Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Sourav Ganguly

Sourav Ganguly and Virat Kohli: বোর্ডকর্তারা যদি নির্বাচনে থাকেন, কবে সংস্কার হবে

দেশের বোর্ড প্রেসিডেন্ট আর তার তারকা ব্যাটার একে অন্যকে মিথ্যেবাদী প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, এটা মোটেও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নয়। 

বিতর্ক: সৌরভ ও কোহলিকে নিয়ে চর্চা চলছেই।

বিতর্ক: সৌরভ ও কোহলিকে নিয়ে চর্চা চলছেই। ফাইল চিত্র

রাজু মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:০১
Share: Save:

ভারতীয় ক্রিকেটে সব সময়ই রাজনৈতিক প্রভাব দেখা গিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বোর্ডের প্রশাসকেরা শাসক দলের নির্দেশ মেনে চলেছে। এখনও তার ব্যতিক্রম নেই। শুধু শক্তির কেন্দ্র উত্তর ভারত থেকে সরে গিয়েছে পশ্চিমে। পর্দার আড়াল থেকে ক্ষমতাশালীদের অঙ্গুলিহেলনে আজও কাঠপুতুলের মতো মাথা নেড়ে চলেছে কিছু লোক।

১৯৩২ সালে ভারত যখন প্রথম টেস্ট খেলল, তখনও লক্ষ্যটা ছিল কী ভাবে দেশের রাজপরিবার আর ব্রিটিশ রাজকে খুশি করা যায়। অধিনায়ক বাছা হচ্ছে কিন্তু সেই অধিনায়ক যথেষ্ট যোগ্য কি না, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা ছিল না। আমাদের দেশের প্রথম জাতীয় ক্রিকেট নির্বাচক— এইচ ডি কাঙ্গা, আলেক হোসি এবং আহসান-উল-হক। তিন জনের মিলিত বুদ্ধি-বিবেচনায় মনে হয়েছিল, রাজ পরিবারের প্রতিনিধিই যোগ্যতম ব্যক্তি হবেন দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য।

ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে অধিনায়ক এবং নির্বাচকদের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের প্রচুর উদাহরণ রয়েছে। বোর্ডের উচ্চ পদাধিকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। ১৯৫৮-’৫৯ মরসুমে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চার টেস্টে পাঁচ জন ভারত অধিনায়ক থাকার মতো হাস্যকর ঘটনাও ঘটেছে। লালা অমরনাথ, এল পি জয়, সি রামস্বামীর মতো প্রাক্তন ক্রিকেটার সেই নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সিরিজ়ের অধিনায়কেরা ছিলেন পলি উমরিগড়, গুলাম আহমেদ, বিনু মাঁকড়, হেমু অধিকারী। কোনও ক্রিকেটার জানত না, পরের দিন কী হতে চলেছে। এমনই অবস্থা ছিল ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের। নেপথ্যে সক্রিয় ছিলেন ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা। তাঁরাই সব কলকাঠি নাড়ছিলেন।

সামান্য কয়েকটি জায়গা ছাড়া গত নব্বই বছরে বোর্ডের প্রশাসনিক চিন্তাভাবনায় খুব পরিবর্তন কিছু দেখতে পাচ্ছি না। যখন সৌরভ বোর্ড প্রেসিডেন্ট হল, সকলে খুব খুশি হয়েছিল। এত দিনে এক জন সফল টেস্ট খেলোয়াড় বোর্ড প্রধান হল! অক্রিকেটীয় লোকেদের বছরের পর বছর বোর্ডের ক্ষমতায় দেখার পরে সৌরভের আগমন অনেক প্রত্যাশা তৈরি করেছিল। শুধু ক্রিকেটারেরাই নয়, সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরাও উচ্ছ্বসিত ছিল। সকলে ভেবেছিল, বোর্ড আইপিএলের চাকচিক্য আর মাঠের বাইরের বিতর্কের উর্ধ্বে গিয়ে ভাববে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, ক্রিকেটপ্রেমীরা তা ঘটতে দেখছে না। আইপিএল সংগঠন বাদ দিলে ঘরোয়া ক্রিকেট গত দু’বছর অবহেলিত। জুনিয়র ক্রিকেটে বলার মতো কিছু নেই। গত দশ বছরে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের জন্য বরাদ্দ আর্থিক অনুদান বাড়ানো হয়নি। ২০১৩ থেকে প্রাপ্য এককালীন অনুদানও বাকি পড়ে রয়েছে।

সৌরভ যে দারুণ গুণসম্পন্ন, খুব উজ্জ্বল এক ব্যক্তিত্ব, সন্দেহ নেই। খুব অল্প বয়স থেকে সাফল্যের রাস্তায় হাঁটতে পারা নিশ্চয়ই দারুণ প্রতিভার নিদর্শন। পরবর্তীকালে জাতীয় নায়ক হয়ে উঠেছে। সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ ওকে শক্তিশালীও করে তুলেছে। আশা করব, সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আরও শক্ত হাতে বোর্ডকে পরিচালনা করে ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। শুধু আইপিএল আর মাঠের বাইরের বিতর্কে অংশ নিয়েই থেমে থাকবে না। সারা জীবন অনেক বিতর্ক সঙ্গী হয়েছে সৌরভের। আশা করব, বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে অন্তত বিতর্ক এড়িয়ে চলার রাস্তাটা খুঁজে নেবে বুদ্ধিমান সৌরভ। দেশের বোর্ড প্রেসিডেন্ট আর তার তারকা ব্যাটার একে অন্যকে মিথ্যেবাদী প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, এটা মোটেও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নয়।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের উপর দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক ঝড় বয়ে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে লোঢা কমিটির সুপারিশ তৈরি হয়েছে। সেই সংস্কারকে সম্মান দেখানোর দায়িত্বও রয়েছে সৌরভের মতো শিক্ষিত, গুণী ক্রিকেটারের। নতুন সংবিধান অনুযায়ী, বোর্ড প্রশাসকদের সম্পূর্ণ ভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে থাকতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশ মেনে চলার দায়িত্ব রয়েছে বর্তমান বোর্ড পরিচালকদের। আদালত নির্দেশিত সংস্কার অনুযায়ী, অতীতের বোর্ড প্রশাসকদের মতো অধিনায়ক বা দল নির্বাচনে বোর্ডের পদাধিকারীদের অংশগ্রহণ করার জায়গা আর নেই। কোহলিকে সরানো হবে কি না, রোহিতকে ওয়ান ডে অধিনায়ক বাছা হবে কি না, স্কোয়াডে কারা থাকবে, এ সব সম্পূর্ণ ভাবে নির্বাচকদের উপরেই ছাড়া উচিত। না হলে সংস্কার হল কোথায়? বৈঠকের ভিডিয়োও নিশ্চয়ই পরিষ্কার করে দেবে, কারা কারা উপস্থিত ছিল আর লোঢা সুপারিশ অনুযায়ী ক’জনের উপস্থিতি বৈধ।

আর একটা কথা। কোহলিই প্রথম অধিনায়ক নয় যে বোর্ড প্রধানের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল। ‘সানি ডে’জ়’ বইতে সুনীল গাওস্কর একই অভিযোগ করেছিল প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পিএম রুংতার বিরুদ্ধে। তা সানির সম্মান যেমন বাড়ায়নি, তেমনই ভারতীয় ক্রিকেটেরও কোনও উপকার করেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sourav Ganguly BCCI Virat Kohli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE