Advertisement
E-Paper

হ্যান্ডবলের মাঠ মাতাচ্ছে পূর্বের ছেলেমেয়েরা

হ্যান্ডবলের মতো তুলনায় অপরিচিত খেলায় তাক লাগিয়ে দিচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের ছেলে-মেয়েরা। কী ভাবে মিলছে সাফল্য? খোঁজ নিলেন আরিফ ইকবাল খানহ্যান্ডবল মূলত শক্তি ও গতির খেলা। হোমারের ওডিসি মহাকাব্যে এই খেলার উল্লেখ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, আধুনিক হ্যান্ডবলের জন্ম জার্মানিতে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে এই খেলা এশিয়ায় জনপ্রিয় হতে শুরু করে।

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩২
ময়দানে: গতি ও শক্তির খেলা হ্যান্ডবল জনপ্রিয় হচ্ছে জেলায়। নিজস্ব চিত্র

ময়দানে: গতি ও শক্তির খেলা হ্যান্ডবল জনপ্রিয় হচ্ছে জেলায়। নিজস্ব চিত্র

ফুটবল বা ক্রিকেট নয়— হ্যান্ডবলে এগিয়ে যাচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুর। সাব জুনিয়র ও জুনিয়র দুই পর্যায়ে নিয়মিত যোগ দেয় এই জেলা। বাংলা দলেও এই জেলার নিয়মিত প্রতিনিধিত্ব থাকছে। হ্যান্ডবলের রাজ্য সংস্থার কর্তারাও এই জেলার ফল নিয়ে আশাবাদী।

হ্যান্ডবল মূলত শক্তি ও গতির খেলা। হোমারের ওডিসি মহাকাব্যে এই খেলার উল্লেখ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, আধুনিক হ্যান্ডবলের জন্ম জার্মানিতে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে এই খেলা এশিয়ায় জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ভারতে নিয়মিত হ্যান্ডবল খেলা শুরু হল ১৯৭২ সালে। ১৯৭৩ সালে খিদিরপুরে রাজ্য হ্যান্ডবল অ্যাসোসিয়েশনের জন্ম। ওই বছরেই তারা হ্যান্ডবলের জাতীয় সংস্থার স্বীকৃতি পায়। এই খেলার নিয়মকানুনে বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন এসেছে। এখন আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দলে ১৬ জন করে খেলোয়াড় থাকেন। মাঠে থাকেন ৭ জন। রিজার্ভ বেঞ্চে ৯ জন। যে কোনও খেলোয়াড়কে যে কোনও সময়ে যতবার খুশি পরিবর্তন করা যায়। রেফারি ৪ জন। মাঠে থাকেন ২ জন, বাকি ২ জন টেবিল অফিশিয়াল। দুই অর্ধে ৩০ মিনিট করে মোট ৬০ মিনিট খেলা হয়। মাঝে ১০ মিনিটের বিরতি।

রাজ্য হ্যান্ডবল অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে হলদিয়ায় জাতীয় পর্যায়ের হ্যান্ডবল ফেডারেশন কাপ হয়েছিল। জেলার বেশিরভাগ মানুষ সেই প্রথম হ্যান্ডবল খেলার নাম শুনেছিলেন। সেই প্রতিযোগিতা সফল ভাবে আয়োজিত হওয়ার পরে ২০১০ সালে হলদিয়াতেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রীতি হ্যান্ডবল খেলা হয়। রাজ্য হ্যান্ডবল সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপ কোলে জানান, আগে হ্যান্ডবলের রাজ্য সংস্থার নীচে কিছু ক্লাব ইউনিট ছিল। ২০০৪ সাল থেকে সেই কাঠামো বদলে যায়। রাজ্য সংস্থার অধীনে জেলা ইউনিট তৈরি হয়। আলাদা করে ক্লাব ইউনিট তুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে রাজ্য হ্যান্ডবল সংস্থার অধীনে ১৮টি জেলা ইউনিট রয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দল পেতে অসুবিধা হয় না।

এক সময়ে অবিভক্ত মেদিনীপুরের মধ্যে হলদিয়া, মহিষাদল ও নন্দীগ্রাম ফুটবলের অন্যতম ‘সাপ্লাই লাইন’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এই সব এলাকা থেকে কলকাতা ময়দানে দাপিয়ে খেলেছেন এমন ফুটবলারের সংখ্যা কম নয়। এখন ফুটবলের রাজ্য স্তরে পূর্ব মেদিনীপুরের ছেলে-মেয়ের সংখ্যা খুব কম। ফুটবলের সেই অভাব পূরণ করে দিচ্ছে হ্যান্ডবল। রাজ্য হ্যান্ডবল অ্যাসোসিয়শনের কেউ কেউ তো হলদিয়াকে ‘হ্যান্ডবল হাব’ হিসেবে ডাকতে শুরু করেছেন। কারণ হলদিয়ায় ১৯টি স্কুলে বর্তমানে ভলিবলের প্রশিক্ষণ চলে। ওই স্কুলগুলিতে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা দল রয়েছে। তার মধ্যে বাড়ঘাসিপুর, দোরো শোভারামপুর, পৌর পাঠভবন, লাবণ্যপ্রভা স্কুলের হ্যান্ডবল দল বেশ শক্তিশালী। শুধু দল তৈরি নয়, কয়েকটি স্কুলে হ্যান্ডবলের উপযুক্ত মাঠ ও গোলপোস্ট রয়েছে। পৌর পাঠভবনের ক্রীড়া শিক্ষক সঞ্জয় মান্না জানান, তাঁদের স্কুলে প্রতি বছর ছেলে ও মেয়েদের আলাদা প্রতিযোগিতা হয়। ছাত্রীদের মধ্যে হ্যান্ডবল খেলায় আগ্রহ তুলনায় বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের ক্যাম্পাসে হ্যান্ডবল এতটাই জনপ্রিয় কয়েকজন পড়ুয়ার আলাদা নাম রয়েছে। কারও নাম হ্যান্ডবলের মেসি, কেউ আবার হ্যান্ডবলের রোনাল্ডো।’’ বাড়ঘাসিপুর স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক মানিকলাল দাসও জানান, তাঁদের স্কুলে নিয়মিত হ্যান্ডবলের অনুশীলন হয়। রাজ্য হ্যান্ডবল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় আরিয়া বলেন, ‘‘পূর্ব মেদিনীপুরের হ্যান্ডবল খেলায় উন্নতিতে এই জেলার স্কুলগুলির বড় ভূমিকা নিয়েছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হ্যান্ডবল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুজয় দাস জানান, ২০০৮ সাল থেকে মূলত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের বেছে নিয়ে হ্যান্ডবলের অনুশীলন শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে কিছু স্কুলেও হ্যান্ডবলের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের অন্যান্য জেলার তুলনায় পূর্ব মেদিনীপুরে হ্যান্ডবলের জনপ্রিয়তা কিছুটা হলেও বেশি। নতুন করে অনেক ছেলে-মেয়ে এই খেলায় আগ্রহ দেখাচ্ছে।’’

২০১৬ সালে রাজ্য জুনিয়র হ্যান্ডবলে চ্যাম্পিয়ন হয় পূর্ব মেদিনীপুর। সাফল্য আসে ২০১৭ সালেও। সে বার রাজ্য সাব-জুনিয়র হ্যান্ডবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল এই জেলা। হলদিয়ার পীতাম্বরচকের যমজ বোন শর্বাণী ও শ্রাবণী মাইতি বর্তমান বাংলা জুনিয়র দলে রয়েছে। সম্প্রতি হিমাচলপ্রদেশের ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত জাতীয় মহিলা জুনিয়র হ্যান্ডবলে বাংলা দলে ছিলেন তারা। হলদিয়ার প্রবীর সিংহ, সাফিনা খাতুন, তন্ময় নায়েক-সহ কয়েকজন বিভিন্ন সময়ে বাংলা দলে সুযোগ পেয়েছেন। হলদিয়ারই বাসিন্দা সরস্বতী মণ্ডল বাংলা দলের প্রাক্তন খেলোয়াড়। তিনি এখন হ্যান্ডবল প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

পূর্ব মেদিনীপুরের ছেলে-মেয়েরা যেমন বাংলা হ্যান্ডবল দলে সুযোগ পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খেলতে যায়, তেমনই জেলাতেও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হয়। ইন্দ্রনীল নায়েক, তপন সিংহ, তাপস দত্ত-সহ জেলার কয়েকজন প্রশিক্ষক জানান, হ্যান্ডবল খেলে অনেকেই সেনাবাহিনী-সহ বিভিন্ন জায়গায় চাকরি পেয়েছেন। এই খেলায় পরিশ্রম অনেক বেশি হয়। তাই খেলোয়াড়দের নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। জেলায় আবাসিক শিবির হলে খেলোয়াড়দের টিফিন দেওয়া হয়। কিন্তু দৈনন্দিন অনুশীলনে টিফিন দেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। সমস্যার কথা মেনেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হ্যান্ডবল অ্যাসোসিয়েশন। এই সংস্থার কর্তাদের আক্ষেপ, এমন অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন যাঁদের নিজেদের জুতো ও জার্সি কেনার ক্ষমতা নেই। দু’বেলা পুষ্টিকর খাবার পাওয়া তো পরের কথা। হ্যান্ডবল খেলায় অনেক বল লাগে। সেগুলোও কিনতে হয়। আর্থিক সাহায্য চেয়ে হলদিয়া পুরসভার কাছে আবেদন করা হলেও সেই ভাবে সাড়া মেলেনি।

হলদিয়া পুরসভার পুর পারিষদ (ক্রীড়া) আজগর আলি বলেন, ‘‘হ্যান্ডবল নিয়ে আর্থিক সাহায্যের জন্য পুরসভার লিখিত ভাবে আবেদন করলে ভেবে দেখা হবে।’’

Handball Midnapore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy