জাতীয় গেমসে রবিবার ১০০ মিটার হার্ডলসে জ্যোতি ইয়াররাজি যখন তাঁকে টপকে সোনা জিতলেন, তখনই মনস্থির করে ফেলেছিলেন হুগলির জিরাটের মেয়ে মৌমিতা মণ্ডল। পরের ইভেন্ট ছিল লংজাম্প। তাঁর চোখে তখন সোনার স্বপ্ন। মাঝে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান। কিন্তু ছোটবেলা থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা মেয়েটা ক্লান্ত, অবসন্ন শরীর নিয়েও হার মানেনি। ফলশ্রুতি- ৬.২১ মিটার লাফিয়ে স্বপ্নপূরণ।
বিকেল থেকে চেষ্টা করার পরে রাতে ফোনে ধরা গেলেও ক্লান্তির লেশমাত্র নেই। দুঃখ বলতে মোবাইল খারাপ হয়ে যাওয়া। যে কারণে সকাল থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি। প্রথমে রুপো, তার পরে সোনা পেয়ে কেমন অনুভূতি? ২৩ বছরের মৌমিতার কথায়, “১০০ মিটার হার্ডলসে রুপো জেতায় কিছুটা মনখারাপ ছিল। লংজাম্পে সোনা জয়ের পরে সেই বিষণ্ণতা কেটে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত এটাই আমার কেরিয়ারের সেরা প্রাপ্তি।”
হুগলির জিরাট স্টেশনে মৌমিতার বাবার চায়ের দোকান। মা গৃহবধূ। ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটে উৎসাহ ছিল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে আদর্শ মেনে চার-ছক্কার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু ক্রিকেট খেলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। তাই অ্যাথলেটিক্সে মনোনিবেশ করেন হুগলির মেয়ে।
শ্রীরামপুরে হার্ডলস শুরু করার পরে ভুবনেশ্বরে চলে যান মৌমিতা। সেখানে দু’বছর অনুশীলনের পরে মুম্বইয়ে রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশনের অ্যাকাডেমিতে থেকে নিজেকে
প্রস্তুত করেছেন।
গত বছরই ভুবনেশ্বরে ফেডারেশন কাপ অ্যাথলেটিক্স মিটে একশো মিটার হার্ডলস এবং লংজাম্পে জোড়া ব্রোঞ্জ পেয়েছিল মৌমিতা। সেখানে তাঁর সাক্ষাৎ হয় টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনা জয়ী নীরজ চোপড়ার সঙ্গে। তিনি কী পরামর্শ দিয়েছিলেন? মৌমিতার কথায়, “নীরজ দেশের সবচেয়ে শৃঙ্খলাপরায়ণ অ্যাথলিট। একটাই কথা বলেছিলেন- ‘সাফল্যের কোনও চটজলদি সমীকরণ নেই। শুধু মাঠের মধ্যে নয়, মাঠের বাইরেও শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে চলবে না।’ সেই কথাই মেনে চলার চেষ্টা করছি।”
চ্যাম্পিয়ন: জিমন্যাস্টিক্সে সোনা জয় বাংলার মেয়েদের। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য সরকারের তরফে পদকজয়ী খেলোয়াড়দের জন্য চাকরি এবং আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। সে কথা বলতেই মৌমিতা বলেন, “আমি পূর্ব রেলে চাকরি করছি। বাংলাকে অনেক দিন ধরে জাতীয় প্রতিযোগিতায় পদক দিয়ে এলেও তেমন কোনও সাহায্য পাইনি। তার ফলে একটা সময় মুম্বইয়ে সুযোগ পেয়ে বাধ্য হয়ে চলে আসতে হয়। প্রচারের আলো যেন আমাদের উপরেও পড়ে।”
আগামী লক্ষ্য কী? মৌমিতা বললেন, “পরের বছর এশিয়ান গেমসে ভারতকে পদক দিতে চাই। তার আগে অবশ্য এশিয়ান
চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ফেডারেশন কাপেও সোনা জয় লক্ষ্য।” তাই প্রতিবন্ধকতার যাবতীয় হার্ডলস পিছনে ফেলে দেশকে পদক দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর হুগলির মৌমিতা।
সব মিলিয়ে রবিবার বাংলার জন্য এক উজ্জ্বল দিন। রাতে মেয়েদের আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সের দলগত বিভাগে বাংলা সোনা জেতে। যে দলে রয়েছেন প্রণতি দাস, প্রতিষ্ঠা সামন্ত, বিদিশা গায়েন, ঋতু দাস, জিনিয়া দেবনাথ এবং স্বস্তিকা গঙ্গোপাধ্যায়। এর আগে লন টেনিসে মিক্সড ডাবলসে নীতিন সিংহ এবং যুবরানি বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রোঞ্জ পদক পয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)