কন্যা অব্রি’র বয়স মাত্র আট মাস। তাকে না দেখে এক মাস কাটল কী ভাবে? কন্যা সন্তানকে আদর করতে তাই কলকাতা থেকে ছুটে এসেছিলেন সাকিব। মাতৃ দিবসে অব্রি’র সঙ্গে শিশির এবং নিজের ছবিও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন সাকিব আল হাসান। তবে ঢাকায় দু’দিন অবস্থানের একমাত্র কারণ কিন্তু এটাই নয়। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঢাকায় ঘুরে যাওয়ার আরও কারণ রয়েছে। এই বাঁ হাতি যখনই অফ ফর্মে পড়েছেন, তখনই শরনাপন্ন হয়েছেন ক্রিকেট গুরু সালাউদ্দিনের, কখনও বা ফোনে কথা বলে পান সমস্যা মিটিয়েছেন, কখনও বা হাতে-কলমে নিজের ভুল ধরতে ছুটে যাচ্ছেন এই কোচের কাছে। সেই ২০০৩ সাল থেকে বিকেএসপিতে যাঁর ঘষামাজায় ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবের স্বপ্ন দেখা শুরু, এতটা পথ পেরিয়ে আজ এ অবস্থানেসাকিবের ভাল-মন্দ তার চেয়ে কে আর ভাল বুঝবে? ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত গুরু-শিষ্য কাছাকাছি ছিলেন, বিকেএসপিই বলুন, কিংবা ক্লাব ক্রিকেটে, অথবা জাতীয় দলে— সব সময় একসঙ্গে। ২০১০ সালে সালাউদ্দিন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নিজের ভুল সংশোধনে বার বার এ পথেই হাটতে হয়েছে সাকিবকে। আইপিএলে নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না, বোলিংটা মোটামুটি ঠিক থাকলেও নিজের ব্যাটিং-ই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাকিবের। হবে না-ই কেন, প্রিয় পজিশন তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ের সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেননি, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে এমন মহাসুযোগ হেলায় হাতছাড়া করেছেন, ফিরেছেন মাত্র ৬ রানে। চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ১১ পুণে, সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে ৩ রান করেছেন। আইপিএলে নিজেকে যেন চেনাতেই পারছিলেন না। প্রথম ৯ ম্যাচের ৪টিতেই একাদশের বাইরে, এটাও কম অসহনীয় করে তোলেনি সাকিবকে।
আরও পড়ুন
কেকেআর হারলেও রবিবাসরীয় ইডেনে ঝড় তুলল সাকিবের ব্যাট
দলের হেড কোচ জাক কালিস, সহকারী কোচ সাইমন ক্যাটিচের দাওয়াই কাজে আসছে না। মেন্টর ওয়াসিম আক্রামের কথাতেও সে রকম কাজ হচ্ছিল না। উপায়ন্তর না দেখে সেই ছোটবেলার কোচের শরণাপন্ন হয়েছেন সাকিব। দুঃসময়ে গুরুর দাওয়াই কাজে এসেছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার, এই দু’দিন বর্তমানে ঢাকার প্রিমিয়ার ডিভিশনের দল গাজি গ্রুপ ক্রিকেটার্সের কোচ সময় দিয়েছেন সাকিবকে। দু’দিন বোলিং মেশিনে এক ঘণ্টা করে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। সাকিবের সমস্যাটা ধরে সেখানেই দাওয়াই দিয়েছেন সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, “ওঁর সেরা শটস স্কোয়ার কাট। কিন্তু আইপিএলের ম্যাচগুলোতে সেই শট নিতে দেখিনি সাকিবকে। ফুটওয়ার্কে কোথায় যেন সমস্যা হচ্ছে, কেন যেন মনে হচ্ছে পা-টা ঠিক মতো যাচ্ছে না। আগে দেখতাম, বল ছাড়ার আগে পা মুভ করত, এখন দেখছি উল্টোটা, বল ছাড়ার পর পা মুভ করছে। এখানে আগের অবস্থায় ফিরে আসা যায় কী ভাবে, তা নিয়েই এই দু’দিন কাজ করেছি। ও যেহেতু সব কিছু দ্রুত শিখতে পারে, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস আছে, তা ছাড়া নিজের ভুল ধরতে যখন কলকাতা থেকে ছুটে এসেছে, তখন আমি ওঁর ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছি।”
সালাউদ্দিনের এই দাওয়াই ভালই কাজে লেগেছে। কলকাতা ফিরে রবিবার রাতে ব্যাটিং ছন্দে ফিরেছেন এই বাঁ-হাতি। ৪৯ বলে ৪ চার ৪ ছক্কায় ৬৬ নট আউট। আইপিএলে সাকিবের কেরিয়ার সেরা ব্যাটিং এটাই। ১১, ৩, ৬’র পর ৬৬ রান! অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম জুটিতে ইউসুফ পাঠানের সঙ্গে ১৩৪ রানে আইপিএল রেকর্ড! ইডেন গার্ডেনসে রবিবার রাতে একটু বেশিই চাবুক চালিয়েছেন ডোয়েন ব্রাভোর গায়ে। চার ছক্কার চারটিই মেরেছেন সাকিব গুজরাত লায়ন্সের এই পেস বোলারকে। যার মধ্যে ছিল উপর্যুপরি ২টি ছক্কা। এই ছক্কার প্র্যাকটিসও নাকি করেছিলেন তিনি সালাউদ্দিনের ক্লাসে। সে তথ্য দিয়েছেন সালাউদ্দিন নিজে। “বোলিং মেশিন থেকে বের হওয়া বলগুলোতে ছক্কার প্র্যাকটিসটা কাজে লেগেছে। ও কলকাতা যাওয়ার আগে বলেছে, স্যার আশা করি এই প্র্যাকটিসটা কাজে দেবে। আসল ম্যাচে দেখলাম, ও প্রিয় শটগুলোই মেরেছে।” বলেন সালাউদ্দিন।
প্রিয় শিষ্যের দুঃসময় কাটানোর উপায় বাতলে দিতে পেরে নিজের কাছে হালকা লাগছে সালাউদ্দিনের। তিনি বলেন, “জানতাম ও ছন্দে ফিরবে। তাই নিজের কাছে ভাল লাগছে। গুজরাত লায়ন্সের বিপক্ষে ইনিংসের শুরুতে একটু জড়তা ছিল সাকিবের। লেগস্পিনার প্রবীণ তাম্বেকে সাকিব যখন স্কোয়ার কাটে বাউন্ডারি মারল, তখন ধরে নিয়েছি, রাতটি ওঁরই হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy