Advertisement
E-Paper

অঙ্কিতকে নতুন হাসপাতালে সরানোটা ঠিক হয়নি

অঙ্কিত কেশরীর ঘটনাটা শুনে প্রথমেই ফিল হিউজের কথা মনে পড়ে গেল। হিউজের ক্ষেত্রে বল কানের পিছনে এমন জায়গায় লাগে যেখানে ওর মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের প্রধান রক্তশিরা ছিল। ফলে মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছনো বন্ধ হয়ে হিউজের মৃত্যু হয়। চিকিৎসার পরিভাষায় এই চোটকে বলা হয় ‘ভার্টিব্রাল আর্টারি ডিসেক্টিং অ্যানিউরিসম’।

ড. সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৫

অঙ্কিত কেশরীর ঘটনাটা শুনে প্রথমেই ফিল হিউজের কথা মনে পড়ে গেল।

হিউজের ক্ষেত্রে বল কানের পিছনে এমন জায়গায় লাগে যেখানে ওর মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের প্রধান রক্তশিরা ছিল। ফলে মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছনো বন্ধ হয়ে হিউজের মৃত্যু হয়। চিকিৎসার পরিভাষায় এই চোটকে বলা হয় ‘ভার্টিব্রাল আর্টারি ডিসেক্টিং অ্যানিউরিসম’।

অঙ্কিতের ক্ষেত্রে এমন কিছু হয়েছে কি না, আমি জানি না। তবে যা শুনছি, চোট লাগার পর ও মাঠেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিচ্ছিল না। কৃত্রিম ভাবে ওর শ্বাসপ্রশ্বাস চালু করা গেলেও জ্ঞান ফেরেনি। তার মানে চোটটা খুবই গুরুতর ছিল। এমন রোগীকে এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে সরানোটা কিন্তু বড় ঝুঁকি হয়েছে।

অঙ্কিতকে যে ক্রিটিক্যাল কেয়ার থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল, বা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল, এগুলো কোনও নিউরোসার্জনের পরামর্শ মেনে করা হয়েছিল কি? উত্তরটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।

শুনছি প্রাথমিক সিটি স্ক্যানে অঙ্কিতের মস্তিষ্কের একাংশে চাপ পড়েছিল বলে বোঝা গেলেও কোথাও রক্ত জমাট বাঁধা ছিল না। হার্টের অবস্থা দেখতে চিকিৎসকেরা যে সব পরীক্ষা করাতে বলেছিলেন, সেগুলো নাকি করানো হয়নি। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছিল। রবিবার ওকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ফের সিটি স্ক্যান করলে দেখা যায় চোটের জায়গা ক্রমশ ফুলছে। তবে মুখে খাবার খেয়েছিল। যাতে হয়তো মনে হতে পারে যে রোগী সুস্থ হয়ে উঠছে। কিন্তু এই মনে হওয়াটা ভুল হতেই পারে।

ঘাড়ে চোট লাগলে, সেটা রক্তশিরাতেই লাগুক, মস্তিষ্কে লাগুক বা মেরুদণ্ডে, সব ক্ষেত্রেই কিন্তু চোটের কারণে হৃদযন্ত্র এবং শ্বাসপ্রশ্বাস প্রভাবিত হয়। চোটের ধরন দেখে রোগীকে তাই আটচল্লিশ থেকে ছিয়ানব্বই ঘণ্টা পর্যন্ত নজরদারিতে রাখি আমরা। চোটের ধরন অনুযায়ী আঘাত লাগার আটচল্লিশ ঘণ্টা পরও সোয়েলিং শুরু হতে পারে। তাই অঙ্কিত খাওয়াদাওয়া করছিল বলেই সুস্থ হয়ে উঠছিল, এটা জরুরি নয়।

শিরদাঁড়া, ঘাড় বা মস্তিষ্কে চোট লাগলে, আহত ব্যক্তিকে একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নড়াচড়া করতে হয়। যাঁরা স্ট্রেচারে তুলছেন বা স্থানান্তরিত করছেন, তাঁদের এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকা ভীষণ জরুরি। অঙ্কিতকে তো একাধিক বার নড়ানো হয়। মাঠ থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়। আবার এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সময়। এতে ওর চোট আরও জটিল আকার নিয়েছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।

অঙ্কিতের ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল সেটা ওর সমস্ত রিপোর্ট না দেখে বলা সম্ভব নয়। তাই চিকিৎসায় কোনও ত্রুটি ছিল কি না বলতে পারব না। তবে ওর মতো রোগীকে বারবার স্থানান্তরিত করা সত্যিই খুব ঝুঁকির হয়েছে।

হিউজের বা অঙ্কিতের মতো ঘাড় বা মাথার চোট থেকে মৃত্যু কিন্তু ক্রিকেটে বিরলমত ঘটনা। আইস হকির মতো খেলায় এমন ধাক্কাধাক্কি আকছার হয় বলে খেলোয়াড়রা একদম বর্মের মতো পোশাক পরে। ক্রিকেটে তো সেটা সম্ভব নয়। তবে যেটা করা যেতে পারে, এই ধরনের চোট পেলে মাঠ থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের সঠিক পদ্ধতিটা কী, সে ব্যাপারে প্রত্যেক ক্রিকেটার, মাঠে হাজির সাপোর্ট স্টাফ ও টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যদের শিক্ষিত করে তোলা। যাতে স্থানান্তরের সময় চোট আর না বাড়ে।

কলকাতার ট্র্যাফিক সার্জেন্টদের নিয়ে এই ধরনের একটা প্রশিক্ষণ শিবির করে লাভ হয়েছে। কারণ রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটলে সবার আগে ওঁরাই আহত ব্যক্তিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে থাকেন। একই ধরনের শিবির ক্রিকেটেও হওয়া উচিত।

তা হলে হয়তো ভবিষ্যতে আর কেউ অঙ্কিতের মতো আঘাত পেলেও প্রাণ হারাবে না!

লেখক বিশিষ্ট নিউরোসার্জন

Ankit Keshri Ankit Keshri death Phillip Hughes Bengal cricketer Cricket Accident Hospital Kolkata Dr. Sandip Chattopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy