Advertisement
E-Paper

অশান্তির মূলে সেই সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ

কারও কারও মতে, এই বিয়েটা হয়ই না। জোর করে দেওয়া হয়েছিল। কোনও দিনই অনিল কুম্বলে এবং বিরাট কোহালি দারুণ সম্পর্ক ছিল না।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ০৬:১৯
বিচ্ছেদ: কুম্বলে-কোহালি মহাতারকা জুটি এখন ইতিহাস। ফাইল চিত্র

বিচ্ছেদ: কুম্বলে-কোহালি মহাতারকা জুটি এখন ইতিহাস। ফাইল চিত্র

কোচ অনিল কুম্বলে বনাম অধিনায়ক বিরাট কোহালি কাজিয়া নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। দুই সুপারস্টারের সংঘাতের উৎস কোথায়? কেনই বা এক বছরের মধ্যে সরে যেতে হল কোচকে? ওভালের ড্রেসিংরুমে হারের পর কী ঘটেছিল? তুলে ধরা হল সেই থ্রিলার।

পুরনো প্রেক্ষাপট ছিল বিপক্ষে: কারও কারও মতে, এই বিয়েটা হয়ই না। জোর করে দেওয়া হয়েছিল। কোনও দিনই অনিল কুম্বলে এবং বিরাট কোহালি দারুণ সম্পর্ক ছিল না। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে এক সময় মেন্টর ছিলেন কুম্বলে। সেই সময় কোহালি ছিলেন আরসিবি-র সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটার। একই সঙ্গে কোহালির মাঠের বাইরের উদ্দাম জীবন তখন নিয়মিত ভাবে শিরোনামে আসছে। অনুশাসন-প্রিয় কুম্বলের সেই সময়কার কোহালিকে খুব ভাল লাগত বলে শোনা যায়নি। কোহালির জীবনে আবার সেই সময়টাই ছিল খুব কঠিন একটা অধ্যায়। সচিন, সৌরভদের ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটি দু’জনের সম্পর্ক ভেঙে পড়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানতে পারে যে, আরসিবি-র দিন থেকেই সম্পর্ক ভাল ছিল না। পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে, কুম্বলেকে কোচ করার সময় তা হলে কোহালির সঙ্গে সম্পর্কের দিকটা দেখা হল না কেন?

কোচ-অধিনায়ক ঠোকাঠুকি শুরু: কারও কারও দেওয়া তথ্য, দেশের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজে প্রথম মতান্তর দেখা দেয়। এর পর দেশের মাঠে ইংল্যান্ড খেলতে আসে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই সিরিজেই কোহালির ক্যাপ্টেন্সির সঙ্গে বার বার ভিন্ন মত পেশ করতে শুরু করেন কুম্বলে। জানা গিয়েছে, কোহালির বোলার পরিবর্তন নিয়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে উষ্মা প্রকাশ করেন কুম্বলে। সেটা নিয়ে কোহালি খুব প্রসন্ন হয়েছিলেন, বলা যাচ্ছে না।

পুণের ঘূর্ণি পিচ ব্যুমেরাং: স্টিভ স্মিথদের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট ছিল পুণেতে। সেখানে ঘূর্ণি বানানোর সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে ফেরে। অস্ট্রেলিয়া বিরাট ব্যবধানে জিতে সিরিজে ১-০ এগিয়ে যায়। কিন্তু এই ম্যাচেই পিচের মতো ব়ড় ফাটল দেখা দিল ভারতীয় ড্রেসিংরুমেও। কোচ প্রেস কনফারেন্সে গিয়ে বিবৃতি দিলেন, তিনি পিচ বিকৃত করেন না। প্রশ্ন উঠে গেল, তা হলে এমন ঘূর্ণি কে অর্ডার দিল? অধিনায়ক? কোচ যদি ‘না’ বলে থাকেন, তা হলে তো ইঙ্গিত তাঁর দিকেই যায়। ওদিকে, দল জানে এটা মিলিত সিদ্ধান্ত ছিল। জানাজানি হয়ে গেল, মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের একাধিক বার ফোন করে ঘূর্ণি পিচ বানানোর কথা বলেছিলেন কুম্বলেই। দলের মধ্যে বলাবলি শুরু হয়ে যায়, কোচ দু’রকম কথা বলছেন না তো? রবি শাস্ত্রী ডিরেক্টর থাকার সময় সাংবাদিকদের সামনে এসে খোলাখুলি স্বীকার করতেন, নিজেদের দেশে অ্যাডভ্যান্টেজ নেওয়ার জন্য স্পিনিং পিচ বানাচ্ছি। বেশ করছি। বাইরে গেলে ওদের সুবিধে অনুযায়ী উইকেট বানায়। শাস্ত্রীর মতো কুম্বলে জনসমক্ষে অতটা দায় নিতে রাজি হননি। তাতে দলের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়েনি কোচের।

কুম্বলে বিদায়ের পরে অব্যাহত কোচ নিয়ে নাটক

• নতুন করে ভারতীয় দলের কোচের জন্য আবেদন চাওয়া হবে, জানাল বোর্ড। এখন যেহেতু অনিল কুম্বলে আর কোচের দৌড়ে নেই, তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।

• গত ছ’মাসে ভারতীয় দলের ম্যানেজারদের রিপোর্ট চাইলেন পর্যবেক্ষেকদের প্রধান বিনোদ রাই। ঘরোয়া সিরিজেও কোহালি-কুম্বলে বিবাদ কিনা, খতিয়ে দেখতে।

• কোহালিদের নতুন কোচ নেওয়া হবে শ্রীলঙ্কা সফরের আগেই, জানিয়ে দিলেন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সি কে খন্না। নতুন কোচ থাকবেন বিশ্বকাপ পর্যন্ত।

• কোচ কুম্বলেকে ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজে পৌঁছে গেল ভারতীয় দল। দায়িত্বে বোর্ড কর্তা এম ভি শ্রীধর। ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বঙ্গার ও ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধরও গেলেন।

দুই প্রজন্মের দুই তারকা: ভারতের জার্সি গায়ে খেলতে নামলে দু’জনেই জেতা ছাড়া কিছু ভাবেন না। দু’জনেই হার-না-মানা ক্রিকেটার। কিন্তু মিলের চেয়েও অমিল অনেক বেশি কোহালি এবং কুম্বলের মধ্যে। দু’জনে দুই প্রজন্মের। চরিত্রগত ভাবেও আলাদা। কুম্বলে নিজস্ব বৃত্তের মধ্যে থাকতে পছন্দ করেন। ক্রিকেট খেলার দিনেও দক্ষিণী সতীর্থদের সঙ্গেই তিনি বেশি ঘোরাফেরা করতেন। কোহালি মনের ভাব প্রকাশ করতে পছন্দ করেন। ছোটখাটো বৃত্তে আটকে না থেকে বহির্জগতের ঘ্রাণ নিতে পছন্দ করেন। মাঠের বাইরের এই সব অমিলের সঙ্গে যুক্ত হল মাঠের মধ্যেকার বিষয় নিয়ে মতান্তর। প্রভাবশালী এক বোর্ড কর্তার কথায়, ‘‘দু’জনে কোনও ব্যাপারেই যেন একমত হতে পারে না। কোচ যা বলে, অধিনায়ক তার উল্টোটা চায়। কোচ যা প্রথম একাদশ চায়, অধিনায়ক তার সঙ্গে একমত হয় না। এ ভাবে কী করে চলতে দেওয়া যায়?’’

সীমারেখা লঙ্ঘনের অভিযোগ: কোহালি বোর্ড এবং ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটির কাছে অভিযোগ করেছেন, কোচ বারবার তাঁর স্বাধীনতার জায়গায় হস্তক্ষেপ করছেন। তাঁর জায়গা বলতে কোহালি বোঝাতে চেয়েছেন ক্যাপ্টেন হিসেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া। প্রথম একাদশ বাছা নিয়ে মতান্তর তো লেগে ছিলই। এমনকী, বোলার পরিবর্তন বা ব্যাটিং অর্ডারে বদল আনার ব্যাপারেও নাকি পরামর্শের চেয়ে বেশি করে ‘অর্ডার’ দিতেন কুম্বলে। এ সব কথা সৌরভ-সচিনদের কমিটির কাছেও খুলে বলেছেন কোহালি। যদিও কুম্বলে নিজে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ওভালে ফাইনাল হারার পরের দিনই কোচ এবং অধিনায়ককে নিয়ে বৈঠক করেছিল সচিন-সৌরভদের অ্যাডভাইসরি কমিটি। সেখানে কিংবদন্তিদের সামনেই সরাসরি কুম্বলেকে নিয়ে তাঁর আপত্তি এবং ক্ষোভ উগরে দেন কোহালি। তখনই পরিষ্কার হয়ে যায়, এই সম্পর্ক আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। সৌরভদের পক্ষ থেকে জোরদার চেষ্টা হয়েছিল, দু’জনকে এক সঙ্গে বসিয়ে যদি ব্যবধান এবং সংঘাত মিটিয়ে ফেলা যায়। অনড় কোহালি মানতে চাননি। এর পরেই কুম্বলে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।

কী ঘটেছিল ওভালের ড্রেসিংরুমে: পাকিস্তানের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে কুৎসিত হারের পরে ড্রেসিংরুমে বক্তব্য রাখেন কুম্বলে। ভবিষ্যতের জন্য উৎসাহ দিলেও হার নিয়ে তীব্র কিছু মন্তব্য করেন তিনি। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, জশপ্রীত বুমরার ‘নো বল’ নিয়ে সব চেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন কোচ। অধিনায়ক বক্তব্য রাখতে গিয়ে ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ান। হারের ব্যাখ্যা নিয়েও দু’জনে ছিলেন দুই মেরুতে। এর পর বিকর্ষণ ঘটে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ছিল সময়ের অপেক্ষা!

Anil Kumble Virat Kohli Controversy Indian Coach বিরাট কোহালি অনিল কুম্বলে Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy