Advertisement
E-Paper

অলিম্পিক্স স্বপ্ন আঁকড়ে প্রস্তুতিতে ডুবে রাখী

নদিয়ার মেয়ে রাখী হালদার এরপরই হতাশ হয়ে পড়েছেন।

 নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০৪:০৬
আশাবাদী: অলিম্পিক্সে যাওয়ার স্বপ্ন ছাড়ছেন না রাখী। ফাইল চিত্র

আশাবাদী: অলিম্পিক্সে যাওয়ার স্বপ্ন ছাড়ছেন না রাখী। ফাইল চিত্র

মীরাবাই চানুর সঙ্গে টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যাওয়া তাঁর প্রায় পাকাই হয়ে গিয়েছিল। কলকাতায় জাতীয় ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় ৬৪ কেজি বিভাগে সোনা পাওয়ার পর তা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। এপ্রিল মাসে তাজিকিস্তানে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জিতলেই তিনি পেয়ে যেতেন অলিম্পিক্সের টিকিট। কিন্তু সেই টুর্নামেন্ট বাতিল হয়ে গিয়েছে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর। নদিয়ার মেয়ে রাখী হালদার এরপরই হতাশ হয়ে পড়েছেন। ধরেই নিয়েছেন অলিম্পিক্স ঠিক সময়ে হলে তাঁর আর যাওয়ার কোনও সম্ভবনা নেই। পাতিয়ালার জাতীয় শিবির থেকে ফোনে বাংলার সোনার মেয়ে সোমবার বলছিলেন, “অলিম্পিক্সে যাওয়াটা আমার স্বপ্ন। বুঝতে পারছি না শেষ পর্যন্ত যেতে পারব কি না। কারণ পরপর সব টুর্নামেন্টই তো বাতিল হয়ে যাচ্ছে। যদি অলিম্পিক্স পিছিয়ে যায়, তবেই হয়তো সুযোগ মিলতে পারে।” তা সত্ত্বেও রাখী অনুশীলন করে চলেছেন জাতীয় কোচ বিজয় শর্মার কাছে। সামনে আপাতত কোনও আশার আলো না দেখলেও, দিনে আট ঘন্টা অনুশীলন করে নিজেকে তৈরি রাখছেন তিনি। বাড়ি থেকে মা সুমিতা হালদারের উদ্বিগ্ন ফোন আসছে করোনা আতঙ্কের সাবধান বাণী নিয়ে। কমনওয়েলথ ও দক্ষিণ এশীয় গেমসে সোনাজয়ী মেয়ে বলছিলেন, “ প্রতিদিন বাড়ি থেকে মা, স্বামী সবাই অন্তত পঁচিশবার ফোন করছেন। জানতে চাইছেন শিবিরের কেউ করোনা আক্রান্ত হয়েছে কিনা? কারও হাঁচি-কাশি হচ্ছে কি না।“ পঞ্জাবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। রাখীর পরিবারের লোকজন কাগজে তা দেখে উদ্বিগ্ন। বারবার তাঁরা রাখীকে বলছেন নদিয়ার হাবিবপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসতে। “কিন্তু ছুটি পেলেও যাব কী করে? বিমান, ট্রেন, বাস সবই তো বন্ধ। খুব চিন্তায় আছি”, বলছিলেন রাখী।

একই অবস্থা অ্যাথলেটিক্সের আভা খাটুয়া, লিলি দাস, সোনিয়া বৈশ্য, সুরভী বিশ্বাস, হিমশ্রী রায়দের। প্রায় পঁচাত্তর জন অন্য রাজ্যের অ্যাথলিটদের সঙ্গে তারাও পাতিয়ালার জাতীয় শিবিরে রয়েছেন। সবাই আশা নিয়ে গত নভেম্বর মাস থেকে শিবিরে রয়েছেন অলিম্পিক্সের যোগ্যতা পাওয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু করোনার জেরে তিনটি গ্রাঁ-প্রি এবং ফেডারেশন কাপ বাতিল করে দিয়েছে সর্বভারতীয় অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন। মেদিনীপুর নারায়গড়ের মেয়ে আভা ফোনে বলছিলেন, “যেখানে নেমে অলিম্পিক্সের যোগ্যতা পাওয়ার আশা করেছিলাম, সবই তো বাতিল হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা অনুশীলন করে চলেছি। বুঝতে পারছি না যোগ্যতা পাওয়ার জন্য এরপর কোন টুর্নামেন্টে আমাদের নামতে হবে।” তাঁর বাবা পেশায় ক্ষেতমজুর লক্ষ্মীকান্ত খাটুয়া উদ্বিগ্ন হয়ে বারবার ফোন করছেন মেয়েকে, শিবিরে কারও করোনা হয়েছে কিনা জানতে চেয়ে। সাউথ এশিয়ান গেমসে শটপাটে সোনাজয়ী মেয়ে বলছিলেন, “জুডো এবং অ্যাথলেটিক্সের জুনিয়র টিমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের রেখে দেওয়া হয়েছে যদি অলিম্পিক্স হয় তাহলে যোগ্যতা অর্জনের কোনও প্রতিযোগিতায় নামানো হবে বলে। কিন্তু শুনছি তো অলিম্পিক্সই হবে না। পিছিয়ে যাবে। এখন শিবির বন্ধ করে দিলেও আমাদের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই। সেটা বাবাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না।”

বাংলার আর এক সোনার অ্যাথলিট হুগলির ত্রিবেনীর লিলি দাসের একই অবস্থা। আটশো মিটার দৌড়ে দেশের অন্যতম সেরা অ্যাথলিট বলছিলেন, “অলিম্পিক্সে যাওয়ার টিকিটের জন্য গ্রাঁ-প্রিতে আমাদের নামার কথা ছিল। এখন তো শুনছি করোনাভাইরাসের জন্য তা হবে না। তাহলে কোন প্রতিযোগিতায় আমাদের নামানো হবে বুঝতে পারছি না। আমরা সবাই খুবই চিন্তায় আছি। অলিম্পিক্স বাতিল হলে যদি শিবির বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলেও সমস্যা। বাড়ি ফিরতে পারব না। আবার শিবির চললেও যে স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছি সেটাও হচ্ছে না। লক্ষ্য না থাকলে কী ভাবে এগোবো।”

মীরাবাই, রাখী, লিলি, সোনিয়া মতো প্রায় একশো জন অ্যাথলিট রয়েছেন পাতিয়ালার শিবিরে। বাহাদুর সিংহ, বিজয় শর্মার মতো জাতীয় কোচেদের কাছে অনুশীলন করছেন। এক সঙ্গে অনুশীলন করলেও তাঁদের উপর কড়া নজর রাখছেন স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার ডাক্তাররা। করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে তাদের নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে।

Coronavirus Pandemic 2020 Tokyo Olympics Rakhi Halder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy