Advertisement
E-Paper

আফ্রিকান সিংহও বিধ্বস্ত, বিশ্ব ক্রিকেটে ব্যাঘ্রগর্জন

ইতিহাস ছোঁয়ার চিহ্ন হিসেবে একটা স্টাম্প তুলে নিলেন লিটন দাস। ক’জনের চোখে পড়ল, সন্দেহ আছে। তার কয়েক মুহূর্ত আগে ইমরান তাহিরকে মিডউইকেট দিয়ে যে মসৃণ বাউন্ডারিটা মেরেছেন, তার পর আর ক’জন বাঙালির দৃষ্টিই বা স্পষ্ট ছিল!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৪:২৭
সৌম্য এ দিনও নায়ক। ছবি: এএফপি।

সৌম্য এ দিনও নায়ক। ছবি: এএফপি।

ইতিহাস ছোঁয়ার চিহ্ন হিসেবে একটা স্টাম্প তুলে নিলেন লিটন দাস। ক’জনের চোখে পড়ল, সন্দেহ আছে।

তার কয়েক মুহূর্ত আগে ইমরান তাহিরকে মিডউইকেট দিয়ে যে মসৃণ বাউন্ডারিটা মেরেছেন, তার পর আর ক’জন বাঙালির দৃষ্টিই বা স্পষ্ট ছিল! চট্টগ্রামে যে উৎসবের ভূকম্পনের উৎস, তার শিহরণে তখন কাঁপছে গোটা বাংলাদেশ। কাঁপছে, নাচছে, হাসছে, কাঁদছেও।

ক্রিকেটবিশ্বের ‘ছোট ভাই’ তকমা লাগানো আজীবনের অস্তিত্ব সদর্পে, পাকাপাকি ভাবে ঝেড়ে ফেলার দিন তো আর একটামাত্র আবেগে আটকে থাকে না!

জিম্বাবোয়েকে হারানোটা ফ্লুক হয়ে থাকতে পারে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়কে সমালোচকেরা ব্যাখ্যা করতে পারেন এটা বলে যে, ইউনিস খানরা কবে আর ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলতে পেরেছেন? বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের ২-১ উড়িয়েও কারও কারও কাছে শুনতে হয়েছিল, টানা ক্রিকেট খেলে টিম ইন্ডিয়া ক্লান্ত। সেই টিমকে হারানো— এ রকম তো হয়েই থাকে!

দক্ষিণ আফ্রিকাকে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ উড়িয়ে দেওয়ার ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে সমালোচক-কুল একটু সমস্যায় পড়তে পারেন। ডেল স্টেইন বা এবি ডে’ভিলিয়ার্স টিমে ছিলেন না, কিন্তু এই টিমকে মোটেও দ্বিতীয় সারির বলা যাবে না। ব্যাটিংয়ে হাসিম আমলা, ফাফ দু’প্লেসি, জেপি দুমিনি, ডেভিড ‘দ্য কিলার’ মিলার, বোলিংয়ে মর্নি মর্কেল-ইমরান তাহিরের অভিজ্ঞ গতি-স্পিন জুটির সঙ্গে কাগিসো রাবাদার সাড়া-জাগানো টাটকা পেস।

এই টিমের বিরুদ্ধে সিরিজ ১-১ রেখে চট্টগ্রামে ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে নেমেছিলেন মাশরফি মর্তুজারা। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী টিমের বিরুদ্ধে কোনও দিন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জেতেনি বাংলাদেশ। নিজেদের দেশে পরপর চারটে সিরিজ জয় দেখেননি বঙ্গ সমর্থকেরা। বুধবারের পর যাঁরা নিজেদের অসীম ভাগ্যবান মনে করলে ভুল করবেন না। ক্রিকেট-গর্বের দেশজ রাজপ্রাসাদের এক-একটা ইঁট স্থাপন প্রত্যক্ষ করা— ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে এর চেয়ে বেশি সুখের কী হতে পারে?

মর্তুজা, লিটন, মুস্তাফিজুর, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, নাসির হোসেন— বুধবারের পর এই নামগুলোও তো আরও বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। র‌্যাঙ্কিং, ওজনদার বিপক্ষ, প্রাকৃতিক খেয়াল— কোনও কিছুই এঁদের কাছে গ্রাহ্য করার মতো নয়। আশির ঘরে দক্ষিণ আফ্রিকার চারটে উইকেট ফেলে দেওয়ার পর যে বৃষ্টিটা নামল চট্টগ্রামে, তাতে মনে হয়েছিল খেলা বোধহয় আর হবে না। বা হলেও ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মের গোলকধাঁধায় পথ হারাবে বাংলাদেশ।

তেমন কিছুই শেষ পর্যন্ত হয়নি। যেটা হয়েছে সেটা হল, বৃষ্টি থামার পরেও বাংলা-বোলিংয়ের বিষ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে বিপক্ষের ব্যাটিং-শিরদাঁড়ায়। বৃষ্টিতে কমে ম্যাচ চল্লিশ ওভারে দাঁড়িয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৬৮-তে আটকে রেখেছেন সাকিব-মুস্তাফিজুররা। তার পর ব্যাট করতে নেমে যা করেছেন, তাকে ছেলেখেলা ছাড়া কিছু বলা যায় না। উল্টো দিকে বল হাতে মর্কেল থাকুন বা তাহির, তামিম-সৌম্যর ওপেনিং জুটি নিজের ইচ্ছেয় রান তুলে গিয়েছে। ১৫৪-র ওই পার্টনারশিপে ক’ভাগ স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে ক’গ্রাম টেকনিক ছিল, নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন আর ঔদ্ধত্যের অনুপাতই বা কতটা— আগামী কয়েক দিন বঙ্গ-সমর্থকদের আনন্দের তর্কবস্তু হয়ে থাকবে সন্দেহ নেই।

দশটা রানের জন্য সেঞ্চুরি পেলেন না সৌম্য সরকার। কিন্তু সেই হতাশা নিশ্চয়ই ভুলিয়ে দেবে সিরিজ সেরার পুরস্কার। ভুলিয়ে দেবে, ইতিহাসের স্তম্ভ হতে পারের সোনার সুযোগ। ভুলিয়ে দেবে, বঙ্গদেশের ক্রিকেট-কল্পতরু হয়ে ওঠার ললাটলিখন।

‘‘দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো কিন্তু সহজ ছিল না। এই জয়টা আমাদের দেশের কাছে বিরাট মুহূর্ত। সৌম্য যে এত সুন্দর ব্যাট করছে, ভাবা যায় না। দুর্ধর্ষ জয়!’’ ট্রফি নিতে যাওয়ার পথে বলছিলেন মর্তুজা। তার আগে অবশ্য আরও তাৎপর্যের একটা মন্তব্য করে গিয়েছেন তামিম। বলে দিয়েছেন, জয় একটা অভ্যাস। বলে দিয়েছেন, যে কোনও টিমকে হারাতে পারি— এই বিশ্বাসটা টিমের মজ্জায় ঢুকে গিয়েছে।

কে বলবে, তাঁর দেশে ক্রিকেট খেলতে যাওয়াটা এক সময় বিপক্ষের কাছে সুখসফরের বেশি কিছু ছিল না। এই বাংলাদেশ যে আর শুধু ক্রিকেট খেলতে মাঠে নামে না। নামে, খেলতে আর জিততে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা ১৬৮-৯ (দুমিনি ৫১, সাকিব ৩-৩৩, মুস্তাফিজুর ২-২৪, রুবেল ২-২৯)

বাংলাদেশ ১৭০-১ (সৌম্য ৯০, তামিম ৬১ নটআউট)।

Bangladesh South Africa ODI Zahur Ahmed Chowdhury Stadium one-day international cricket abpnewsletters MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy