Advertisement
E-Paper

ও’কিফের মুখের উপর যোগ্য জবাব শাস্ত্রীর

কোনও স্টাম্প মাইক্রোফোন ছিল না তাঁর সেই মন্তব্যকে ধরার জন্য। তাই টিভি-তে খেলা দেখতে বসা ক্রিকেট ভক্তরা হয়তো শুনতেই পাননি। ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া— চলতি সিরিজের সেরা স্লেজিং শোনা গেল দ্বিতীয় দিন  খেলা শেষে। 

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২২

কোনও স্টাম্প মাইক্রোফোন ছিল না তাঁর সেই মন্তব্যকে ধরার জন্য। তাই টিভি-তে খেলা দেখতে বসা ক্রিকেট ভক্তরা হয়তো শুনতেই পাননি। ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া— চলতি সিরিজের সেরা স্লেজিং শোনা গেল দ্বিতীয় দিন খেলা শেষে।

দু’দলের কোনও ক্রিকেটার নয়, তা এল ভারতীয় দলের হেড কোচের মুখ থেকে। তিনি— রবি শাস্ত্রী প্রত্যাঘাত করলেন কেরি ও’কিফকে। একেবারে মুখের উপরে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৪টি টেস্ট খেলা প্রাক্তন লেগস্পিনার ও’কিফ গত কাল মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘মায়াঙ্ক নিশ্চয়ই ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন রেলওয়েজ ক্যান্টিন বয়দের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে।’’ বলে খুব তাচ্ছিল্য সহকারে তিনি হাসতে থাকেন। ভারতীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় কারণ অস্ট্রেলিয়ার সম্প্রচারকারী চ্যানেলে বসে খেলা চলাকালীন ধারাভাষ্য দিতে দিতে এই কথাটা বলেন ও’কিফ। এমনও বলেন যে, মায়াঙ্ক যাঁদের বিরুদ্ধে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন, তাঁদের বোলিং আক্রমণ রেলওয়েজের শেফ ও ওয়েটারদের নিয়ে তৈরি। অনেকে অভিযোগ জানাতে থাকেন, বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার।

শাস্ত্রী গত কালই সন্ধের দিকে জানতে পারেন, তাঁর দলের নবাগত ওপেনারকে নিয়ে এমন মন্তব্য করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সম্প্রচারকারী চ্যানেলে। শুনেই গুম মেরে যান। ক্রিকেট জীবনে বরাবর অস্ট্রেলিয়ায় এসে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছেন শাস্ত্রী। শোনা যায়, এক বার একটি ম্যাচে দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন মাইক হুইটনি। একটি বল তাঁর দিকে খেলে শাস্ত্রী রান নেওয়ার জন্য এগোচ্ছেন, হুইটনি চেঁচিয়ে উঠে বললেন, ‘‘ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে দ্যাখ, মাথা ভেঙে দেব।’’ সঙ্গে কিছু অশ্রাব্য গালি। শাস্ত্রী কোনও দিনই দমে যাওয়ার পাত্র নন। পাল্টা শুনিয়ে দেন, ‘‘তুই যত ভাল কথা বলিস, তার অর্ধেকও যদি বোলিং করতে পারতিস, টুয়েলফথ ম্যান হয়ে কাটাতে হত না!’’

কোচ হয়ে গিয়েও অস্ট্রেলীয়দের ছেড়ে কথা বলার পাত্র নন তিনি। সকালেই অস্ট্রেলিয়ার সম্প্রচারকারী চ্যানেল ফক্স স্পোর্টস তাঁকে দিনের খেলা শেষে স্টুডিয়োতে আসার আমন্ত্রণ জানায়। শাস্ত্রী তা গ্রহণ করেন এবং তখন থেকেই তক্কে তক্কে ছিলেন, ওকিফকে পেলেই উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বেন।

ভাগ্য তাঁকে সহায় দিল কারণ শাস্ত্রী যখন মঞ্চে এলেন, শেন ওয়ার্নের সঙ্গে বসে আছেন ও’কিফও। সঞ্চালক জিজ্ঞেস করলেন চেতেশ্বর পূজারার ইনিংসের কথা। শাস্ত্রী বলতে শুরু করলেন, ‘‘ওর হাতে ব্যাট আছে আর ওই ব্যাটটা নিয়েই ও ঘুমোতে যাবে। এই হল আমাদের পূজি। পুরনো আমলের সেই ব্যাটসম্যানের আদলে তৈরি। ওর খেলা দেখতে হয়তো এখনকার দর্শকেরা কেউ কেউ পছন্দ করবে না। কিন্তু বারবারই দেখা যায়, যখনই পরিস্থিতি কঠিন হয়ে ওঠে, পূজারা তত প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। সব সময় নিজের উইকেটের উপর মূল্য চাপায় পূজি।’’ সেঞ্চুরি করা তিন নম্বরের প্রশংসা করতে করতেই অভিষেকে সফল ওপেনারের কথা বলতে শুরু করেন শাস্ত্রী, ‘‘কিন্তু মনে রাখতে হবে ওপেনারদের তৈরি করা মঞ্চের কথা। মায়াঙ্ক আগরওয়াল। জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল ছেলেটা। বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম সকাল। সামান্য বেগতিক হলেই দল ৮০-৩ হয়ে যেতে পারত। তখন খেলাটাই সম্পূর্ণ অন্য রকম হয়ে যেতে পারত। মায়াঙ্ক সেটা হতে দেয়নি।’’

আরও পড়ুন: কোহালির কোমরের চোটে উদ্বেগ ও নাটকীয় ডিক্লেয়ার

এর পরেই কেরি ও’কিফের দিকে ফিরে শাস্ত্রীর প্রত্যাঘাত, ‘‘সাহসী ব্যাটিং করে তোমার জন্যও মায়াঙ্ক একটা বার্তা রেখে গেল, ও’কিফ। তুমি যখন অস্ট্রেলিয়ায় ক্যান্টিন খুলবে, মায়াঙ্ক এসে কফির ঘ্রাণ নিয়ে যেতে চায়। যাতে ও বুঝে নিতে পারে, কোথাকার কফিটা বেশি ভাল? তোমার ক্যান্টিনের না কি ওর দেশের ক্যান্টিনের, যেটার কথা তুমি বলেছিলে।’’ শাস্ত্রীর মন্তব্য শুনে পাশে বসা শেন ওয়ার্ন হাততালি দিয়ে ওঠেন। বলেন, ‘‘দারুণ শট, রবি।’’ আর ও’কিফের তখন মুখ লুকোনোর মতো অবস্থা। আমতা আমতা করে তিনি বলার চেষ্টা করেন, ‘‘আমি কিন্তু গত কালই মন্তব্যটা করার পরে ভারতীয় শ্রোতাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।’’

অধিনায়ক কোহালির সঙ্গে রসায়ন সকলের জানা। কী ভাবে দল পরিচালনার কাজ চলে, তা নিয়ে শাস্ত্রী বলে গেলেন, ‘‘দলগত ভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিই। আমার কাজ পরিকল্পনা তৈরি করে অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা করা। তার পরে আরও কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মিলে সেটা আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো হয়।’’ কত বড় ক্রিকেটার কোহালি? আপাতত এই প্রশ্ন নিয়েই উত্তাল ক্রিকেট দুনিয়া। এ দিন কোহালির একটি দর্শনীয় স্ট্রেট ড্রাইভ বাউন্ডারিতে আছড়ে পড়ার পরে আর্কাইভ থেকে বের করে সচিন তেন্ডুলকরের সেই মোহময়ী স্ট্রেট ড্রাইভের অ্যাকশন রিপ্লে দেখানো হচ্ছিল। বারবার তুলনা করা হচ্ছিল, সচিন আর বিরাটের ব্যাটিংয়ের।

শাস্ত্রী যা বলছেন, তাতে সর্বকালের সেরাদের মধ্যে কোহালিকে নিয়ে আলোচনা আরও গতি পেয়ে যেতে বাধ্য। বলছেন, ‘‘আমি এক প্রজন্মের সঙ্গে অন্য প্রজন্মের তুলনা করা পছন্দ করি না। তবে আমি যত ক্রিকেট দেখেছি, তার মধ্যে তিনটে ফর্ম্যাট মিলিয়ে যদি কথা বলতে হয়, আমি এ রকম শাসকের ভঙ্গিতে খুব বেশি ক্রিকেটারকে ব্যাট করতে দেখিনি। সম্ভবত আমাদের প্রজন্মে ভিভ রিচার্ডসকে দেখেছি, তার পরে দেখছি বিরাটকে।’’ পাশে বসা ওয়ার্ন ঘাড় নেড়ে বলে দিলেন, ‘‘ও-ই বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান। অন্তত এই মুহূর্তে। এ নিয়ে কারও কোনও সন্দেহই থাকা উচিত নয়।’’

স্টুডিয়োতে একটু পরে অ্যালান বর্ডার এসে যোগ দিলেন। চেন্নাইয়ের (তখনকার মাদ্রাজ) সেই টাই টেস্টের প্রসঙ্গ উঠে এল। শাস্ত্রী একা টানছিলেন। একটা রান নিয়ে স্কোর টাই করলেন। কোনও রকমে একটা বল খেললেন মণিন্দর সিংহ। পরের বলেই এলবিডব্লিউ। আম্পায়ার বিক্রম রাজুর কালবিলম্ব না করে আঙুল তুলে দেওয়া এখনও ভুলতে পারেন না শাস্ত্রী। ও দিকে, মণিন্দর চেঁচিয়ে প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন যে, বল তাঁর ব্যাটে লেগেছে। নন-স্ট্রাইকার প্রান্ত থেকে শাস্ত্রীও ব্যাট দেখাতে থাকেন আম্পায়ারকে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। সেই ম্যাচের অধিনায়ক বর্ডার এ দিন বললেন, ‘‘আমাদের উৎসব করা দেখে মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা টাই নয়, আমরাই জিতেছি।’’ দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৮ নট আউট শাস্ত্রীকে দেখিয়ে বর্ডার বললেন, ‘‘আমাদের মধ্যে জেতার আনন্দই তৈরি হয়েছিল কারণ রবি ম্যাচটা প্রায় বের করে নিয়েছিল। ৩৪৮ টার্গেট ছিল। দারুণ রান তাড়া করেছিল ভারত।’’

শাস্ত্রী শুনলেন। তিনি এবং মণিন্দর সিংহ— সেই টাই টেস্টের শেষ জুটি এখনও বিশ্বাস করে বল ব্যাটে লেগেছিল। মনে করেন, আম্পায়ার বিক্রমরাজু ইতিহাসের সাক্ষী থাকবেন বলেই আবেদন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনও কিছু না ভেবে আঙুল তুলে দেন।

সেটা ছিল ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৬। বত্রিশ বছর হয়ে গেল। কিন্তু দু’দলের দুই তারকার স্মৃতিচারণে চেন্নাইয়ের সেই ঐতিহাসিক বিকেল ফের যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল মেলবোর্নে!

Cricket Test Border Gavskar Trophy 2018 India Australia Kerry O'Keeffe Ravi Shastri Mayank Agarwal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy