Advertisement
E-Paper

আটত্রিশ বছর পরে লিগ জয়ের স্বপ্ন মহমেডানে

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৩২
জনজোয়ার: পিয়ারলেসকে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেতাব জেতার দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে মাঠে নেমে ফুটবলারদের সঙ্গে উৎসব মহমেডান সমর্থকদের। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

জনজোয়ার: পিয়ারলেসকে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেতাব জেতার দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে মাঠে নেমে ফুটবলারদের সঙ্গে উৎসব মহমেডান সমর্থকদের। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মহমেডান ২ • পিয়ারলেস ০

আবেগের বিস্ফোরণ!

রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ফেন্সিং টপকে মাঠের মধ্যে লাফিয়ে পড়লেন হাজারখানেক মহমেডান সমর্থক। জয়ের আনন্দে কাঁধে তুলে নিলেন ফুটবলারদের। আটত্রিশ বছর আগে শেষ বার মহমেডানের কলকাতা লিগ জয়ের সেই স্মরণীয় মুহূর্ত মনে পড়ে যাচ্ছিল সত্তরোর্ধ্ব সাজ্জাদ আলম, হানিফ শেখদের। গোলপোস্টের পিছনে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বলছিলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, এ বার অপেক্ষার অবসান হবে।’’

সোমবার বিকেলে ঘরের মাঠে পিয়ারলেসকে হারিয়ে ১০ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের শীর্ষে উঠে এল মহমেডান। কিন্তু খেতাবি দৌড়ে এখনও কিছুটা সুবিধেজনক জায়গায় আনসুমানা ক্রোমারা। এক ম্যাচ কম খেলে ১৭ পয়েন্ট তাঁদের। শেষ দু’টো ম্যাচ জিতলে ২৩ পয়েন্ট হবে পিয়ারলেসের। ন’ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে ইস্টবেঙ্গল। শেষ দু’ম্যাচ জিতলে তাদেরও ২৩ পয়েন্ট হবে। কিন্তু গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি পিয়ারলেসের। মহমেডানের শুধু ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচ বাকি। জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ২২। সে ক্ষেত্রে ক্রোমারা পয়েন্ট নষ্ট করলেই কলকাতা লিগের ট্রফি শোভা পাবে সাদা-কালো শিবিরে। মহমেডান কর্তাদের দাবি ছিল, ২৬ সেপ্টেম্বর ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচ পিছিয়ে দেওয়ার। সব দলের শেষ ম্যাচ এক দিন ও একই সময়ে করার। কিন্তু আইএফএ সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে।

লিগের জটিল অঙ্ককে দূরে সরিয়ে রেখে মহমেডানের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর দীপেন্দু বিশ্বাস পাখির চোখ এখন শুধু ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে।

বছর পনেরো আগে জহর দাসের কোচিংয়ে মোহনবাগানে খেলেছিলেন দীপেন্দু। এ দিন প্রাক্তন গুরুর চালে প্রথমার্ধে তাঁর রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল। পিয়ারলেস কোচের রণনীতি— এক) তীর্থঙ্কর সরকার বল ধরলেই পিয়ারলেসের অন্তত তিন জন ফুটবলার তাঁকে ঘিরে ধরেছিলেন। দুই) মহমেডান মিডফিল্ডারের বাঁ-পায়ের ফ্রি-কিক ভয়ঙ্কর। ফুটবলারদের জন্য পিয়ারলেস কোচের নির্দেশ ছিল, মহমেডান যেন পেনাল্টি বক্সের সামনে ফ্রি-কিক না পায়। তিন) মহমেডান মিডফিল্ডারকে গোল লক্ষ্য করে শট নেওয়ার সুযোগ না দেওয়া। ফলশ্রুতি, প্রথমার্ধে মাত্র একবারই গোল করার সুযোগ পেয়েছিল মহমেডান। কিন্তু ভানলাল ছাংতের দুর্বল শট আটকে দেন পিয়ারলেস গোলরক্ষক জেমস কিথান।

প্রথমার্ধ যদি গুরুর হয়, দ্বিতীয়ার্ধ শিষ্যের!

বিরতির পরে খেলা শুরু হওয়ার ঠিক আগে তীর্থঙ্করের কানে কানে কিছু বললেন দীপেন্দু। তার পরেই দেখা গেল সেন্ট্রাল মিডফিল্ড থেকে বাঁ-প্রান্তে চলে গেলেন মহমেডান মিডফিল্ডার। ডান প্রান্তে চলে এলেন ছাংতে। চক্রব্যূহ থেকে বেরিয়ে আক্রমণে ঝড় তুলতে শুরু করলেন তীর্থঙ্কর। তবুও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল পিয়ারলেস। কিন্তু ৫৪ মিনিটে পেনাল্টি নষ্ট করেন জিতেন মুর্মু। কার্ড সমস্যায় খেলতে না পারা আনসুমানা ক্রোমা হতাশায় গ্যালারির ফেন্সিংয়ে ঘুসি মারলেন। জোড়া ধাক্কা সামলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পিয়ারলেস। ৬০ মিনিটে গোল করে মহমেডানকে এগিয়ে দেন করিম। ন’মিনিট পরে ছাংতেকে দিয়ে গোল করান তীর্থঙ্কর।

ম্যাচের পরে উচ্ছ্বসিত দীপেন্দু বললেন, ‘‘তীর্থঙ্করকে খেলতে না দেওয়াই রণনীতি ছিল জহর স্যরের। তাই ওর জায়গা বদলে দিলাম। পিয়ারলেস কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোল তুলে নিলাম।’’ হতাশ পিয়ারলেস কোচ বললেন, ‘‘পেনাল্টি নষ্ট করার জন্যই হারলাম। তবে আমাদের এখনও দু’টো ম্যাচ বাকি। গোল পার্থক্যে অনেক এগিয়ে। চ্যাম্পিয়ন না হওয়ার কোনও কারণ নেই।’’

মহমেডান: প্রিয়ন্ত সিংহ, সফিউল রহমান, প্রসেনজিৎ পাল, করিম ওমোলাজা নুরিন, সুজিত সাধু, ফিরোজ আলি, তীর্থঙ্কর সরকার (কামরান ফারুকি), সত্যম শর্মা (মহম্মদ আমিরুল), ভানলাল ছাংতে, মুসা মুদ্দে ও জন চিডি।

পিয়ারলেস: জেমস কিথান, অভিনব বাগ, মনোতোষ চাকলাদার, কালোন কিয়াতাম্বা, ফুলচাঁদ হেমব্রম, প্রদীপ মোহনরাজ (অনিল কিস্কু), পঙ্কজ মৌলা, এডমন্ড পেপরা, দীপেন্দু দোয়ারি (লক্ষ্মী মাণ্ডি), জিতেন মুর্মু (নরহরি শ্রেষ্ঠা) ও অ্যান্টনি উল‌্‌ফ।

Football CFL 2019 Mohammedan SC Peerless
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy