কোচের রোষে বলজিৎ সাইনি।ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে পা দিয়ে নিজের ম্যান-ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে দাখিল করেছিলেন স্বঘোষিত শংসাপত্র। কিন্তু লাল-হলুদের ডাচ কোচের সেই শংসাপত্রের ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’। মঙ্গলবার বৃষ্টিস্নাত সন্ধেয় যুবভারতীতে এএফসি কাপে তাঁর দল মালয়েশিয়ান টিমের কাছে হারার পর এলকো সতৌরি সটান অন্তর্ঘাতের অভিযোগ আনলেন বলজিৎ সিংহ সাইনির বিরুদ্ধে! টিমে এমন এক সময়ে এলকো বিতর্ক ডেকে আনলেন যখন পরের মরসুমে ইস্টবেঙ্গল কোচের জুতোয় পা গলানোর জন্য কোনও এক ট্রেভর মর্গ্যান বসে রয়েছেন এই শহরেই।
এ দিন ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এলকো তাঁর পঞ্জাবি স্ট্রাইকারকে আচমকা কাঠগড়ায় চড়ালেন— ‘‘বলজিৎ সাইনি টিমে সাবোতাজ করছে। বারবার বলা সত্ত্বেও মাঝমাঠে ও কোনও ব্লকিং করছিল না। ফলে গোলটা খেলাম। ওর জন্যই হারতে হল।’’ ‘গুরুত্বহীন’ ম্যাচে এলকো এ দিন নামিয়েছিলেন তাঁর রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলারদের। তার পর সেই ম্যাচ হেরে ডাচ কোচ অন্তর্ঘাত দেখতে পাওয়ায় নিন্দার ঢল নেমেছে লাল-হলুদে। ঘরের ছেলে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল লিগে নতুন উদ্যমে ফিরে এসেছে। এখনই কোচের প্রকাশ্যে এ কথা না বললেই চলত না?’’
মোহনবাগানের ঘরের ছেলে হয়েও ইস্টবেঙ্গলকে কোচিং করানো সুব্রত ভট্টাচার্য স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে প্রশ্ন তুললেন এলকোর কোচিং যোগ্যতা নিয়েই। ‘‘বলজিতের চেহারা কিংবা খেলার স্টাইল কোনওটাই ব্লকিং করার উপযুক্ত নয়। তার পরেও সেই দায়িত্বটা ওকেই কোচ দেয় কী কোন যুক্তিতে? আর যদি বলজিতের দিক থেকে কিছু গড়বড় হয়েই থাকে তা হলেও কোচ তা নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে গেল কেন? এ সব তো ড্রেসিংরুমে মিটিয়ে ফেলার জিনিস। আসলে এই সব বিদেশি কোচেরা গুরুর মানসিকতা দেশে ফেলে রেখে এখানে কোচিং করাতে আসে।’’
এলকোর বেফাঁস মন্তব্যে ক্ষুব্ধ তাঁর ক্লাবকর্তারাও। ফুটবলসচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘মিডিয়ার কাছ থেকে ব্যাপারটা শুনলাম। যদি কোচ এ রকম বলে থাকেন তা হলে ঠিক কাজ করেননি।’’ সহ-সচিব শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তর কথায়, ‘‘প্রকাশ্যে গুরু তাঁর ছাত্রকে এ রকম ভাবে ভিলেন বানিয়ে দিচ্ছেন এটা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সংস্কৃতি নয়।’’
ঠিক কী হয়েছিল এ দিন ইস্টবেঙ্গলের এএফসি কাপ গ্রুপের শেষ হোম ম্যাচে? খেলার শুরুতেই জোহর দারুলের মহম্মদ আমরির গোলে পিছিয়ে পড়ে এলকোর দল। দলে আর্জেন্তিনার লুসিয়ানো (অলিম্পিকে সোনার পদকজয়ী) থাকলেও গোল পাননি। বরং বল রাজু গায়কোয়াড়ের পায়ে লেগে গোলে ঢোকায় শ্রীলঙ্কার রেফারি আত্মঘাতী গোল দেন। সুবোধকুমারের মিস পাস আর দীপক মণ্ডল নিজের পজিশনে না থাকাতেই এই গোল।
কিন্তু মিনিট কুড়ি-বাইশ মিনিট পর দেখা গেল ইস্টবেঙ্গল কোচ তাঁর স্ট্রাইকার বলজিৎকে তুলে নামাচ্ছেন অধিনায়ক খাবরাকে। তখন বদলটার মধ্যে তেমন অস্বাভাবিকত্ব না থাকলেও কিছু পরে সাংবাদিকদের সামনে এলকো একেবারে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তোলেন বলজিতের বিরুদ্ধে। ‘‘এই নিয়ে চারবার হল। গতকালও ওকে বুঝিয়েছি। কিম্তু আমার কথা শুনছেই না।’’
ইস্টবেঙ্গল কোচকে এ বার প্রশ্ন করা হল, বলজিৎ কি ইচ্ছাকৃত ব্লকিং করছেন না? যদি তা না হয়, তা হলে অন্তর্ঘাত বলা হচ্ছে কেন? এ বার এলকো ঢোক গিলে বললেন, ‘‘হয়তো কড়া শব্দ ব্যবহার করেছি। আসলে বলজিৎ টিমের জন্য একশো শতাংশ দিচ্ছে না।’’ যাঁকে নিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সেই বলজিৎ গাড়িতে ওঠার আগে বলে গেলেন, ‘‘কোচের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। তবে আমাকে আজ ব্লকিং করতে বলা হয়নি। আমি সেকেন্ড স্ট্রাইকার খেলছিলাম।’’ টিম সূত্রে খবর, এর আগে শিলংয়ে রয়্যাল ওয়াহিংডো ম্যাচে র্যান্টির সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন বলজিৎ। মাঠে এবং ড্রেসিংরুমেও। তার পর থেকেই নাকি পঞ্জাবি ফুটবলারের ওপর রুষ্ট ডাচ কোচ। এ দিনও প্রবল বৃষ্টিতে খেলা পঞ্চাশ মিনিট বন্ধ থাকার সময় ড্রেসিংরুমে এলকো নাকি বলজিৎকে বলেন, ‘‘তোমার জন্যই হারছি। নতুন ক্লাব খুঁজে নাও। এটা তোমার ক্লাব নয়।’’ কোচের এই মন্তব্যে বেজায় ক্ষুব্ধ লাল-হলুদের পঞ্জাবি ব্রিগেডও।
ইস্টবেঙ্গল: লুই ব্যারেটো, দীপক, রাজু, গুরবিন্দর, ধনরাজন (তুলুঙ্গা), সুবোধ (র্যান্টি), জোয়াকিম, সুখবিন্দর, রফিক, বলজিৎ (খাবরা), বলদীপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy