পরামর্শ: অধিনায়ক মনোজের সঙ্গে মেন্টর অরুণ। নিজস্ব চিত্র
নিজেদের খোঁড়া গর্তেই মুখ থুবড়ে প়ড়ল বাংলা। বাসিল থাম্পি, সন্দীপ ওয়ারিয়েরদের বিরুদ্ধে জেতার জন্য গতিময় পিচ চেয়েছিল বাংলা। তখন হয়তো অনুমান করতে পারেনি কেউ যে, নিজেদের ব্যাটসম্যানদেরই প্রাণবন্ত পিচে দাঁড়িয়ে থাকার দক্ষতা নেই। যার ফল হাতেনাতে পেতে হল।
প্রথম ইনিংসে ১৪৭ রানে শেষ হওয়ার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলার স্কোর ১৮৪। কেরলের বিরুদ্ধে এক দিন বাকি থাকতেই ন’উইকেটে বিশ্রী হারের ধাক্কায় শুরুতেই তুবড়ে যাওয়ার মুখে রঞ্জি অভিযান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১১ ওভারেই প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় কেরল। এই যাদের অবস্থা, তারা রঞ্জি ট্রফি জিতে গ্রুপ ছবি তুলছে এমন স্বপ্ন দূরতম কল্পনাতেও আসছে না!
চার বছর পরে ইডেনে বিপক্ষ দলের কাছে ছয় পয়েন্ট হারাল বাংলা। ২০১৪-১৫ মরসুমে কর্নাটকের বিরুদ্ধে ৯ উইকেটে হারার পরে ইডেন থেকে কোনও সফরকারী দল ছয় পয়েন্ট তুলে নিয়ে যেতে পারেনি। আর কেরলেরও এটাই ছিল বাংলার বিরুদ্ধে প্রথম রঞ্জি ম্যাচ। সেই ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখলেন জলজ সাক্সেনারা।
বাংলার ক্রিকেটারদের কোন জায়গায় খামতি রয়েছে, সেটা বড় প্রশ্ন নয়। কোন জায়গায় খামতি নেই সেটা নিয়েই বরং আলোচনা হতে পারে। ফিটনেস, টেকনিক, দক্ষতা, মানসিক দৃঢ়তা, সাহস— সব দিক থেকেই বঙ্গ ক্রিকেটে এখন দুর্দশার ছবি। মনোজ তিওয়ারির মতো ব্যতিক্রম বাদ দিলে এই বাংলা দলের ক’জনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতা রয়েছে, তা ভেবে দেখার বিষয়। অথচ, মরসুম শুরুর আগে তাঁদের একাংশই কি না দলের মধ্যে ব্যবধানের কাহিনি নিয়ে সরব হয়েছিলেন! আর সিএবি কর্তারা তাঁদের প্রশ্রয়ও দিয়েছিলেন!
দ্বিতীয় ইনিংসেও ইতিবাচক মনোভাবের পরিচয় দিয়ে মনোজ করে গেলেন ৭৫ বলে ৬২ রান। প্রথম পাঁচ বলের মধ্যে চারটিই বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে ইনিংস শুরু করেন বাংলার অধিনায়ক। তাঁর সঙ্গেই ব্যাট করছিলেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের জুটি দলকে ৮৯ রান উপহার দিলেও তার মধ্যে সুদীপের অবদান ছিল মাত্র ২৫ রান। ১০৪ বল খেলে ৩৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সুদীপ। এত বল খেলার পরেও সন্দীপ ওয়ারিয়েরের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন বাংলার ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ। ঠিক একই জায়গায় সুদীপের ক্যাচ পড়ে ন’রানের মাথায়। কিন্তু সুযোগের সদ্ব্যবহার করার কোনও জেদই দেখা গেল না তাঁর ব্যাটিংয়ে।
মনোজ বলে গেলেন, ‘‘আমাদের ব্যাটসম্যানেরা আউট হওয়ার ভয় পেয়ে ব্যাটিং করছে। এক বার এই চিন্তা মাথায় ঢুকে গেলে রান পাওয়া কঠিন।’’ প্রশ্ন উঠছে, এই মানসিকতা নিয়ে তাঁর দলের ব্যাটসম্যানেরা তা হলে রঞ্জি ম্যাচ জেতাবেন কী করে? দিনের শুরুতে ১৩৯ রানে পিছিয়ে ছিল বাংলা। হাতে ছিল ন’উইকেট। সহ-অধিনায়ক সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ও ওপেনার অভিষেক রামনের থেকে একটি ভাল শুরু আশা করেছিল বাংলা শিবির। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। বিপক্ষ পেসারদের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের পিচেও কাঁপতে শুরু করেছিলেন দুই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান।
যদিও বেশিক্ষণ কষ্ট সহ্য করতে হয়নি রামনকে। সন্দীপ ওয়ারিয়েরের বাউন্সারে নিজের মাথা বাঁচালেও ব্যাট সরাতে পারলেন না। সেখান থেকে মনোজ ও সুদীপ ম্যাচের হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সন্দীপের বলে মনোজের স্টাম্প ছিটকে যাওয়ার পরে দলকে লড়াইয়ের মধ্যে রাখতে পারলেন না সুদীপ। তখন যদি তিনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারতেন, যদি বাংলা একশো রানের ‘লিড’ও তুলে নিতে পারত, হয়তো কিছুটা লড়াইয়ের জায়গা থাকত। ম্যাচের পরে সুদীপকে নিয়ে মনোজ বললেন, ‘‘ওর থেকে আরও ভাল ইনিংস প্রত্যাশা করেছিলাম। দায়িত্ব নিতে তো হবেই। দু’জন ব্যাটসম্যান দিয়ে তো আর ম্যাচ জেতা যায় না। বাকিদেরও খেলতে হবে।’’
মনোজ আউট হওয়ার সময় দলের রান ছিল ১১৫। এর পর মাত্র ৬৯ রানের মধ্যেই ধসে পড়ল দল। প্রথম দিন না হয় পিচের আর্দ্রতা বুঝতে অসুবিধা হয়েছিল ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু তৃতীয় দিনের খটখটে পিচেও কোনও পরিবর্তন নেই। লাঞ্চ ও চা-বিরতির মধ্যে দু’ঘণ্টা সময়ে ব্যাটিংয়ের আদর্শ হয়ে ওঠে ইডেন। কিন্তু বাংলা সেই সময়টাতেই হারাল ছয় উইকেট। কেরলের সন্দীপ ওয়ারিয়ের দ্বিতীয় ইনিংসে নেন পাঁচ উইকেট। মনোজ ও অনুষ্টুপ মজুমদারকে বাদ দিলে বাংলার ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স হতাশজনক বললেও হয়তো কম বলা হবে। পেস-সহায়ক পিচ বলে আমির গনির পরিবর্তে অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান খেলাতে চেয়েছিল বাংলা। তাই সুযোগ দেওয়া হয় ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়কে। প্রথম ইনিংসে তাঁর রান শূন্য। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ক্রিজে থাকার চেয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার তাড়াই বেশি লক্ষ্য করা গেল তাঁর মধ্যে। এম ডি নিধীশের বল ড্রাইভ করে সোজা কভারের হাতে ক্যাচ প্র্যাক্টিস দিয়ে গেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সংগ্রহ ১। বিবেক সিংহ (২৫), অনুষ্টুপ (২৩), শামি (০), অশোক ডিন্ডা (২)-রা লোটাকম্বল গোটাতে আর বেশি সময় নেননি।
স্বপ্ন সফল হওয়া দূরের কথা, বাংলার ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখাই এখন অনেক কঠিন দেখাচ্ছে!
স্কোরকার্ড
বাংলা ১৪৭ ও ১৮৪
কেরল ২৯১ ও ৪৪-১
বাংলা (আগের দিন ৫-১-এর পর দ্বিতীয় ইনিংস)
অভিষেক রামন ক সঞ্জু বো সন্দীপ ১৩
সুদীপ ক জগদীশ বো সন্দীপ ৩৯
মনোজ তিওয়ারি বো সন্দীপ ৬২
অনুষ্টুপ মজুমদার বো থাম্পি ২৩
ঋত্বিক ক জলজ বো নিধীশ ১
বিবেক সিংহ এলবিডব্লিউ বো জলজ ২৫
মহম্মদ শামি বো থাম্পি ১
অশোক ডিন্ডা ক সঞ্জু বো থাম্পি ২
মুকেশ কুমার ন. আ. ৫
ঈশান পোড়েল ক সলমন বো সন্দীপ ০
অতিরিক্ত ১২
মোট ১৮৪
পতন: ১-৫ (কৌশিক, ২.২), ২-২৬ (রামন, ১২.৩), ৩-১১৫ (মনোজ, ৩৬.৩), ৪-১২২ (সুদীপ, ৩৮.২), ৫-১২৭ (ঋত্বিক, ৩৯.৩), ৬-১৬৯ (বিবেক, ৫২.৩), ৭-১৭০ (শামি, ৫৩.১), ৮-১৭২ (ডিন্ডা, ৫৩.৪), ৯-১৭৯ (অনুষ্টুপ, ৫৫.৩), ১০- ১৮৪ (ঈশান, ৫৬.৫)।
বোলিং: সন্দীপ ওয়ারিয়ের ২১.৫-৯-৩৩-৫, বাসিল থাম্পি ১৬-০-৫৯-৩, এম ডি নিধীশ ১৪-১-৭২-১, জলজ সাক্সেনা ৫-০-১০-১।
কেরল (দ্বিতীয় ইনিংস)
অরুণ কার্তিক ন. আ. ১৬
জলজ সাক্সেনা বো মুকেশ ২৬
রোহন প্রেম ন. আ. ২
অতিরিক্ত ০
মোট ৪৪-১
পতন: ১-৩২ (জলজ, ৭.১)।
বোলিং: অশোক ডিন্ডা ৩-১-১৮-০, মহম্মদ শামি ৩-০-১০-০, ঈশান পোড়েল ৩-০-১২-০, মুকেশ কুমার ২-০-৪-১।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy