই পরিবারের বড় মেয়ে অঙ্কুশিতা বড়োর মুখ গুয়াহাটি বিমানবন্দরের বাইরের হোর্ডিংয়ে এখন জ্বলজ্বল করছে সদ্য সমাপ্ত এশিয়ান বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে সোনাজয়ী মেরি কমের সঙ্গে। দু’জনের ছবির নীচে ইংরেজিতে লেখা ক্যাপশন— ‘রিং ইজ ওয়েটিং ফর আ নেক্সট লেজেন্ড’। অঙ্কুশিতা বড়ো কিংবদন্তিদের দলে ঢুকতে পারবে কি না তা সময় বলবে। কিন্তু এই মুহূর্তে গোটা অসমের ঘরে ঘরে তার নাম।

রবিবার গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত প্রার্থনায় বসতে চলেছে তার জন্য। কারণ, বিশ্ব যুব মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যে পাঁচ জন ভারতীয় মহিলা রবিবার ফাইনালে নামছেন, তাদের মধ্যে বাকি চার জনই হরিয়ানার বাসিন্দা। অঙ্কুশিতা পূর্ব ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি। যাকে এই মুহূর্তে মেরি কমের মতো প্রতিভা বলছেন, ভারতীয় দলের কোচ ভাস্কর ভট্ট। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েটার ফুটওয়ার্ক দুর্দান্ত। রিং-এ কখনও ওকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখিনি। সঙ্গে প্রচণ্ড শক্তি শরীরে। ঠিকঠাক এগোতে পারলে মেয়েটা অনেক দূর যাবে। মেরির মতো প্রতিভা।’’

সতেরো বছরের স্কুল ছাত্রী অঙ্কুশিতা শনিবার সন্ধ্যায় ভারতীয় দলে তার সতীর্থ সাক্ষী এবং নীতু-র ফাইনালে যাওয়ার লড়াই দেখতে এসেছিলেন নবীন চন্দ্র বরদলৈ ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। সেখানেই কথা বলার ফাঁকে বেরিয়ে পড়ে তার চিন্তা। তেজপুরের মেয়ের কথায়, ‘‘রবিবার রাশিয়ার যে মেয়েটার বিরুদ্ধে আমাকে লড়তে হবে সে খুব বেঁটে ও গাট্টাগোট্টা। ওকে হারাতে গেলে আমাকে রিংয়ের মধ্যে আরও গতিতে নড়াচড়া করতে হবে। আজ সারা দিন সেই ফুটওয়ার্কের প্র্যাকটিস করলাম। কিন্তু আসল চিন্তা হচ্ছে একটাই। তা হল আমাদের গোটা গ্রামটাই নাকি খেলা দেখতে আসছে। জিতলে গ্রামের লোকদেরই সোনার পদকটা উৎসর্গ করে দেব।’’

মেরি কমের অন্ধ ভক্ত অঙ্কুশিতার বক্সিং-এ আসার গল্পটাও বেশ চমকপ্রদ। ২০১২ সালে মেরি কম লন্ডন অলিম্পিক্সে বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জ জেতার পরেই বক্সিংয়ের দিকে নজর যায় অঙ্কুশিতার। কিন্তু গ্রামে কোনও বক্সিং শেখার জায়গা ছিল না। তাই গ্রামের এক জনের কাছ থেকে খবর পেয়ে গুয়াহাটি সাই-তে যোগাযোগ করে অঙ্কুশিতা। সেখানে তখন বক্সিংয়ের ট্রায়াল নেওয়া হচ্ছিল। অঙ্কুশিতার কথায়, ‘‘কাকতালীয় ভাবে গুয়াহাটিতে চলে এসে ট্রায়ালে ঢুকে পড়ি। নির্বাচিতও হয়ে যাই। আমাদের গ্রামে কেউ এর আগে বক্সিং করেনি। একাই সাইতে এসেছিলাম। কারণ মা সঙ্গে এলে আরও একশো টাকা বেশি খরচ হতো। কারণ আমার বাবা যে প্রাথমিক স্কুলে পড়ান সেখানে প্রতিমাসে বেতন হয় না। গ্রামের লোকেরা চাঁদা তুলে অর্থ জোগাড় করে দিয়েছিলেন। তাই ওদের জন্যই সোনাটা জিততে চাই।’’

মেয়ের কথা বলা শেষ হতেই অঙ্কুশিতার মা রঞ্জিতা বড়োও যা বলেন তা-ও চমকে ওঠার মতো। ‘‘বাড়ি ভাড়াও ঠিক মতো দেওয়ার সামর্থ্য নেই আমাদের। গ্রামের লোকেরাই মিনিবাস ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন। রবিবার মেয়েকে সোনা জিততে দেখলে সব কষ্ট কমে যাবে। তার জন্য আবার গ্রামের লোকের সঙ্গে আসব অঙ্কুশিতার লড়াই দেখতে,’’ বলেন অঙ্কুশিতার মা।

চলতি বছরেই বুলগেরিয়া এবং তুরস্ক দু’জায়গা থেকে রুপো জিতে ফিরেছেন অসমের এই কন্যা। ফাইনালের আগের সন্ধ্যায় অঙ্কুশিতা বলছে, ‘‘তুরস্ক থেকে হাত খরচা বাঁচিয়ে বোনের জন্য একটা সোয়েটার কিনে এনেছি গত বার। আমাদের বাড়িটা মাটির। নিজের রাজ্য থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সোনা জিতলে কিছু আর্থিক সাহায্য পেতে পারি বলে শুনেছি। তা হলে আর মাটির বাড়িতে না থেকে বাড়িটা পাকা করব।’’

Ankushita Boro AIBA AIBA World Youth Championship boxer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy