মেসির ফ্রি-কিক ম্যাজিক। দর্শক সেভিয়া ডিফেন্স। ছবি: এএফপি।
বার্সেলোনা-৫ (মেসি-২, রাফিনহা, সুয়ারেজ, পেদ্রো)
সেভিয়া-৪ (বানেগা, রেইস, গামেরো-পেনাল্টি, কোনোপ্লিয়াঙ্কা)
এক দিন আগেই আনন্দবাজারে পড়েছিলাম লিওনেল মেসি নাকি মাঝমাঠে খেলার কথা বলেছে। মঙ্গলবার রাতে তাই দেখার ইচ্ছা ছিল মাঝমাঠে মেসি খেলে কি না? আর খেললেও কেমন খেলে?
তবে একশো কুড়ি মিনিটের সুপার কাপ শেষে মোদ্দা কথা এটাই— ফের মেসি-ম্যাজিকে সম্মোহিত হলাম। বার্সেলোনা জার্সিটা পরলে ও যে একটা অন্য মাত্রায় চলে যায় সেটার আবার প্রমাণ পেলাম।
প্রথম পনেরো মিনিটের মধ্যে মেসির দুটো ফ্রি-কিক গোল দেখার পরে কয়েক ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও শট দু’টো চোখের সামনে ভাসছে! কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলব? প্রথমটা যেমন সেভিয়া গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে মাথার উপর দিয়ে। দ্বিতীয়টা আবার চমকপ্রদ ভাবে ভাসানো। মনে হচ্ছিল, ট্রেনিং গ্রাউন্ডে কোনও ফ্রি-কিক প্র্যাকটিস দেখছি। মেসি উইংয়ে শুরু করলেও ম্যাচ যত এগোচ্ছিল অনেক বেশি ডিপ মিডফিল্ডে নেমে আসছিল। ওখান থেকেই খেলাটা পরিচালনা করছিল।
টিভিতে তাই মেসিকে মাঝমাঠে দেখে আমি অন্তত অবাক হইনি। কয়েক মাস আগেই তো ওকে কোপা আমেরিকায় দেখেছি প্রায় সব ম্যাচেই মাঝমাঠ থেকে খেলছিল। তাতেও ওকে দশে দশ দিয়েছিলাম। সুপার কাপে তো পুরো পয়েন্ট দেবই। আসলে এক জন ফুটবলার যখন সাতাশ পেরিয়ে যায়, অনেক সময় গতি হারায়। অনেক সময় সহজ জিনিসগুলো ঠিকঠাক করতে পারে না।
কিন্তু মেসি অসামান্য প্রতিভা। ঈশ্বরপ্রদত্ত ফুটবল স্কিল। তবে এখন ওর বয়স আর বাইশ নয়। টানা ম্যাচ খেলার একটা ধকল তো আছেই। আবার বার্সেলোনা থেকে জাভি অবসর নেওয়ার পরে ওদের মাঝমাঠে একটা নিঁখুত পাসার দরকার। তাই মেসিকে মিডফিল্ডে খেলানোটা কোচ লুই এনরিকের একটা দুর্দান্ত চাল। ওর নিঁখুত পাস দেওয়ার ক্ষমতা, চার-পাঁচ জনকে টানা ড্রিবল করার ক্ষমতা— আমার মতে মাঝমাঠে এসে আরও বেশি কার্যকর হবে। কারণ ফুটবলে মাঝমাঠ দখল রাখতে পারলে এমনিতেই জেতার কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়। সেভিয়া ম্যাচেও মেসি কী সুন্দর-সুন্দর সব কম্বিনেশন করছিল টিমমেটদের সঙ্গে। ওয়ান-টু খেলে দুর্দান্ত সব মুভ।
আসলে গত রাতে যেন এক নতুন মেসিকে দেখলাম। যে হয়তো অত ডিরেক্ট নয়। তবে বল হোল্ড করার দুর্দান্ত ক্ষমতা রাখে। যে হয়তো অত বেশি গোলে শট মারে না। তবে অনবরত গোলের পাস বাড়িয়ে যায়। যে হয়তো খেলাটা দুই উইংয়ে বেশি ছড়ায় না। তবে মাঝমাঠে দারুণ সব মুভ তৈরিতে আসল সাহায্যটা করে।
এমনকী মেসির শট থেকেই তো রিবাউন্ডে একস্ট্রা টাইমে গোল করে বার্সাকে ম্যাচ জেতাল পেদ্রো। বলতেই হচ্ছে, কিছু দিন আগে আর্জেন্তিনা-জার্সি পরা মেসির চেয়ে বার্সার মেসিকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখাল। আর্জেন্তিনার হয়ে ওকে অনেক বেশি প্রত্যাশার চাপ নিয়ে খেলতে হয়। দেশ হারলেই সমস্ত দোষ ওর উপরে পড়ে। ক্লাব বার্সায় অনেক ফুরফুরে মেজাজে খেলতে পারে ও। আর এই টিমে ওর আশেপাশেও অনেক দক্ষ প্লেয়ার আছে। যারা মেসির ফুটবলের সঙ্গে খেলতে অভ্যস্ত। তাই এখানে যত দোষ নন্দ ঘোষের মতো অবস্থা হয় না মেসির।
তবে একটা কথা। সুপার কাপে কোনওক্রমে পার পেয়ে গেলেও বার্সার ডিফেন্স আরও পোক্ত হওয়া দরকার। সেন্ট্রাল ব্যাকে পিকে-ম্যাথিউ জুটি দিয়ে মনে হয় চলবে না। সেভিয়া ৪-১ থেকে ৪-৪ করার পরে নিশ্চয়ই এনরিকে ভাববেন এর সঠিক ওষুধ কী!
ফুটবল এখন এতটাই আক্রমণাত্মক হয়ে গিয়েছে যে, নিজের ডিফেন্স নিশ্ছিদ্র না হলে ট্রফি জেতা কিন্তু মুশকিল। হয়তো সেই দলে এক জন মেসি থাকলেও!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy