Advertisement
০৮ মে ২০২৪

কুকদের দশায় নিশ্চয়ই কাঁপছে অস্ট্রেলিয়া

ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে আমরা এখন সেই অধ্যায়ে রয়েছি যার প্রতিটা মুহূর্ত সবিস্তারে নথিবদ্ধ করে রাখা জরুরি।

আবার মাঠে নামার আগে লম্বা একটা ছুটি পেয়ে গেলাম। টুইটারে বিরাট কোহালি

আবার মাঠে নামার আগে লম্বা একটা ছুটি পেয়ে গেলাম। টুইটারে বিরাট কোহালি

রবি শাস্ত্রী
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে আমরা এখন সেই অধ্যায়ে রয়েছি যার প্রতিটা মুহূর্ত সবিস্তারে নথিবদ্ধ করে রাখা জরুরি। যে টিমের হাতে ব্যাটসম্যান, উইকেটকিপার, স্পিনার বা পেসার, সব ক্ষেত্রেই ঢালাও বিকল্প, তাদের নিয়ে জল্পনাটা খুব স্বাভাবিক যে, এটাই কি সর্বকালের সেরা টিম? অন্তত ক্রিকেট পাগলদের আড্ডায় এই নিয়ে তোলপাড় হতে বাধ্য। মানছি, একটা টিমের শ্রেষ্ঠত্ব বিচারের আসল মাপকাঠি বিদেশের মাটিতে তাদের পারফরম্যান্স। সেই মাপকাঠিতে বিচার করলে, বিরাট কোহালিদের এই টিমটার এখনও অনেক পরীক্ষা বাকি।

তবে একটা কথা জোর দিয়ে বলা যায়। এই টিমটার এমন কিছু বৈশিষ্ট আছে যা এর আগের অন্য কোনও ভারতীয় টিমে ছিল না।

আশির দশকের শুরুর পর থেকে দেখলে, গত তিন দশকে আর কোনও ভারতীয় টিমে এত ভাল লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান আমি দেখিনি। গত দু’বছরে এই লোয়ার অর্ডার দেশে এবং বিদেশে সমান ধারাবাহিকতায় রান করছে। অশ্বিনের মতো এক জন প্রথম সারির অলরাউন্ডার তো আছেই, জাডেজা আর জয়ন্ত যাদবের মধ্যে সম্ভবত আরও এক জন ভাল অলরাউন্ডারের খোঁজ পেয়ে গিয়েছে ভারত। টিমটার দাপটের সেরা উদাহরণ তো এটাই যে, পূজারা, কোহালিরা ব্যর্থ হওয়ার পরেও টিমের তরুণ তুর্কিরা সর্বোচ্চ দলগত রানের রেকর্ড গড়ে দিচ্ছে। আর তার পরেও করুণ নায়ারের মতো ট্রিপল সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানের জায়গায় টেস্ট টিমে পাকা নয়! একটা টিম ঠিক কতটা ভাল সেটা তার রিজার্ভ বেঞ্চই বলে দেয়। আর ভারতের রিজার্ভ বেঞ্চে এই মুহূর্তে কাকে ছেড়ে কাকে দেখি অবস্থা।

সবচেয়ে ভাল লাগছে এটা দেখে যে, এই ছেলেগুলো আকাশকেও সীমা ভাবে না। ওদের লক্ষ্য আরও বেশি, অ্যাম্বিশন অসীম। নিজেদের প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলতে নামা জয়ন্ত যাদব আর করুণ নায়ারকে দেখলেই বুঝবেন আমি ঠিক কী বলতে চাইছি। এরা নতুন ভারতের মুখ। যারা চাপে ভেঙে পড়ে না, পাল্টা দেয়। একেবারে ভয়ডরহীন। আর চিন্তাভাবনায় ভয়ঙ্কর রকমের পজিটিভ। কোহালি আগে অনেক বার বলেছে যে, ওর ছেলেরা যে কোনও মূল্যে জিততে চায়। এই চাওয়াটা কাজে করে দেখানোর ক্ষেত্রে অতীতের অনেক ভারতীয় টিমই এদের পাশে ম্যাড়ম্যাড়ে।

টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ড পুরোপুরি পর্যুদস্ত হল। টিম হিসাবে ওরা কিন্তু যথেষ্ট ভাল। গত দু’বছরে যে ক’টা বিদেশি টিম ভারতে এসে টেস্ট খেলেছে, ওরা ঠিক তাদের মতোই ভাল, বা তাদের মতোই খারাপ ব্যাটিং করেছে। টিমটার আসল দুর্বলতা ওদের স্পিন ইউনিট। ভারতীয় পিচে নিজেদের উপস্থিতি টের পাওয়াতে ইংল্যান্ডের স্পিনাররা পুরোপুরি ব্যর্থ। সিরিজে কোনও টিমের কাছেই টস-ভাগ্যটা তেমন কোনও ফারাক গড়ে দেয়নি। যেটা ফারাক গড়েছে তা হল লম্বা সময় ধরে ঠাঠা রোদের মধ্যে ইংল্যান্ডের ফিল্ডিং খাটা। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ওদের যেটা করতে বাধ্য করে। সেই ক্লান্তিটাই শেষ করে দেয় কুকদের।

আমি নিশ্চিত, কুকদের দশা দেখার পর অস্ট্রেলিয়ানদের শিরদাঁড়ায় এখনই শিরশিরানি শুরু হয়ে গিয়েছে। কাঁপুনি ধরছে। এমনিতেই অতীতে ভারত সফরের স্মৃতিগুলো অস্ট্রেলিয়ার কাছে তেমন সুখের নয়। তার উপর এ বছর উপমহাদেশের আর এক দেশ, শ্রীলঙ্কায় গিয়ে টেস্ট সিরিজে টানা হেরে ফেরার ক্ষতটা এখনও টাটকা। তাই আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভারতকে ওরা বিন্দুমাত্র বেকায়দায় ফেলতে পারবে, এমন ভাবার কোনও কারণ দেখছি না।

চেন্নাই টেস্টটা অবশ্য আমার চিরকাল মনে থাকবে একটাই দৃশ্যের জন্য— করুণ নায়ার স্টাইলে ইংল্যাল্ড বোলারদের সুইপ করে চিপকের বাইরে ফেলে বলেছে, মেরি ক্রিসমাস!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Cricket Giant England Australia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE