Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাংলা ফুটবল দলে পুরুলিয়ার দুই কন্যা

শীলার গ্রাম খেদাটাঁড় আর সোনামণি কুসুমটিকরির মেয়ে।

সফল: (বাঁ দিক থেকে) সোনামণি ও শীলা। নিজস্ব চিত্র

সফল: (বাঁ দিক থেকে) সোনামণি ও শীলা। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২৩
Share: Save:

ইচ্ছা থাকলে শুধু আত্মবিশ্বাস ও জেদকে সম্বল করেই যে এগোনো যেতে পারে, ফুটবল পায়ে ভেল্কি দেখিয়ে তা প্রমাণ করলেন পুরুলিয়ার দুই কন্যা— শীলা বাগদি ও সোনামণি মাহাতো। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে ওই দুই তরুণী অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় ফুটবলে বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছেন। দু’জনেই জয়পুরের বাসিন্দা। শীলার গ্রাম খেদাটাঁড় আর সোনামণি কুসুমটিকরির মেয়ে।

জানা গিয়েছে, অনূর্ধ্ব ১৯ বাংলা দলে ট্রায়ালে নজর কাড়েন শীলা ও সোনামণি। বর্তমানে তাঁরা জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতে গোয়ায় রয়েছেন। মঙ্গলবার বাংলার প্রথম ম্যাচ ছিল। দু’জনেই খেলেছেন। ১৪ অগস্ট কন্যাশ্রী দিবসে মুখ্যমন্ত্রী পুরস্কৃত করেছেন শীলাকে। শীলা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আশীর্বাদ করে এগিয়ে যেতে বলেছেন।’’ বিডিও (জয়পুর) নয়না দে বলেন, ‘‘আমাদের দু’টি মেয়ে বাংলা দলে সুযোগ পেয়েছে। এটা কন্যাশ্রী ফুটবলেরই সাফল্য।’’

গত অগস্টে ইউনিসেফের হয়ে যুব বিশ্বকাপের প্রচারে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করা শীলার কথায়, ‘‘ছেলেদের মতো মেয়েরা ফুটবল মাঠ দাপাবে, আমাদের এলাকায় আগে কেউ ভাবতেও পারত না। ছবিটা পাল্টে দেয় কয়েক বছর আগে পুলিশের চালু করা ‘জঙ্গলমহল কাপ’। তখনই আমরা দল গড়ে ফুটবল নিয়ে মাঠে নামি।’’ জেলা পুলিশের আয়োজিত প্রথমবারের টুর্নামেন্টেই নজর কাড়ে জয়পুর।

মাঠে নজর কাড়লেও উঠে আসার পথটা মসৃন ছিল না। খেদাটাঁড় ফুটবল ক্লাবের প্রশিক্ষক জগন্নাথ বাগদির কথায়, ‘‘অভাবী পরিবারের মেয়েদের নিয়মিত ফুটবল-চর্চা করানো কার্যত অবাস্তব ছিল। কিন্তু কয়েকটি মেয়ের মধ্যে প্রতিভা রয়েছে দেখে মনে হয়েছিল, ঘষামাজা করলে তারা অন্তত জেলাস্তরে নজর কাড়তে পারে।’’ তিনি নিয়মিত ওই মেয়েদের অভিভাবকদের বুঝিয়ে আস্থা অর্জন করেছেন, সেই সঙ্গে পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে গিয়েছিলেন। তাতেই তিল তিল করে তৈরি হয় জয়পুর মহিলা ফুটবল দল।

প্রথমে জেলা পুলিশ আয়োজিত জঙ্গলমহল কাপ ফুটবলে সাফল্য। তারপর কন্যাশ্রী কাপ ফুটবল। এই দু’টি প্রতিযোগিতাই বদলে দিল পুরুলিয়ার কন্যাদের রোজনামচা। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘এ বারেও কন্যাশ্রী কাপ ফুটবলে জেলার ২০টি ব্লকে কমবেশি ৮০টি দল যোগ দেয়। কন্যাশ্রী কাপ ফুটবল মেয়েদের যে শুধু মাঠে নিয়ে আসছে তা নয়, তাঁদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়েছে।’’

খেদাটাঁড় ফুটবল দলের প্রশিক্ষক জগন্নাথের কথায়, ‘‘জয়পুর কেন্দ্রের বিধায়ক শক্তিপদ মাহাতো ও থানার প্রাক্তন আইসি সুবীর বাগ প্রচুর সহায়তা করেছেন। সুবীরবাবু অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার পরেও নিয়মিত জয়পুরের মেয়েদের খেলার খবর রাখেন। মেয়েরা প্রতি দিন মাঠে যাচ্ছে কি না খোঁজ রাখেন।’’ তাঁর আক্ষেপ, আর একটি মেয়ে চোট পেয়েছে। না হলে জয়পুর থেকে বাংলা দলে তিন জন প্রতিনিধিত্ব করতে পারত। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েগুলি এ বার পুজোয় আমার কাছে বুট চেয়েছে। খুব ভাল লেগেছে। ওরা মাঠ চিনে গিয়েছে। এটাই চেয়েছিলাম।’’

জগন্নাথ বলেন, ‘‘দু’জনেই অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের মেয়ে। শীলার বাবা ঝড়খণ্ডে একটি মেসে রান্নার কাজ করেন। সোনামণির বাবা গ্রামেই একটি ছোট্ট দোকান চালান। আর্থিক বল না থাকলেও দু’জনেই প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। সেই জোরেই তারা জাতীয় টুর্নামেন্টে খেলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football Puruliya Jungle Mahals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE