অপ্রতিরোধ্য: দেপোর্তিভোর বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে বার্সেলোনাকে ২৫তম লা লিগা জিতিয়ে উচ্ছ্বসিত মেসি। ছবি: রয়টার্স
দেপোর্তিভো ২ : বার্সেলোনা ৪
প্রত্যাশিত ছিল সবই। লা লিগা জিতল বার্সেলোনা। এই নিয়ে পঁচিশবার। শেষ দশ মরসুমে সাত নম্বর খেতাব।
দেপোর্তিভো লা করুনা প্রতিপক্ষ হিসেবে বার্সার কাছে ‘লিলিপুট’। ড্র করলেই খেতাব এসে যেত। সেখানে ৪-২ জয়। টেবলে দু’নম্বর আতলেতিকো দে মাদ্রিদের সঙ্গে ১১ পয়েন্টের ফারাক। ধরাছোঁয়ার বাইরে বার্সা। উৎসবে মাতার কথা লুইস সুয়ারেসদের।
অথচ তেমন কিছুই হল না রিয়াজোরে। আর দেপোর্তিভো যেন নিজেদের মাঠে মঞ্চ তৈরি করেই রেখেছিল। খেলার আগেই দর্শক আর ফুটবলাররা যে পরিমাণ উচ্ছ্বাস দেখালেন আন্দ্রে ইনিয়েস্তাদের নিয়ে, তাতে মনে হল প্রতিপক্ষ শিবিরকে তাঁদের পাড়াতেই চ্যাম্পিয়ন দেখতে চেয়েছিল ক্লারেন্স সিডর্ফের ক্লাব।
এমনিতে প্রচারের সব আলো গিয়ে পড়ল সেই একজনের উপরই। লিয়োনেল মেসি। এবারই লা লিগায় ৩২টি গোল হয়ে গেল আর্জেন্তিনার মহাতারকার। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর থেকে আটটি বেশি। রবিবার হ্যাটট্রিকও করে ফেললেন। ৭ মিনিটে ফিলিপো কুটিনহো ১-০ করার পরে মেসি-জাদুতে নাকানিচোবানি খেল দেপোর্তিভো। যদিও নিজেদের মাঠে খেলার আধ ঘণ্টার মধ্যে ২-১ করে ফেলেছিল তারা। কিন্তু ম্যাচের রাশ কার্যত নিজের হাতে নিয়ে ৮২ আর ৮৫ মিনিটে পরপর দু’গোল করে ৪-২ করে দিলেন মেসি। সঙ্গে সঙ্গে দেপোর্তিভোর পরের মরসুমে দ্বিতীয় ডিভিশনে নেমে যাওয়াও নিশ্চিত
হয়ে গেল।
ইনিয়েস্তা, মেসি— দু’জনেরই ন’বার লা লিগা জেতা হয়ে গেল। কোপা দেল রে পরপর চারবার! কিন্তু রোমার কাছে ইউরোপ সেরা হওয়ার দৌড়ে ধাক্কা খাওয়ার দুঃখ যে যায়নি দলটার, তা স্পষ্ট মেসির কথাতেই, ‘‘সত্যিই তো পুরো মরসুমই খুব ভাল খেলল দল। বলতে গেলে হারিইনি আমরা। কোপা দেল রে-র একটা ম্যাচ ছাড়া। তবে রোমে অপ্রত্যাশিত হারটা বেশি বেদনার।’’
ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মেসি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে গেলেও তিনি যে লা লিগা আর কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ক্লাবের বড় সাফল্য মনে করছেন সেটা অবশ্য বলতে ভুললেন না। ‘‘আমি দারুণ খুশি। লা লিগা জেতার আনন্দই আলাদা। এখানে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্যিই খুব কঠিন। এই জয়ের মূল্য দলের প্রত্যেককে বুঝতে হবে। হ্যাঁ, এবার সবাই মিলে উৎসবও করব,’’ বললেন বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। যোগ করলেন, ‘‘মনে রাখবেন, একটা ম্যাচও না হেরে আমরা লিগটা জিতেছি। তাই এই সাফল্যের অনুভূতি একেবারেই আলাদা।’’
মেসি আরও একটা কারণে খুশি। বিদায়বেলায় কিংবদন্তি শিল্পীকে তিনি ‘ডাবল’ (লা লিগা ও কোপা দেল রে) দিতে পেরেছেন, ‘‘আমার মন খুব খারাপ। জাভি আর মাসচেরানো চলে যাওয়ার সময়ও এ রকম হয়েছিল। এবার আন্দ্রের পালা। ক্লাবের কাছে ওর চলে যাওয়াটা দুর্ভাগ্যের। তবু আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করলাম আন্দ্রের বিদায় স্মরণীয় করে রাখতে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে ‘ত্রিমুকুট’ দিতে পারলে আরও ভাল হত। তবে এই জোড়া খেতাবও ওরই প্রাপ্য। আন্দ্রের নতুন শুরুটা আরও ভাল হোক।’’
বার্সায় শেষ মরসুমে লা লিগা জিততে পেরে খুশিতে ভাসলেন ইনিয়েস্তা নিজেও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই আনন্দ বর্ণনার ভাষা আমার জানা নেই। তার উপর এখানে ওদের (দেপোর্তিভো) চূড়ান্ত খারাপ সময়েও এতটা ভালবাসা পাব সত্যি ভাবিনি। এই দিনটার স্মৃতি চিরকাল মনে থাকবে।’’ ইনিয়েস্তা আরও জানিয়েছেন, স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ অভিযানে আগে এই সাফল্য তাঁকে নতুন ভাবে উদ্বুদ্ধ করবে।
কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে শেষটা হলে কি আরও ভাল হত না? এমন প্রশ্নে স্পেনের মাঝমাঠের শিল্পীর জবাব, ‘‘নিশ্চয়ই হত। কিন্তু সব প্রতিযোগিতা সমান না। লা লিগা যেমন প্রত্যেক সপ্তাহে খেলে টানা জিতে যেতে হয়। তার চাপ আলাদা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আবার একেবারে অন্য রকম। তবে এবার না পারলেও আমার আশা, পরের বার বার্সা আরও ভাল খেলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy