Advertisement
E-Paper

বিজয়কে পেনের তির, বিরাটকে নিশ্চয়ই তোমরা পছন্দ করো না

পার্‌থে একটা লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে সমতা ফেরানোর দিকে এগোচ্ছে। অন্যটায় দু’দলের যুযুধান অধিনায়ক জড়িয়ে পড়েছেন তীব্র স্লেজিং-যুদ্ধে। 

সুমিত ঘোষ 

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২৪
টক্কর: রান নেওয়ার সময় প্রায় ধাক্কাধাক্কি দুই অধিনায়ক, বিরাট কোহালি ও টিম পেনের। সোমবার পার্‌থে। এপি

টক্কর: রান নেওয়ার সময় প্রায় ধাক্কাধাক্কি দুই অধিনায়ক, বিরাট কোহালি ও টিম পেনের। সোমবার পার্‌থে। এপি

পার্‌থে একটা লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে সমতা ফেরানোর দিকে এগোচ্ছে। অন্যটায় দু’দলের যুযুধান অধিনায়ক জড়িয়ে পড়েছেন তীব্র স্লেজিং-যুদ্ধে।

সিরিজ শুরুর আগে ভাল ছেলের মতো তাঁরা দাবি করেছিলেন, এ বারের সিরিজ অন্য রকম হতে যাচ্ছে। অতীতের মতো কেউ আর সীমানা অতিক্রম করতে চান না। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে এসেই সে সব প্রতিশ্রুতি আর সৌজন্য ভেঙে পড়ার মুখে।

পার্‌থে এখনও পুরোপুরি সীমানা অতিক্রম তাঁরা করেননি ঠিকই। কিন্তু যে রকম গোলাবারুদ জমতে শুরু করেছে, যে কোনও মুহূর্তে বড় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে এমনই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে যে, দুই অধিনায়কের এই স্লেজিং-সংঘাত নিয়ে দু’দেশের প্রাক্তনরাও বাগ্‌যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। মিচেল জনসন তোপ দেগেছেন বিরাটকে। আবার সৌরভের টিম ইন্ডিয়ার হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ওপেন করে যাওয়া আকাশ চোপড়া পাশে দাঁড়িয়েছেন ভারত অধিনায়কের।

রবিবার থেকেই মাঠের মধ্যে দুই অধিনায়ক বিরাট কোহালি এবং টিম পেনের মধ্যে খটাখটি চলছিল। গত কাল পেন ব্যাট করার সময়ে কোহালি তাঁকে বলেন, ‘‘এখানে ২-০ হয়ে গেলে তোমার কী হবে?’’ অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক পাল্টা যে জবাব দেন, তার বাংলা করলে এ রকম দাঁড়ায়, ‘‘উদ্ধত যুবক, জিততে গেলে তোমাদের ব্যাটও তো করতে হবে।’’

সোমবার সকাল থেকে কোহালি বনাম পেন সংঘাতের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। অপরাজিত ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নেমে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক দারুণ লড়াকু ইনিংস খেলতে থাকেন। কোহালি প্রথমে স্লিপ কর্ডনে ছিলেন। পেন নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে যেতেই মিড-অনে চলে আসেন তিনি। সেখান থেকে চলতে থাকে বিরাট-বাণ। চুপ থাকেননি পেনও। পাল্টা জবাব দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিছুক্ষণ বিরাট চুপ থাকায় অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক ফের চেঁচিয়ে বলেন, ‘‘তুমিই তো গত কাল থেকে মেজাজ হারাচ্ছিলে। এখন আবার ঠান্ডা হওয়ার চেষ্টা করছ কেন?’’ ওই সময়ে প্রধান আম্পায়ার ছিলেন ক্রিস গাফানে। তাঁর সামনেই বাগ্‌যুদ্ধ চলতে থাকে। তখন হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হন আম্পায়ার। দু’জনকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন, ‘‘অনেক হয়েছে, অনেক হয়েছে। এ বার তোমরা থামো। ভুলে যেয়ো না, তোমরাই দু’দলের অধিনায়ক।’’ কিন্তু পেনকে তাতেও থামানো যায়নি। স্টাম্প মাইক্রোফোনে শোনা যায়, তিনি আম্পায়ারকে বলছেন, ‘‘আমাদের মধ্যে শুধুই একটু কথাবার্তা চলছে। তার বেশি কিছু নয়। কেউ কারও প্রতি অসম্মানজনক কিছু করছি না।’’ তার পরেই বিরাটকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘মাথা ঠান্ডা রাখো বিরাট।’’

স্কোরকার্ড অস্ট্রেলিয়া ৩২৬ ও ২৪৩ ভারত ২৮৩ ও ১১২-৫ অস্ট্রেলিয়া (আগের দিন ১৩২-২ পর থেকে দ্বিতীয় ইনিংস) অ্যারন ফিঞ্চ ক পন্থ বো শামি ২৫ খোয়াজা ক পন্থ বো শামি ৭২ পেন ক কোহালি বো শামি ৩৭ প্যাট কামিন্স বো বুমরা ১ মিচেল স্টার্ক বো বুমরা ১৪ নেথান লায়ন ক হনুমা বো শামি ৫ জশ হেজলউড ন. আ. ১৭ অতিরিক্ত ১৫ মোট ২৪৩ পতন: ১-৫৯ (হ্যারিস, ১৭.২), ২-৬৪ (মার্শ, ২০.৫), ৩-৮৫ (হ্যান্ডসকম্ব, ২৫.১), ৪-১২০ (হেড, ৪০.১), ৫-১৯২ (পেন, ৭৮.৫), ৬-১৯২ (ফিঞ্চ, ৭৮.৬), ৭-১৯৮ (খোয়াজা, ৮২.১), ৮-১৯৮ (কামিন্স, ৮৩.৩), ৯-২০৭ (লায়ন, ৮৬.৫), ১০-২৪৩ (স্টার্ক, ৯৩.২)। বোলিং: ইশান্ত শর্মা ১৬-১-৪৫-১, যশপ্রীত বুমরা ২৫.২-১০-৩৯-৩, মহম্মদ শামি ২৪-৮-৫৬-৬, উমেশ যাদব ১৪-০-৬১-০, হনুমা বিহারী ১৪-৪-৩১-০। ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস) কে এল রাহুল বো স্টার্ক ০ মুরলী বিজয় বো লায়ন ২০ চেতেশ্বর পূজারা ক পেন বো হেজলউড ৪ বিরাট কোহালি ক খোয়াজা বো লায়ন ১৭ অজিঙ্ক রাহানে ক হেড বো হেজলউড ৩০ হনুমা বিহারী ন. আ. ২৪ ঋষভ পন্থ ন. আ. ৯ অতিরিক্ত ৮ মোট ১১২-৫ পতন: ১-০ (রাহুল, ০.৪), ২-১৩ (পূজারা, ৩.৫), ৩-৪৮ (কোহালি, ১৯.১), ৪-৫৫ (বিজয়, ২১.৫), ৫-৯৮ (রাহানে, ৩৪.৫)। বোলিং: মিচেল স্টার্ক ১০-২-২৮-১, জশ হেজলউড ১১-৩-২৪-২, প্যাট কামিন্স ৮-০-২৪-০, নেথান লায়ন ১২-২-২০-২।

এখানেই শেষ হয়নি। এক বার রান নিতে গিয়ে দু’জনের শারীরিক সংঘর্ষও হয়। একেবারে শেষ মুহূর্তে পেন এবং বিরাট নিজেকে সংবরণ করে নেন। না হলে ধাক্কাধাক্কি হওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যেই পেনের ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি কোহালি। তখন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক বলে ওঠেন, ‘‘ঠিকই বলেছ। আমি কোনও কাজের নয়। আসলে আমরা সবাই তো আর কিং হতে পারি না!’’

কেউ কেউ বলছেন, পেনের দৌড়ের পথে এসে গিয়ে কোহালি সীমা লঙ্ঘন করেছেন। জোরে ধাক্কা লেগে গেলে আর একটা বিশ্রী ঘটনা হতে পারত। আবার কোহালি আউট হওয়ার পরে পেনের একটা মন্তব্য নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। এম বিজয় ব্যাট করার সময়ে তাঁর কানের কাছে পেন বলতে থাকেন, ‘‘বিজয়, আমি জানি বিরাট কোহালি তোমাদের ক্যাপ্টেন। কিন্তু নিশ্চয়ই ওকে তোমরা পছন্দ করো না। এ রকম একটা ছেলেকে কী করে পছন্দ করবে!’’ অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যমেই অনেকে বলেছেন, অতিথি দলের ক্যাপ্টেনকে নিয়ে এমন একটা মন্তব্য করা উচিত হয়নি পেনের। তা হলে আর বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারি-উত্তর এত চরিত্র শুদ্ধির বাণি শোনানো হচ্ছিল কেন!

অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যমে এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘‘আমি বিজয় হলে রেগে যেতেই পারতাম। আমার ক্যাপ্টেনকে নিয়ে কেন এ রকম মন্তব্য করবে?’’ আর এক জনের মন্তব্য, ‘‘আমি বিজয় হলে পাল্টা পেনকে বলতাম, নিজের চরকায় তেল দে। আমার ক্যাপ্টেনকে নিয়ে তোর ভাবার দরকার নেই।’’

সব মিলিয়ে স্লেজিংকে ঘিরে ফের সেই উত্তাল পরিস্থিতি আর ক্রিকেট পৃথিবী দু’ভাগ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। কোহালি বনাম পেন বাগ্‌যুদ্ধের বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন মিচেল জনসন। তিনি দুপুরের দিকে নিজের দেশের সম্প্রচারকারী চ্যানেলে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সঙ্গে লাঞ্চের সময়ে কথা বলে এসেছেন। তাঁরা তাঁকে জানিয়েছেন, কোহালি আম্পায়ারের কাছে পেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। জনসন দাবি করেন, ‘‘অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারেরা আমাকে জানিয়েছে, কোহালি আম্পায়ারকে বলেছে, পেন আমার সঙ্গে বার বার কথা বলতে আসছে। আপনি ওকে থামতে বলুন।’’ চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় এসে চার টেস্টে চারটি সেঞ্চুরি করার সময়ে কোহালির সঙ্গে বার বার খটাখটি লেগেছিল জনসনের। এক বার জনসনকে বাউন্ডারি মেরে ‘ফ্লাইং কিস’ও ছুড়ে দিয়েছিলেন কোহালি। দেখা যাচ্ছে পুরনো ঝাল এখনও মেটেনি। জনসন এ দিন কোহালিকে নিয়ে বললেন, ‘‘সিরিজ শুরুর আগে ও নিজেই বলেছিল, অনেক পাল্টে গিয়েছে। এখন অনেক পরিণত হয়েছে। বলল, নিজেরা না কি স্লেজিং শুরু করবে না। কিন্তু এটা কী দেখছি! ও তো ক্রমাগত পেনকে কথার স্প্রে করে গেল।’’ কাকতালীয়, মহম্মদ শামির দুরন্ত বাউন্সারে মুখ বাঁচাতে চাওয়া পেনের ক্যাচটা লুফলেন কোহালি। ব্যঙ্গাত্মক হাসি দেখা গেল তাঁর মুখে। উইকেটের উৎসব করতে আসা ভারতীয় ফিল্ডারদেরও দেখা গেল উত্তেজিত। পেন প্যাভিলিয়নের দিকে যাওয়ার আগে আর এক প্রস্থ কথা কাটাকাটি হয়। আবার নেথান লায়ন চতুর ডেলিভারিতে কোহালিকে ফেরাতেই উত্তেজিত ভাবে লাফাতে দেখা যায় পেনকে। দ্রুত সেলিব্রেশনে যোগ দেন তাঁর বাকি সতীর্থরা।

যদিও দিনের খেলা শেষে মহম্মদ শামি এবং জশ হেজ্‌লউড বলে গেলেন, কোনও পক্ষই সীমানা অতিক্রম করেনি। শামির মন্তব্য, ‘‘কেউ কিছু একটা বললে তার উত্তরে হয়তো প্রতিপক্ষও বলছে। এর বেশি কিছু নয়। এ রকম হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে, আবেগের মুহূর্তে কিছু কথাবার্তা তো হতেই পারে। আমার মনে হয়, দর্শকেরাও সেটা উপভোগই করে।’’ আর হেজ্‌লউড বার বারই বলে গেলেন, কথা কাটাকাটি হলেও কেউ ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন না। বললেন, ‘‘আমার মনে হয়, মজার ছলেই সব কিছু ঘটেছে। খুব সিরিয়াস ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। এ ধরনের সিরিজে একটু কথাবার্তা হবেই। কিন্তু পুরোটাই সঠিক স্পিরিটে চলছে।’’

অতীত ইতিহাস বলছে, স্পিরিট মেনে চলতে চলতেই হঠাৎ করে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে আর বিতর্কের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এ বারও ধিকি ধিকি আগুন জ্বলা কিন্তু শুরু হয়েছে! মাঙ্কিগেটের পরে কি এ বারে দুই অধিনায়ককে ঘিরে স্লেজিংগেট? সিটবেল্ট বেঁধে নিন, ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ‘টেক-অফ’ করছে!

Cricket Border-Gavaskar Trophy 2018 India Australia Virat Kohli Tim Payne
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy