Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সরপ্রীতের উত্থানে উচ্ছ্বসিত বিজয়ন
FC Bayern Munich

বায়ার্নের লিগ জয়ে উজ্জ্বল এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত

ভারতের বাছাই করা কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে  সরপ্রীত শোনালেন তাঁর অনুভূতির কথা। বাংলা থেকে ছিল শুধু আনন্দবাজার।

উদয়: বুন্দেশলিগা জয়ের পরে ট্রফি হাতে সরপ্রীত। বায়ার্নে নজর কাড়ছেন। টুইটার

উদয়: বুন্দেশলিগা জয়ের পরে ট্রফি হাতে সরপ্রীত। বায়ার্নে নজর কাড়ছেন। টুইটার

শুভজিৎ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২০ ০৪:৩৪
Share: Save:

বায়ার্ন মিউনিখে অভিষেকের মরসুমে বুন্দেশলিগা জয়ের পর তিন দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছেন সরপ্রীত সিংহ! প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে বায়ার্নের প্রথম দলে সুযোগ পাওয়া থেকে জার্মানির প্রধান লিগ জয়— পুরোটাই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে তাঁর। ভারতের বাছাই করা কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে সরপ্রীত শোনালেন তাঁর অনুভূতির কথা। বাংলা থেকে ছিল শুধু আনন্দবাজার।

ফ্রাঞ্জ বেকেনবাউয়ার, গার্ড মুলার, কার্ল হেইনজ় রুমেনিগে, লোথার ম্যাথাউস, য়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান থেকে সেপ মায়ার, পল ব্রাইটনার, অলিভার কানের মতো কিংবদন্তিদের ক্লাবে এখন খেলছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত! ২১ বছর বয়সি সরপ্রীত বলছেন, ‘‘স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে সবকিছু। প্রথম বুন্দেশলিগায় চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। এই অনুভূতি ব্যাখ্যা করার মতো ভাষা আমার নেই। এখনও ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারিনি।’’ পঞ্জাবের মাহিলপুরের কাছে একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে সরপ্রীতের পরিবার নিউজ়িল্যান্ডের অকল্যান্ডে চলে গিয়েছিল বহু বছর আগে। বায়ার্ন মিডফিল্ডারের জন্ম সেখানেই। তবে বেশ কয়েক বার পূর্বপুরুষের ভিটেয় বেড়াতে এসেছেন তিনি।

বছর দু’য়েক আগে মুম্বইয়ে আন্তর্মহাদেশীয় কাপে নিউজ়িল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ভারতের বিরুদ্ধে। এখনও ভারতীয় দলের বেশ কয়েক ফুটবলারদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে সরপ্রীতের। দু’বছর আগে মুম্বইয়ের সেই প্রতিযোগিতায় বায়ার্ন মিডিয়োকে প্রথম দেখেছিলেন আই এম বিজয়ন। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার কেরল থেকে ফোনে বললেন, ‘‘ভারতীয় হিসেবে গর্ব হচ্ছে সরপ্রীতের জন্য। দু’বছরে অভাবনীয় উন্নতি করেছে। গতি ছিলই। এখন শারীরিক ভাবেও অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। নিজেকে ধরে রাখতে পারলে অনেক দূর যাবে ও।’’ বিজয়নের আক্ষেপ ভারতীয় দলে সরপ্রীত না খেলায়।

সরপ্রীতের বাবা ও দাদা ফুটবল, ক্রিকেট খেললেও ভারতীয় সংস্কৃতির আবহে বড় হওয়া সরপ্রীত বেছে নিয়েছিলেন ফুটবলকেই। তবে এখনও সময় পেলেই ক্রিকেট দেখতে বসে পড়েন টিভির সামনে। তাঁর আদর্শ বিরাট কোহালি। বাড়িতে কথা বলেন পঞ্জাবিতেই।

আরও পড়ুন: মেসিদের কোচ-কাজিয়া, আগ্রহ প্রকাশ জাভির

ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মাত্র পনেরো বছর বয়সে অকল্যান্ড ছেড়ে সরপ্রীত চলে গিয়েছিলেন ওয়েলিংটনে। যোগ দেন ওয়েলিংটন ফিনিক্সের যুব দলে। গত বছর পোলান্ডে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে খেলার সময়ই তিনি চোখে পড়ে যান বায়ার্ন কর্তাদের। যোগ দেন বুন্দেশলিগা চ্যাম্পিয়নদের রিজার্ভ দলে। বায়ার্নের হয়ে প্রাক-মরসুম প্রতিযোগিতা ইন্টারন্যাশনাল কাপে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দরজা খুলে দেয় সিনিয়র দলের। বুন্দেশলিগায় অভিষেক হয় ওয়েডার ব্রেমেনের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি মাঠে নেমেছিলেন ম্যাচের ৮২ মিনিটে। প্রায় ছ’মাস পরে প্রথম একাদশে সুযোগ পান। দিন দশেক আগে ঘরের মাঠে এফসি ফ্রেইবার্গের বিরুদ্ধে ৬৪ মিনিট পর্যন্ত খেলেছিলেন সরপ্রীত। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকেই ইউরোপের ক্লাবে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। বায়ার্ন মিউনিখের মতো দলে সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য।’’

বায়ার্নে যোগ দেওয়ার পরে অভিজ্ঞতা কেমন? সরপ্রীতের কথায়, ‘‘প্রথম দিন থেকেই কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, ফুটবলারেরা আমাকে দারুণ সাহায্য করছেন। প্রত্যেক দিনই আমি শিখছি। ওঁদের সাহায্যেই নিজের খেলার উন্নতি করার চেষ্টা করছি।’’ আরও বলেছেন, ‘‘আমার প্রধান লক্ষ্য এখন বায়ার্নের হয়ে যত বেশি সম্ভব ম্যাচ খেলা।’’

বুন্দেশলিগা শেষ। অগস্টে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের খেলা রয়েছে। সরপ্রীত বলছেন, ‘‘বুন্দেশলিগা জয় স্বপ্নের মতো মনে হলেও, আমাকে উচ্ছ্বাসে গা ভাসালে চলবে না। আমার যাত্রা সবে শুরু হয়েছে। এখনও অনেক দূর যেতে হবে। তাই প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে।’’

সরপ্রীতের পরিবারের সদস্যরাও তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছেন। বায়ার্নের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মিডফিল্ডার বলছিলেন, ‘‘ওঁরা আমাকে বার বার সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, আত্মতুষ্ট হওয়ার কোনও জায়গা নেই। তোমাকে আরও উন্নতি করতে হবে। এখানেই থামলে হবে না। মনে রাখবে, তোমার ফুটবলজীবন সবে শুরু হয়েছে।’’

আপনার এই সাফল্যে পরিবারের সদস্যদের প্রতিক্রিয়া কী? সরপ্রীতের জবাব, ‘‘সকলেই দারুণ খুশি। পরিবার পাশে না থাকলে এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম না। আমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সকলেই অনেক আত্মত্যাগ করেছেন। আশা করছি, এক দিন আমি সকলের লড়াইয়ের মর্যাদা দিতে পারব।’’

বিশ্বফুটবলে নজর কাড়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফুটবলারের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ফ্রান্সের জাতীয় দলের জ়িনেদিন জ়িদানের প্রাক্তন সতীর্থ বিকাশ ধোরাসু। ফরাসি লিগে লিঁয় ছাড়াও খেলেছেন ইটালির বিখ্যাত ক্লাব এসি মিলানে। নিউ ক্যাসল ইউনাইটেড, সান্দারল্যান্ড, কার্ডিফ সিটির হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নজর কাড়া মাইকেল চোপড়া খেলে গিয়েছেন আইএসএলে কেরল ব্লাস্টার্সের হয়ে। আয়াখ্স আমস্টারডামে খেলতেন দুই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফুরজেল ও লুসিয়ানো নরসিংহ। তাঁদের পথে হেঁটেই শিরোনামে এখন সরপ্রীত সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

FC Bayern Munich Bundesliga Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE