Advertisement
১৮ মে ২০২৪
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ: বিদায় লিয়োনেল মেসি, দুরন্ত দে রোসি

‘বিপর্যয়, এই বার্সার এটাই প্রাপ্য ছিল’

বিশ্ব ফুটবলে বার্সেলোনার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ আক্রমণাত্মক ফুটবল। ইয়োহান ক্রুয়েফ, পেপ গুয়ার্দিওলা থেকে লুইস এনরিকে— প্রত্যেকেই এই দর্শন নিয়ে কোচিং করিয়েছেন।

হতাশ: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অপ্রত্যাশিত হার। বিধ্বস্ত মেসি। ছবি:  গেটি ইমেজেস

হতাশ: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অপ্রত্যাশিত হার। বিধ্বস্ত মেসি। ছবি:  গেটি ইমেজেস

শিশির ঘোষ
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:১২
Share: Save:

এ কোন বার্সেলোনাকে দেখলাম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে এ এস রোমার বিরুদ্ধে!

বিশ্ব ফুটবলে বার্সেলোনার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ আক্রমণাত্মক ফুটবল। ইয়োহান ক্রুয়েফ, পেপ গুয়ার্দিওলা থেকে লুইস এনরিকে— প্রত্যেকেই এই দর্শন নিয়ে কোচিং করিয়েছেন। যে কারণে ম্যাচ হারলেও বার্সেলোনার খেলা মুগ্ধ করেছে। ব্যতিক্রম মঙ্গলবার রাতের আর্নেস্তো ভালভার্দে। কখনও এত রক্ষণাত্মক বার্সেলোনা আমি দেখিনি।

অধিকাংশ ম্যানেজারই প্রতিপক্ষের মাঠে রক্ষণাত্মক নীতি নিয়ে দল মাঠে নামান। কেউ ঝুঁকি নিতে চান না। বার্সেলোনার এই দলটার প্রধান অস্ত্র হচ্ছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। প্রথম পর্বে ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যু-তে রোমার বিরুদ্ধে তারা আগ্রাসী ফুটবল খেলেই ৪-১ জিতেছিল। লিয়োনেল মেসি, লুইস সুয়ারেস ও আন্দ্রে ইনিয়েস্তাকে আটকাতে নাজেহাল হয়ে গিয়েছিলেন রোমা ডিফেন্ডাররা। তা সত্ত্বেও মঙ্গলবার কেন অতিরক্ষণাত্মক ফুটবল খেলালেন ভালভার্দে, বুঝতে পারলাম না। ওসমানে দেম্বেলের মতো ফুটবলারকেও ৮৫ মিনিট পর্যন্ত রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিলেন বার্সা ম্যানেজার! রক্ষণ শক্তিশালী না হলে কখনওই রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে সফল হওয়া যায় না। বার্সেলোনার রক্ষণের গভীরতা অনেক কম। জেরার পিকে, স্যামুয়েল উমতিতি কখনওই কার্লোস পুয়োলের বিকল্প হতে পারেন না। রোমার তিনটি গোলের ক্ষেত্রেই স্পষ্ট ডিফেন্ডারদের ব্যর্থতা।

ম্যাচের ছয় মিনিটে এডেন জেকোর গোলটা যেমন। মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা ‘লং বল’ দুর্দান্ত ভাবে অনুসরণ করে বক্সে পৌঁছে গেলেন জেকো। এগিয়ে আসা বার্সেলোনা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টার স্টেগানকে গতিতে পরাস্ত করে গোল করেন। দ্বিতীয় গোল ৫৮ মিনিটে। শক্তিতে পরাস্ত পিকে। প্রথমে হাত ধরে জেকো-কে টানেন। তার পরে পা দিয়েও আটকে ফেলে দেন। পেনাল্টি থেকে গোল করে গেলেন দে রোসি। তৃতীয় গোল ৮২ মিনিটে। ছয় গজ পেনাল্টি বক্সের মধ্যে থেকে দুরন্ত ‘ফ্লিক হেড’-এ বার্সেলোনা ডিফেন্ডারদের ধোঁকা দিয়ে গোল করে ৩৪ বছর পরে রোমাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে তুললেন কোস্তাস মানোলাস। এই ম্যাচেই শাপমুক্তি ঘটল দে রোসি ও কোস্তাসের! প্রথম পর্বে তাঁদের আত্মঘাতী গোলেই হারতে হয়েছিল রোমাকে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে মেসিদের বিদায়কে অনেকে অঘটন মনে করছেন। রোমা কিন্তু যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে। আতলেতিকো দে মাদ্রিদ, চেলসির মতো দল থাকা সত্ত্বেও গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন জেকো-রা। সেরি আ-তে চার নম্বরে থাকলেও ঘরের মাঠে ভুল রণনীতি নিয়ে নামা বার্সেলোনাকে রোমা খেলতেই দিল না। বার্সেলোনার বিখ্যাত ‘বল পজেশন’-টাও আটকে দিয়েছিল রোমা। ম্যাচের পরিসংখ্যান বলছে, বার্সেলোনার পজেশন (বল দখল) ছিল ৫৩ শতাংশ। রোমার খুব কাছাকাছি, ৪৭ শতাংশ।

মনে হচ্ছে, নেমারের চলে যাওয়াটাও ভোগাচ্ছে বার্সেলোনাকে। ‘এমএসএন’ ছিল যে কোনও প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক। এখন সেখানে দলটা খুবই মেসি-নির্ভর হয়ে গিয়েছে। সুয়ারেসকে দেখে মনে হচ্ছিল, গোলকধাঁধায় পথ হারিয়ে ফেলেছেন। গতির লড়াইয়েও পারেনি বার্সেলোনা। জেকো, দে রোসিরা ঝড় তুলে গেলেন সারাক্ষণ। সেখানে বার্সেলোনাকে দেখে মনে হচ্ছিল নিস্তেজ একটা দল। হতাশার ছবি হয়ে থাকলেন ‘ঈশ্বর’। ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখলেন ঠাণ্ডা মাথার মেসি।

খেলা দেখতে দেখতে মনে পড়ে যাচ্ছিল গত মরসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনা বনাম প্যারিস সাঁ জারমাঁ ম্যাচের কথা। প্রথম পর্বে ০-৪ পিছিয়ে ছিল মেসিরা। ঘরের মাঠে দ্বিতীয় পর্বে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে বার্সেলোনা জিতেছিল ৬-১! মনে পড়ছিল ২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে লিভারপুল বনাম এসি মিলান ম্যাচের কথাও। প্রথমার্ধেই ৩-০ এগিয়ে গিয়েছিল ইতালির দলটি। দ্বিতীয়ার্ধে নাটকীয় ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে টাইব্রেকারে চ্যাম্পিয়ন হয় লিভারপুল।

মঙ্গলবার রাতে রোমার ঐতিহাসিক জয় ঢুকে পড়ল সেই তালিকায়। ম্যাচ জেতার পরে ওদের বিজয়োৎসব দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, এই রাতটা কত স্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতালির ক্লাবের ইতিহাসে!

প্রথম পর্বে রক্ষণের ভুলেই হেরেছিল রোমা। এই ম্যাচে সামান্যতম ভুলও করেনি ওরা। জেকোদের হারানোর কিছু ছিল না। রোমার ফুটবলারদের কাছে এটা ছিল অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। জেকোদের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের রাতে আমার সব চেয়ে কষ্ট হচ্ছিল মেসিকে দেখে। তাঁর এ রকম বিদায় কে আর দেখতে চেয়েছিল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE