চ্যাম্পিয়নের পরের দিন। প্যারিসে ট্রফি নিয়ে জকোভিচ। ছবি: এএফপি
নোভাকের রোলাঁ গারো জয়ের পর আমরা স্বভাবতই খুশির আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছি। রবিবার রাতভর উৎসব করেছি। শেষ বারো মাসে নোভাক যে অসাধারণ সব কাণ্ড ঘটাল সেগুলো সত্যিই যেন এখনই অনুভব করতে পারছি।
নোভাকের প্রথম ফরাসি ওপেন জেতা নয়, ওর এক ডজন গ্র্যান্ড স্ল্যাম পাওয়াও নয়, আমার মতে ওর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব শেষ চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যামই চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা। যে অনবদ্য সাফল্য ১৯৬৯-এ রড লেভারের পরে সাতচল্লিশ বছরে আর কেউ পায়নি এত দিন। ভাবা যায়! একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততেই না জানি কত বছর লেগে যায়, টানা দু’টো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা ভীষণ ভীষণ কঠিন, কিন্তু টানা চারটে জেতা প্রায় অসম্ভব। নোভাক জকোভিচের টানা চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতাটা তাই আমাদের চিরকাল মনে থাকবে।
নোভাক বনাম অ্যান্ডি শেষ কয়েকটা লড়াইয়ে অ্যান্ডি প্রথম সেট হেরেছে আর শেষ পর্যন্ত ম্যাচও হেরে গিয়েছে। রবিবার ফরাসি ওপেন ফাইনালে আমার মনে হয়, সে জন্য প্রথম সেটে অ্যান্ডি মারে ওর সর্বস্ব দিয়ে বসেছিল। কিন্তু এটা তো স্প্রিন্ট নয়! অনেকটা দূরপাল্লার দৌড়। সে জন্য আমাদের বিশ্বাস ছিল, নোভাক পরে আরও ভাল খেলবে, ঠিক পথে দৌড়বে। আর ম্যাচের শেষের দিকে তো মনে হচ্ছিল, অ্যান্ডির জন্য নোভাকের মধ্যে তখনও প্রচুর গোলাবারুদ মজুত রয়েছে।
অ্যান্ডি দারুণ ছন্দে শুরু করেছিল। প্রায় উড়ছিল। কিন্তু নোভাক ট্রেনটা আটকে দেয় দ্বিতীয় সেটের গোড়ায়। নিজের সার্ভিস ধরে রাখল আর এক বার ৩-১, ৪-১ এগোতেই ম্যাচে নিজেকে একেবারে ঠিকঠাক জমিয়ে ফেলে। ফাইনালে ওঠার পথে নোভাক টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রায় রোজ খেলেছে বটে, তবে অ্যান্ডি তুলনায় বেশি ঘণ্টা খেলেছে এ বার ফরাসি ওপেনে। নোভাকের চেয়ে বেশি সংখ্যায় ম্যারাথন ম্যাচ খেলেছে। রবিবারের ম্যাচটাকে খুঁটিয়ে ভাবলে দেখা যাবে, অ্যান্ডি ক্রমশ একটু স্লো হয়ে পড়েছিল কোর্টে। আর নোভাক ততই আরও ভাল খেলেছে।
এক দিন পিছিয়ে গিয়ে মেয়েদের ফাইনাল নিয়ে বলব, আমি সেরিনার একজন বিরাট সমর্থক। ওকে সুপারউওম্যান বলি। ওর জীবনের গোড়ার দিকের ভীষণ সমস্যাকে মাথায় রাখলে সেরিনার ২১ গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব একটা অবিশ্বাস্য কীর্তি! এটা লিখেও সঙ্গে এ কথাটাও বলব, কোনও পুরুষ বা মেয়ের জন্য সময় একই জায়গায় থেমে থাকে না। এবং শনিবার মুগুরুজাকে তুলনায় বেশি ভাল প্লেয়ার দেখিয়েছে। সারকথাটা হল, মুগুরুজার জয় প্রাপ্য ছিল। আমার টেনিস বুক-এ ও-ই নতুন প্রজন্মের মুখ। মুগুরুজা আরও অনেক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারে, র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে উঠে আসতে পারে।
সেরিনা পাওয়ার টেনিস খেলার জন্য বিখ্যাত। কিন্তু ও যখন হারে তখন ওর সমান পাওয়ারফুল কারও কাছেই হারে। মুগুরুজার প্রথম সার্ভের জোর প্রচণ্ড। বেসলাইন থেকে ভীষণ জোরে রিটার্ন করে। আর এই প্রথম বার সেরিনার সঙ্গে সমানে টক্কর নিতে ও ভয় পায়নি।
রোলাঁ গারোর দ্বিতীয় সপ্তাহটা খুব লম্বা গেল। আবহাওয়া মোটেই ভাল যায়নি। যে জন্য আমাদের সব সময় শিডিউলকে তাড়া করতে হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিদিন খেলতে হয়েছে নোভাককে, বা প্রায় প্রতিদিন। কিন্তু যে ভাবেই হোক, যে কারণেই হোক, দিনের শেষে সব কিছু ঠিক মতো কাজ করেছে। আর সেটাই টিম নোভাককে সবচেয়ে খুশি করছে, তৃপ্তি দিচ্ছে এখন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy