শিল্টন, অভিজিতের পারফরম্যান্সে বিদেশি কিপার আমদানির দাবি। ছবি: উৎপল সরকার, শঙ্কর নাগ দাস
এত যুগ ধরে যে সাম্রাজ্যে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল বাঙালিদের, বিদেশি থেকে ভিনরাজ্যের ফুটবলারদের দাপটের বাজারেও যে পজিশনে এত দিন ধুলো জমেনি বাঙালি গর্বে, রবিবার ডার্বির পর সেই গোলকিপিং পজিশন নিয়েও প্রবল সমালোচনার ঢেউ ময়দানে।
বাঙালি স্ট্রাইকার— বহু দিন নেই।
বাঙালি গোলকিপার— রবিবারের ফুটবলমহলের মনে হচ্ছে সেটাও বোধহয় গেল।
মুখ্য দুই চরিত্র—শিল্টন পাল এবং অভিজিৎ মণ্ডল। যাঁদের পারফরম্যান্স এতটাই হতবাক করে ছাড়ছে প্রাক্তন ফুটবলারদের যে তাঁরা গোলকিপিংয়েও এখন বিদেশি আমদানির আওয়াজ তুলে দিচ্ছেন। বহু দিনের প্রথা ভেঙে।
সন্ধে ছ’টা। সবে শেষ হয়েছে কলকাতা লিগের ১৫০তম ডার্বি। ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমে হই-হুল্লোড়ের মেজাজ। মোহনবাগান নিস্তব্ধ। দুুই শিবিরের ছবি নিয়ে মতামত সম্পূর্ণ বিপরীত হলেও, ইস্ট-মোহন খেলা প্রাক্তন গোলকিপারদের মনোভাবে অদ্ভুত ভাবে মিল খুঁজে পাওয়া গেল। মোহনবাগানের টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম সদস্য শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “ফুটবলের মান যে ভাবে বাড়ছে, তাতে গোলকিপারও এ বার থেকে আমদানি করা উচিত। টেকনিক, কোয়ালিটি এবং ফিটনেস। তিনটে জায়গায়তেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে যেমন বিদেশি ফুটবলার নিয়ে আসছি, তেমন গোলকিপারও বিদেশ থেকে আনলে ক্ষতি কী?” ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ও একমত। তাঁর যুক্তি, “খুব কষ্ট হচ্ছে দেখে যে, একটা বল গ্রিপ করতে পারছে না এরা। ফিজিক্যাল ফিটনেস তো ছেড়েই দিলাম। আজ দেখলাম, অভিজিৎ কোমরের নীচের বলকে ফিস্ট করছে। আমার এত বছরের ফুটবল-জীবনে কখনও এ রকম করতে দেখিনি কোনও গোলকিপারকে। আমার মতে, এ বার বিদেশি গোলকিপার নিয়ে আসার কথাও ভাবতে শুরু করে দিতে পারে ক্লাবগুলো।”
এখন আই লিগের প্রায় প্রতিটা ক্লাব থেকেই বাঙালি গোলকিপারদের অস্তিত্ব মুছে যেতে চলেছে। একমাত্র কলকাতার ঠিকানা ছাড়া আর কোনও আই লিগ ক্লাবে ঠাঁই পাচ্ছেন না তাঁরা। শুভাশিস রায়চৌধুরি থেকে সুব্রত পাল, অরিন্দম ভট্টাচার্য, ইশান্ত দেবনাথ— কোনও গোলকিপারেরই ভারতে ক্লাব জোটেনি। অবস্থা এতটাই খারাপের দিকে এগোচ্ছে যে, ইদানীং কলকাতার ক্লাবগুলোতেও অবাঙালি গোলকিপারদের রমরমা বাড়তে শুরু করে দিয়েছে। যেমন ইস্টবেঙ্গলে গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু ছিলেন। এখন লুই ব্যারেটো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাঙালিদের হারিয়ে যাওয়ার পিছনে রহস্য কী? এশিয়ান অলস্টার দলের গোলকিপার এবং প্রাক্তন লাল-হলুদ গোলকিপার কোচ অতনু ভট্টাচার্য বলছিলেন, “এক জন আদর্শ গোলকিপারের যে উচ্চতা থাকা উচিত, সেটা শিল্টন-অভিজিতের নেই। ফিটনেসের অভাব যে দক্ষতা দিয়ে ঢাকবে, সেই ক্ষমতাও তো নেই। তা হলে বিদেশিদের দিকে তাকানো ছাড়া আর গতি কোথায়?”
শিবাজী-ভাস্কর-অতনুরা বিদেশি গোলকিপারের জন্য সরব হলেও, প্রাক্তন তারকা গোলকিপার তরুণ বসু এখনই প্রথা বদলানোর পক্ষে নন। রবিবারের ডার্বি দেখেছেন টিভিতে। পরে রাতে বললেন, “গোলকিপারদের খেলায় আমি খুশি হতে পারিনি। তবে এর জন্য শুধু শিল্টন-অভিজিতকে দোষ দিতে চাই না। ক্লাবে যদি একটা ভাল গোলকিপার কোচ না থাকে তা হলে গোলকিপারদের হাল তো এই হবে। সঠিক ট্রেনিং করা খুব জরুরি। আসলে আমাদের এখানে গোলকিপারদের কথা ভাবে না ক্লাব কর্তারা। তবে আমি বিদেশি গোলকিপারকে সমর্থন করি না। এই একটা জায়গাতেই তো আমরা বাঙালিরা এখনও গর্ব করতে পারি!”
কে জানে, কত দিন আর সেই গর্ব থাকবে। ময়দানে তো প্রবল আলোচনা— দীপেন্দু বিশ্বাস যেমন শেষ বাঙালি স্ট্রাইকার, ঠিক তেমনই শেষ বাঙালি গোলকিপার হিসেবে সুব্রত পালের নামটা বরাবরের মতো উঠে যাবে কি না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy