রিও অলিম্পিক্সের আগে লিয়েন্ডার পেজ-রোহন বোপান্না জুটি নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগে বাদ সাধতে পারে বৃষ্টি!
আগামী কাল থেকে এখানে শুরু হচ্ছে এশিয়া-ওশেনিয়া গ্রুপে ভারত বনাম দক্ষিণ কোরিয়া ডেভিস কাপ লড়াই। টুর্নামেন্টের ড্র-ও এ দিন হয়ে গেল। ড্র অনুযায়ী কাল প্রথম সিঙ্গলসে ডেভিস কাপ অভিষেক হবে রামকুমার রামনাথনের। যাঁর প্রতিপক্ষ সিয়ং-চ্যান হন র্যাঙ্কিংয়ে তাঁর থেকে ২০০ ঘর পিছনে। লিয়েন্ডারদের ডাবলস খেলার কথা পরশু। কিন্তু আবহাওয়ার যা অবস্থা তাতে কোনও ম্যাচ আদৌ করা যাবে কি না তা নিয়ে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। এখানে বৃষ্টি চলছে অবিরাম। আবহাওয়া দফতরের খবর, আগামী দু’দিনও একই অবস্থা থাকার প্রবল সম্ভাবনা।
এ দিন ড্র-এর পর লিয়েন্ডার বলেন, ‘‘ঘাসের কোর্টে টেনিস খেলাটা সব সময়ে অনেক বেশি টেকনিক্যাল ব্যাপার। তাই এখানে আবহাওয়া আর পরিস্থিতির সঙ্গে যারা বেশি দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে তারা অনেকটাই সুবিধাজনক জায়গায় থাকবে। আশা করছি সেই সুবিধেটা আমরা নিতে পারব।’’ ড্র-টা ভারতীয় শিবিরের প্রত্যাশা মতোই হয়েছে জানিয়ে লিয়েন্ডার যোগ করেছেন, ‘‘আমরাও চাইছিলাম ড্র-টা যেন এমন ভাবে হয় যাতে রাম প্রথম সিঙ্গলসটা খেলে। সেটাই হল। এখন দেখার, ওদের ডাবলস টিমে ইয়ং-কু লিম খেলে কি না। তবে সব কিছুই আবহাওয়ার উপর নির্ভর করছে। এটুকু বলব, আমরা সব রকমের পরিস্থিতির জন্য তৈরি।’’
লিয়েন্ডার মনে করেন, বৃষ্টি ভেজা কোর্টে খেলতে ভারতের সমস্যা হবে না। কারণ ভারতের অতীতেও ভিজে ঘাসে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বলেছেন, ‘‘আমরা আগেও ভিজে কোর্ট আর মেঘলা আবহাওয়ায় খেলেছি। কলকাতায় সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে একই রকম পরিস্থিতি ছিল। বৃহস্পতিবার সারা রাত বৃষ্টি হয়। শুক্রবার যখন খেলতে নেমেছিলাম তখন কোর্ট পুরো নরম আর স্যাঁতসেঁতে। আসলে ঘাসের সব সময় অসম্ভব যত্ন লাগে।’’
চণ্ডীগড়ের কোর্ট তৈরি করায় আবার বড় ভূমিকা রয়েছে কলকাতার সাউথ ক্লাবের বিশেষজ্ঞদের। লিয়েন্ডার বলেছেন, ‘‘টিম হিসাবে আমরা তৈরি। আমরা প্রত্যেকে পেশাদার আর আবহাওয়া কিন্তু খেলারই অঙ্গ। তবে বৃষ্টিতে কাল যদি কোনও ম্যাচ না-ও হয়, শনিবার অন্তত দু’টো সিঙ্গলস আর একটা ডাবলস খেলা হবে বলে আমি আশাবাদী। সে ক্ষেত্রে রবিবার খেলা তাড়াতাড়ি শুরু হবে।’’
অলিম্পিক্সের আগে এই দক্ষিণ কোরিয়া টাই নিয়ে ভারতীয়দের আগ্রহের একটা বড় দিক অবশ্যই লিয়েন্ডার-বোপান্না ডাবলস জুটি। অলিম্পিক্সে তিনি লিয়েন্ডারের নয়, সাকেত মিনেনির সঙ্গে খেলতে চান বলে সরাসরি জানানোর পরেও টেনিস কর্তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে পেজের সঙ্গে জুটি বাঁধতে রাজি হয়েছেন রোহন। সেই জুটি কেমন হয়, দেখতে চান সবাই। রোহন বোপান্না নিজে এ দিন জানিয়েছেন, পুরনো সব তিক্ততা ভুলে লিয়েন্ডারের সঙ্গে পার্টনারশিপ সফল করে তোলাই লক্ষ্য। যার জন্য অলিম্পিক্সের আগে দু’জনে একসঙ্গে দিন পাঁচেক প্র্যাকটিসের সময় পেলেই চলবে বলে বিশ্বাস তাঁর।
শনিবার হং চুং-ইয়ুনসিয়ং চুং জুটির বিরুদ্ধে নামবেন লিয়েন্ডার-বোপান্না। এ দিন রোহন বলেছেন, ‘‘আগে কী হয়েছে সেটা আর ভাবতে চাই না। পিছনে তাকালে সামনে এগোনো যাবে না। আজকের বাস্তব হল রিওয় আমি আর লিয়েন্ডার ডাবলস খেলব। তাই সেরা বোঝাপড়াটা তৈরি করতে হবে।’’ বোপান্নার সাফ কথা, অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ তাঁদের লক্ষ্য নয়, খেলবেন সোনার পদককে পাখির চোখ করেই। বলেছেন, ‘‘ব্রোঞ্জ নয়, এক নম্বরে শেষ করার লক্ষ্য নিয়েই নামব। নিজেদের সেরাটা দিতে হবে আর একটা একটা ম্যাচ ধরে এগোতে হবে।’’ এটাও মানছেন, ‘‘ড্র-এ একটু ভাগ্য লাগবে। আশা করি অলিম্পিক্সে আমরা বাছাইয়ের মর্যাদা পাব।’’
নিজেদের সেরাটা দিতে হলে পারস্পরিক বোঝাপড়া জমাট হওয়া জরুরি। এর আগে লিয়েন্ডার-বোপান্না ডেভিস কাপে চেক প্রজাতন্ত্রের কাছে হারলেও দুই সেটে পিছিয়ে গিয়েও দারুণ ঘুরে দাঁড়িয়ে হারিয়েছিলেন সার্বিয়াকে।
গতকাল লিয়েন্ডার চণ্ডীগড় পৌঁছনোর পর ঘণ্টা দেড়েক একসঙ্গে প্র্যাকটিস করেন দু’জনে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ ছাড়াও রিওর আগে দিন পাঁচেক একসঙ্গে প্র্যাকটিস করার সুযোগ পাবেন দু’জনে। রোহনের মতে বোঝাপড়া ঝালিয়ে নিতে সেটাই যথেষ্ট। ‘‘আমরা দু’জনেই পেশাদার। সার্কিটে সব সময় নতুন নতুন পার্টনারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত। তাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে সেটা কাজে লাগানোর জন্য পাঁচ দিনের প্রস্তুতিই যথেষ্ট,’’ দাবি করেছেন তিনি।