এর পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নার্ভ নিয়ে ভবিষ্যতে বিশ্বের অত্যাধুনিক কোনও রসায়নাগারে চূড়ান্ত পর্যায়ে বিশ্লেষণ হওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সত্যি, একজন মানুষের পক্ষে প্রবলতম চাপে কতটা কুল থাকা সম্ভব! আমাদের ক্যাপ্টেন এ ব্যাপারে অতিমানব! পাশাপাশি এটাও আমার কাছে অত্যাশ্চর্য— ক্রিকেটে একজন অধিনায়ক এত ভুল করেও কোনও ম্যাচ কী করে জেতে? তাও একবার নয়, পরপর দু’বার।
ইডেনের পর চিন্নাস্বামীতেও ক্যাপ্টেন ধোনি অনেকগুলো ভুল করেছে। রায়না বাংলাদেশ ইনিংসের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রথম ওভারেই উইকেট তোলার পরেও ওকে আর বোলিংয়ে আনলই না। নেহরাকে শেষ ওভারের জন্য না রেখে আগেই কোটা শেষ করে দিল। নিশ্চয়ই হিসেবের ভুলে। বিশ্ব টি-টোয়েন্টির মতো সর্বোচ্চ মঞ্চে এ রকম একটা হাড্ডাহাড্ডি রান তাড়ার ম্যাচে শেষ ওভার করতে থাকল কিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনভিজ্ঞ মিডিয়াম পেসার হার্দিক পাণ্ড্য। টার্নারে ফের যুবরাজকে এক ওভারও বল দিল না। নাগপুর, ইডেনের পর বেঙ্গালুরুতেও বল ঘুরছে দেখেও তৃতীয় স্পেশ্যালিস্ট স্পিনার হরভজনকে আবার বসিয়ে রাখল। তা হলে ওকে স্কোয়াডে নেওয়াই কেন? ব্যাটিং অর্ডারেও ধোনি ভুল করেছে বুধবার। বাংলাদেশ সেই সময়টা স্পিনারদের দিয়ে করাচ্ছে দেখে বিগহিটার হার্দিককে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তুলে দিল। ভাল কথা। কিন্তু ধোনি নিজে বা যুবরাজও কি বিগহিটার নয়?
কিন্তু দিনের শেষে কী? না ধোনিই হিরো। আমাদের ক্যাপ্টেন কুল-এরই জয়জয়কার। আর সেটা যে ওর কপালগুণে, তা বলব না। বরং এটা বলা ভাল যে, ধোনিকে আগাম জন্মদিনের উপহার দিয়ে গেল বাংলাদেশ। নইলে শেষ তিন বলে জিততে দু’রান চাই। তার আগে ওই ওভারেই দু’টো বাউন্ডারি খেয়ে ঘেঁটে রয়েছে বোলার। তার পরেও কিনা বাংলাদেশ শেষ তিন বলে তিনটে উইকেট হারায়! একটাও রান না করতে পেরে। তাও দু’টো উইকেট দু’টো জঘন্য বলে। যে দু’টো বল মাঠের যে কোনও জায়গায় আলগা ঠেলে সিঙ্গলস কুড়িয়ে জিতে বেরিয়ে যাওয়া যায়, সেখানে মুশফিকুর আর মাহমুদউল্লাহর মতো দু’টো পোড়খাওয়া ব্যাট অহেতুক তুলে মারতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসে। ম্যাচের শেষ বলটা যে ব্যাটে না লাগাতে পারলেও ব্যাটসম্যানরা সিঙ্গলসের জন্য পড়িমরি ছুটবে জানা কথা। সে জন্য ধোনি এক হাতের গ্লাভস খুলে দাঁড়িয়েছিল। যাতে বলটা আরও সহজে ধরে রান আউটের চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু অবাক লাগল, শেষ বলে ক্রিজে এসে নন-স্ট্রাইকার এন্ডে দাঁড়ানো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানকে দেখে। ওর তো কোনও বল খেলার প্রশ্ন ছিল না। তা হলে কেন হেলমেট মাথায় নামতে গেল? খালি মাথায় নামলে তো আরও দ্রুত দৌড়তে পারত, সে ক্ষেত্রে স্ট্রাইকার এন্ডে পৌঁছে গেলে ম্যাচটা অন্তত ‘টাই’ হয়ে সুপার ওভারে যেত। বাংলাদেশের একটা শেষ আশা থাকত জেতার।
রোমাঞ্চকর জেতার পরেও অবশ্য ভারতের সেমিফাইনালে উঠতে এখন মোহালিতে শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতেই হবে ধোনিদের। মনে হচ্ছে, বরাবরের পেস সহায়ক পিচ মোহালিতেও যে ভাবে হোক টার্নার তৈরি করা হবে রবিবার। তার জন্য যদি স্কোয়ার টার্নারের মতো কিছু হয়ে যায়, তা হলে সেই ঝুঁকিও হয়তো নেবে আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট। তাতেও আমি প্রায় নিশ্চিত, উইনিং কম্বিনেশন ভাঙবে না ধোনি। নাগপুরেই যখন হরভজনকে খেলায়নি, তখন আর কোথাও খেলাবে বলে মনে হয় না। এমনিতেই ধোনি হালফিলে হার্দিকে মজে। এ দিনের পর তো আরও বেশি মজে উঠবে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ১৪৬-৭ (রায়না ৩০, মুস্তাফিজুর ২-৩৪),
বাংলাদেশ ১৪৫-৯ (তামিম ৩৫, পাণ্ড্য ২-২৯, অশ্বিন ২-২০)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy