Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অশ্বিনের পাঁচ আর পূজারার বেদীতে জমাট হচ্ছে ভারত

‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির।’ শুক্রবার বিকেলে বিরাট কোহলিদের দেখে সবার আগে এটাই মনে হল। উইকেটের স্পিন জুজু? উধাও। বিপক্ষের বোলারদের রক্তচক্ষু? নেই।

সাবাশ। মোহালিতে অশ্বিন-কোহলি। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

সাবাশ। মোহালিতে অশ্বিন-কোহলি। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

রাজীব ঘোষ
মোহালি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২৪
Share: Save:

‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির।’

শুক্রবার বিকেলে বিরাট কোহলিদের দেখে সবার আগে এটাই মনে হল।

উইকেটের স্পিন জুজু? উধাও।

বিপক্ষের বোলারদের রক্তচক্ষু? নেই।

এখন সামনে শুধু রানের পাহাড়। যে পাহাড় উপহার দেওয়া হবে হাসিম আমলাদের, যাঁরা কি না সাত বছর ধরে বিদেশের মাঠে টেস্ট সিরিজে অপরাজিত।

শুক্রবার দুপুর থেকে সেটাই ভাঙার কাজে হাত দিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। বিরাট কোহলি এবং চেতেশ্বর পূজারা।

মোহালির প্রেসবক্সে এসে সাংবাদিক বন্ধুদের অনিল কুম্বলে বলছিলেন, ‘‘এমন উইকেটে খুব বল করতে ইচ্ছে করছে। পারলে এখনই নেমে যেতাম।’’

এটা বেলার দিকের ঘটনা। তখন অশ্বিন-জাডেজারা দফায় দফায় দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটিংকে প্রায় কান ধরিয়ে ওঠবোস করাচ্ছেন।

বিকেলের দিকে অবশ্য আর কুম্বলের সঙ্গে দেখা হয়নি। মাঠে দাঁড়িয়ে টিভিতে তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘এই উইকেটেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা কী ব্যাট করছে! এটা ওদের কৃতিত্ব।’’

এর পর স্টেডিয়ামের প্রেস কনফারেন্স রুম।

পাঁচ উইকেট নেওয়ায় সেখানে দিনের সেরা রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অবধারিত ভাবে সেই প্রশ্নটাই উড়ে গেল তাঁর কাছে, যা নিয়ে চর্চায় সরগরম ক্রিকেট মহল। এই উইকেটেই তো আগের দু’ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের দৈন্যদশা চোখে পড়ল। তৃতীয় ইনিংসে হঠাৎ কী হল? সোজাসাপ্টা জবাবের ব্যাপারে ওস্তাদ অশ্বিন বলে দিলেন, ‘‘ব্যাট করার পক্ষে উইকেটটা এখন অনেক সোজা হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া উইকেট কেমন তা বোঝা যায় ব্যাটসম্যানের পারফরম্যান্স দেখে।’’

দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে এখনই ১৪২ রানে এগিয়ে ভারত। অশ্বিনের কথা সত্যি বলে ধরলে শনিবার তা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা এখন কোহলিদের হাতে।

প্রথম ইনিংসে উইকেটে যে স্পিন জুজু ছিল, সেই ভয় যে আর নেই, তা দ্বিতীয় ইনিংসেই বুঝিয়ে দিলেন চেতেশ্বর পূজারা এবং মুরলী বিজয়। ভয়ডরহীন সেই মঞ্চে এ বার নিজের অপূর্ণ সাধ মেটানো শুরু করেছেন ক্যাপ্টেন কোহলি। বিপক্ষ শিবির থেকে খবর এসেছে, তাদের এক নম্বর পেসার ডেল স্টেইনের কুঁচকির চোটের যা অবস্থা, তাতে শনিবারও বল করতে পারবেন কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ। উইকেট পুরোপুরি সাহায্য না করলে ডিন এলগার যে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’, এ দিন শেষ দু’ঘন্টায় তা-ও বোঝা গিয়েছে। ইমরান তাহিরও বিশেষ সুবিধা করতে পারছেন না। তা হলে আর রানের পাহাড় গড়ায় বাধা কোথায়?

তবু এই টেস্টে জয় দেখতে পাচ্ছে ভারত, এমন কথা কি এখনই বলা যাবে? উইকেট যদি সত্যিই ব্যাটিংয়ের পক্ষে সোজা হয়ে থাকে, তা হলে আমলারাও তো দ্বিতীয় ইনিংসে কড়া চ্যালেঞ্জ দিতে পারেন। তখনই ভারতীয় স্পিনারদের আসল পরীক্ষা।

শুক্রবার পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর অশ্বিনের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস দেখা গেল, তাতে অবশ্য পরের ইনিংসে বাজিমাতের আশ্বাস স্পষ্ট। এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকার সব ব্যাটসম্যানই স্পিনারদের শিকার। অনিল কুম্বলের কোটলা-কীর্তি ছেড়ে দিলে শেষ বার এমন ঘটেছিল চেন্নাইয়ে ২০১৩-র ফেব্রুয়ারিতে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই টেস্টের দুই ইনিংসেই সব উইকেট পেয়েছিলেন ভারতীয় স্পিনাররা। অশ্বিনেরই এক ডজন ছিল।

সকালে যে এলগারের দেওয়া কঠিন ক্যাচ ফেলে তাঁকে জীবন দেন ঋদ্ধিমান সাহা, সেই এলগারকে (৩৭) ফিরিয়েই অশ্বিন তাঁর শিকার অভিযান শুরু করেন। এবি ডে’ভিলিয়ার্স এবং আমলার জন্য স্লিপ, লেগ স্লিপ, শর্ট লেগ, শর্ট মিড উইকেটে ফিল্ডার রাখা হয়েছিল। যে চাপের বিরুদ্ধে এবি-দেরও যুদ্ধ চরমে ওঠে। জাডেজা এবি-র উইকেট পেয়েও পেলেন না নো বলের জন্য। সত্যিই নো বল ছিল কি না, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক থেকে গেল। তবে ডে’ভিলিয়ার্সের মতো ব্যাটসম্যানরা প্রাণ পেলে তার মাশুলও দিতে হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৬৩ রান। তাতেও ২০১ পেরনো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। অমিত মিশ্রদের কৃতিত্ব তো সেখানেও!

ভারত

প্রথম ইনিংস: ২০১।

দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রথম ইনিস

(আগের দিন ২৮-২)

এলগার ক জাডেজা বো অশ্বিন ৩৭

আমলা স্টা ঋদ্ধিমান বো অশ্বিন ৪৩

ডে’ভিলিয়ার্স বো অমিত ৬৩

ভিলাস ক জাডেজা বো অশ্বিন ১

ফিল্যান্ডার ক রাহানে বো জাডেজা ৩

হারমার এলবিডব্লিউ অমিত ৭

স্টেইন স্টা ঋদ্ধিমান বো জাডেজা ৬

রাবাদা ন.আ. ১

তাহির ক পূজারা বো অশ্বিন ৪

অতিরিক্ত ১৪

মোট ১৮৪।

পতন: ৯, ৯, ৮৫, ১০৫, ১০৭, ১৩৬, ১৭০, ১৭৯, ১৭৯।

বোলিং: অশ্বিন ২৪-৫-৫১-৫, উমেশ ৬-১-১২-০,

অ্যারন ৮-১-১৮-০, জাডেজা ১৮-০-৫৫-৩, অমিত ১২-৩-৩৫-২।

ভারত

দ্বিতীয় ইনিংস

বিজয় ক পরিবর্ত (বাভুমা) বো তাহির ৪৭

ধবন ক ডে’ভিলিয়ার্স বো ফিল্যান্ডার ০

পূজারা ব্যাটিং ৬৩

কোহলি ব্যাটিং ১১

অতিরিক্ত

মোট ১২৫-২।

পতন: ৯, ৯৫।

বোলিং: ফিল্যান্ডার ৭-০-১৭-১, হারমার ১০-৩-২৮-০,

এলগার ৭-১-৩৪-০, তাহির ৮-০-৩৩-১, রাবাদা ৮-৫-৯-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

s.africa india first test ravichandra aswin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE